ধর্ষণ, নারীপাচার, নারীদের আটকে রেখে অত্যাচার করার অভিযোগে মতো টেটকে গ্রেফতার করেছে রোমানিয়া প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত
ক্রীড়াবিদ থেকে স্বঘোষিত নারীবিদ্বেষী। চালাতেন যৌনাচারের ভিডিয়োর ওয়েবসাইটও। তা থেকেই আটশো কোটি টাকার মালিক হন রোমানিয়ার যুবক অ্যান্ড্রু টেট। নিজের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি ও ভিডিয়োও প্রকাশ করতেন নিয়মিত, নিজের পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শ প্রচারও করতেন তিনি। এ হেন ব্যক্তিত্বই এখন কারাগারের পিছনে। ধর্ষণ, নারীপাচার থেকে নারীদের আটকে রেখে অত্যাচার করার অভিযোগে মতো টেটকে গ্রেফতার করেছে রোমানিয়া প্রশাসন।
প্রভাবী হওয়ার আগে পেশাদার ‘কিকবক্সিং’ করতেন অ্যান্ড্রু। ২০০৫ সালে ‘কিং কোবরা’ নামে ওই খেলায় বেশ নাম করেন তিনি। জেতেন বিশ্ব খেতাবও। পড়ে এমএমএ-তেও নামের তিনি। কিন্তু ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত রিংয়ের বাইরে তাঁর পরিচিতি বিশেষ ছিল না। ব্রিটেনেও ‘বিগ বস’-এর মতো একটি রিয়ালিটি শো হয়। সেই শো-তে অংশ নেন টেট। কিন্তু সেখানে সমকাম বিরোধী ও বর্ণবৈষম্যমূলক কথা বলার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এক মহিলাকে বেল্ট দিয়ে আঘাত করার ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে। তার পরই অনুষ্ঠান থেকে ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে।
এর পরই নিজেকে পুরুষতান্ত্রিকতার গুরু হিসাবে সমাজমাধ্যমে প্রচার করা শুরু করেন টেট। সমাজমাধ্যমে নারীবিদ্বেষী ভিডিয়ো প্রচার করতে শুরু করেন তিনি। নিজেকে প্রকাশ্যেই নারীবিদ্বেষী বলেও ঘোষণা করেন তিনি। নিজের ধনসম্পদের প্রচার করতেও শুরু করেন তিনি। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তাঁর ৪৭ লক্ষেরও বেশি অনুরাগী তৈরি হয়। সেখানেই কী ভাবে ‘দাদাগিরি’ করতে হবে তা শেখাতেন তিনি। এমনকি, নিজের সাইটকে বিশ্ববিদ্যালয় বলেও ঘোষণা করেন তিনি। গুরু সেজে নিজের মতবাদ প্রচার করা শুরু করেন। নারীদের কুকুরদের সঙ্গে তুলনা করা থেকে ধর্ষণের জন্য নারীদেরই দায়ী করা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইলন মাস্ক টুইটারের ক্ষমতা দখল করার পর নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে পান টেট। ফের শুরু হয় কটূক্তি করা।
বন্দি মহিলাদের শরীরে ‘টেটের গোলাম’ বলে ট্যাটুও করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ছবি: প্রতীকী
শুধু সমাজমাধ্যমই নয়, নিজস্ব ওয়েবসাইটও চালাতেন টেট। সেই কাজে তাঁকে সহায়তা করতেন ভাই ত্রিসতান টেট। সেই ওয়েবসাইটে নারীদের যৌনাচারের নানা ভিডিয়ো প্রকাশ করা হত। জুন মাসে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় সে কথা। ২৭ ডিসেম্বর অ্যান্ড্রু টেট পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের উদ্দেশে কটাক্ষ করে একটি টুইট করেন। তার কড়া জবাব দেন গ্রেটা। গ্রেটার সেই টুইট ভাইরাল হয়ে যায়।
ঘটনাচক্রে তার পরই হাজতে গেলেন টেট। এক মহিলা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, টেট দিনের পর দিন তাঁকে আটকে রেখে যৌন হেনস্থা করেন। প্রাথমিক তদন্তের পর রোমানিয়া প্রশাসনের অভিযোগ, অন্তত ৬ জন মহিলাকে আটকে রেখেছিলেন টেট ও তাঁর সঙ্গীরা। যৌনদাসীর মতো ব্যবহার করা হত তাঁদের। এমনকি, বন্দি মহিলাদের শরীরে ‘টেটের গোলাম’ বলে ট্যাটুও করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গ্রেফতারির পরে টেট পুলিশ ও প্রশাসনকেও গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। তবে টেট যা-ই করুন, তদন্ত চলাকালীন আপাতত তাঁকে হাজতেই থাকতে হচ্ছে। এমনই নির্দেশ দিয়েছে রোমানিয়ার একটি আদালত।