একবার স্থানীয় সাংসদ উদ্বোধন করেছেন, আরও একবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। কিন্তু উদ্বোধনই সার, তারপর থেকে বছর তিনেক ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার কদম্বগাছি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন। আরও মজার কথা, ভবনটি যে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে সে কথা জানাই নেই জেলা স্বাস্থ দফতরের।
অথচ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল ২০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সেখানে ভর্তি করে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। নতুন ভবনটিতে অবশ্য ছিল বিছানা, আধুনিক যন্ত্রপাতি। সেই ভবন বন্ধ থাকায় পড়ে-পড়ে নষ্ট হচ্ছে তাও। তবে বিষয়টি জানা নেই বলেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাব।’’
এলাকার প্রবীণ মানুষ জানান, আহাদবক্স সর্দার নামে এক বাসিন্দার দেওয়া জমিতে মুখ্যমন্ত্রী বিধনচন্দ্র রায়ের আমলে তৈরি হয় কদম্বগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে প্রথমে শয্যা থাকলেও বছর তিরিশের আগে সেই পাট উঠে যায়। কাছাকাছি চিকিৎসাকেন্দ্র বলতে ৮ কিলোমিটার দূরে বারাসত জেলা হাসপাতাল। ফলে দিনে দিনে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চাহিদা বাড়তে থাকে। স্থানীয় মানুষ জানান, বারাসত ১ ব্লকের কদম্বগাছি পঞ্চায়েত এবং বারাসত ২ ব্লকের দাদপুর পঞ্চায়েতের প্রায় ২০টি গ্রাম এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। এই এলাকার মানুষের চিকিৎসা বলতে রয়েছে কেবল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকায় হাসপাতালটি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। পলেস্তরা খসে পড়তে থাকে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই শয্যা বিশিষ্ট একটি যথাযথ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকার মানুষ।
এরপরে বছর চারেক আগে তৎকালীন তৃণমূল প়ঞ্চায়েত সদস্য মীনা ঘোষ উদ্যোগী হলেও বাম পরিচালিত জেলা পরিষদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উন্নতির জন্য ৭২ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে। বর্তমান স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পিছনের মাঠে তৈরি হয় একতলা নতুন ভবন। তৈরি হয় পুরুষ ও মহিলা আলাদা বিভাগ। সেখানে ৫টি করে ১০টি শয্যার ব্যবস্থা হয়। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের চিকিৎসা সরঞ্জামও কেনা হয়।
২০১৩ সালের ২ মার্চ সাড়ম্বরে নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। সেদিন হাসপাতাল খুলেছিল ঠিকই কিন্তু তারপর থেকেই তা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে। কয়েক মাস বাদেই বারাসতের কাছারি ময়দানে এসে কদম্বগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই নতুন ভবনটির ফের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ হয়েছিল, তা আর খোলে না। সমস্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও আজও সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সেভাবেই বন্ধ হয়েই পড়ে রয়েছে।
এখন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে দেখা যাবে, বন্ধ নতুন ভবনটির জানলার কাচ ভেঙে ফেলেছে দুষ্কৃতীরা। ভিতরে ধুলোয় নষ্ট হচ্ছে শয্যা। মরচে পড়ে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি। চিকিৎসকদের আবাসন ভেঙে নষ্ট ধুলোয় মিশে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে কোনও আলো নেই, ঘন জঙ্গলে ভরা। স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘নিরাপত্তা না থাকায় সেই অন্ধকারে মদ্যপান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজকর্মও চলে।’’ একেবারেই পাশেই রয়েছে কদম্বগাছি পুলিশ ফাঁড়ি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে সেখানে একটি আলো লাগানো হলেও পিছনের গোটা এলাকাটি অবশ্য পড়ে থাকে সেই অন্ধকারে।
স্থানীয় মানুষ জানান, এখানে চিকিৎসক বলতে রয়েছেন এক জন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় তিনি বাইরে থেকেই যাতায়াত করেন। হাসপাতাল কর্মীদেরও ঠিকমতো দেখা মেলে না। ২৪ ঘণ্টা তো দূরস্থান দিনে তিন-চার ঘণ্টা খোলা রেখেই পরিকাঠামোর অভাবে বন্ধ হয়ে যায় স্বাস্থকেন্দ্র। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সমস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলিও পড়ে নষ্টও হচ্ছে। আর এ ভাবেই ধুঁকছে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।