করিনার 'কমফোর্ট ফুড' খিচুড়ি, সকলেই কি রোজ খেতে পারেন? ছবি: সংগৃহীত।
মেঘলা আকাশ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়লেই যে খাবারটির জন্য মন উতলা হয়, তা হল খিচুড়ি। বাঙালি হেঁশেলে খিচুড়ি মানে কেবল ডাল দিয়ে রাঁধা চাল নয়, তার অনুষঙ্গেই এসে পড়ে লাবড়া, বেগুনি বা ভাজাভুজি। সেই খিচুড়ি ট্যালটেলে নরম হবে, না কি ভোগের খিচুড়ির মতো আঁটসাঁট, সে নিয়ে নানা মুনির নানা মত। বাসি খিচুড়ি স্বাদে বাড়ে, এই মতও আছে। বাঙালির পুজোপার্বণেও এক থালা খিচুড়ি ছাড়া ঠিক জমে না। সেই খিচুড়িই কিন্তু এখন স্বাদে ও গন্ধে ভিন্নতা এনে তারকাদের হেঁশেলেও আলোড়ন তুলেছে। করিনা কপূর খান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, খিচুড়িতেই মন মজেছে তাঁর। সপ্তাহে পাঁচ দিন খিচুড়ি ছাড়া চলেই না। সবচেয়ে আরামের খাবার যদি কিছু হয়, তা হলে একমাত্র খিচুড়ি।
বাঙালির গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি না হলেও, ওট্স, ডালিয়া, কিনোয়া, সাবুদানা বা বাজরার খিচুড়িকে এখন ‘কমফোর্ট ফুড’ বলছেন অধিকাংশ তারকাই। গাওয়া ঘিয়ের বদলে কোথাও তাতে পড়ছে অলিভ, আবার কোথাও গুচ্ছের শাকসব্জি। নিরামিষের পাশাপাশি মাংসের খিচুড়িরই এখন চাহিদা বেশ বেশি। কেউ আর আলাদা আলাদা পদ রাঁধার দিকে যাচ্ছেন না। চাল-ডাল-মাংস মিশিয়ে দিলেই হল। করিনার হেঁশেলেও অনেকটা তেমনই হয়। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁর রাঁধুনিও রোজ একই প্রণালীতে খিচুড়ি রেঁধে চলেছেন। দিনভর শ্যুটিং-এর পরে বাড়ি ফিরে অল্প ঘি ছড়িয়ে রাঁধা খিচুড়ির স্বাদ তাঁর কাছে অমৃতের মতোই লাগে। এখন কথা হল, করিনা য়ে রোজ খিচুড়ি খাচ্ছেন, সেই অভ্যাস কি স্বাস্থ্যকর? এই বিষয়ে নানা মত আছে।
খিচুড়ির গুণ অনেক
চালের কার্বোহাইড্রেট ও ডালের প্রোটিন সবটাই শরীরে ঢোকে। এক থালা খিচুড়ি মানেই তার থেকে পাওয়া যাবে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। সব্জি মেশালে নানা রকম ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।
খিচুড়িতে তেলের প্রয়োগ কম, তাই পেট ভাল রাখে অবশ্যই। শরীর খারাপ হলে বাড়ির বড়রা তো পাতলা খিচুড়িই খাওয়ান। অনেকেই গ্লুটেন খেতে চান না। সে ক্ষেত্রে খিচুড়ি ভাল বিকল্প। চাল আর ডালের মিশেলে তৈরি খিচুড়ি শরীরে পুষ্টি জোগায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থাকলে সে ক্ষেত্রেও খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। এই খাবার তাড়াতাড়ি হজমও হয়।
রোজ খাওয়া কি ঠিক?
খিচুড়ি রোজ খেলে তার সঙ্গে আরও নানা জিনিসও খেতে হবে, এমনটাই মত পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর। তিনি জানান, চালের সঙ্গে কতটা ডাল মেশাচ্ছেন, সেটা খেয়াল রাখা জরুরি। রোজ খুব বেশি পরিমাণে ডাল খেলে প্রোটিনের আধিক্য হবে। যাঁদের প্রোটিন কম খেতে বলা হয়, তাঁদের মেপেই খেতে হবে।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ, খিচুড়িতে যদি সব্জি মিশিয়ে খাওয়া যায় তা হলে ভাল। না হলে কেবল কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনই ঢুকবে শরীরে। ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি হতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে সব্জি দিয়ে তরকারি, পনির বা দই খেলে ভাল।
ডায়াবিটিস থাকলে রোজ রাতে চালের খিচুড়ি না খাওয়াই ভাল। সে ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এর চেয়ে রাগি, কিনোয়া ও ওট্সের খিচুড়ি খেলে উপকার বেশি হবে।