পাকস্থলী বা অন্ত্রে ভাল জীবাণু থাকার অর্থই হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। ছবি: আইস্টক
আমাদের শরীরে যেমন ক্ষতিকর জীবাণু আছে, আছে ভাল জীবাণুও। উপকারী 'গাট মাইক্রোবস' বা ভাল জীবাণুদের সংখ্যা ও বৈচিত্র বাড়লে আমরা ভাল থাকি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকে। ওজন বশে থাকে। পেটের গোলমাল কম হয়। উল্টোদিকে খারাপ জীবাণুদের সংখ্যা বেড়ে গেলে সমস্যা বাড়ে সব দিক থেকেই।
দুঃখের বিষয় হল, এই সমস্যাটি ডেকে আনি আমরা নিজেরাই। ভুলভাল খাওয়া ও অনিয়মের হাত ধরে ভাল জীবাণুরা কমতে থাকে পাকস্থলী ও অন্ত্রে। কমে বয়সের সঙ্গে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে আমরা সংক্রমণের শিকার হই খুব সহজেই। তাই উপকারী 'গাট মাইক্রোবস' বা ভাল জীবাণু বাড়ানোর দিকেও সতর্ক থাকতে হবে।
সমস্যা ঠেকাতে
১. মিষ্টি, ট্রান্সফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার বন্ধ করে খান ভাল ফ্যাট ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার। অর্থাৎ চিনি, মিষ্টি, লুচি-পরোটা-চিপস-কাটলেট, প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। চিজ-ডিমের কুসুম-তেল-ঘি-মাখনে রাশ টানুন। তার বদলে খান শাক-সবজি-ফল, বাদাম, বীজ।
২. ময়দার রুটির বদলে খান আটার রুটি। পালিশ করা চাল-ডালের বদলে ব্রাউন রাইস, খোসাওয়ালা ডাল, রাজমা, ছোলা, বিনস।
রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতে খেতে হবে সুষম আহার। ফাইল ছবি
৩. কৃত্রিম মিষ্টি বা সুইটেনার, যেমন, অ্যাসপারটেম, স্যাকারিন না খাওয়াই ভাল।
৪. কোল্ড ড্রিঙ্ক, প্যাকেটজাত ফলের রস, আইস টি মিক্স খাওয়া বন্ধ করতে হবে। টাটকা ফল খেতে হবে।
৫. পলিফেনলসমৃদ্ধ ডার্ক চকোলেট, গ্রিন টি, রেড ওয়াইন শরীরের ভাল। অল্পস্বল্প খেতে পারেন।
৬. অন্ত্রে সরাসরি ভাল জীবাণুর জোগান দিতে টক দই, ইয়োগার্ট, কেফির নামের ঘোল, কমবুচা নামের এক ধরনের গেঁজানো কালো বা সবুজ চা, ল্যাকটিক অ্যাসিডে গেঁজানো বাঁধাকপি, যাকে সটেক্র্যাট বলে, গ্যাঁজানো সয়াবিন, নুন জলে ভেজানো টকে যাওয়া শশা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে, এ কথা জানালেন পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল।
৭. সপ্তাহে একবার বা দু-বার সম্ভব হলে ১০-১২ ঘণ্টা কিংবা ১৬ ঘণ্টা শুধু জল ও তরল খাবার খেয়ে থাকুন।
৮. খাওয়ার সময় ও ধরন মোটামুটি ঠিক রাখুন।
আরও পড়ুন: ফ্রিজ থেকে কি করোনা ছড়ায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন
৯. ঘুমের অনিয়ম করবেন না। মাত্র দু'সপ্তাহ কম ঘুমালেই অন্ত্রে জীবাণুর বিন্যাসে বড় রকমের পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
১০. নিয়মিত শরীরচর্চা করতেই হবে।
কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অন্ত্রে ভাল-মন্দ সব জীবাণুই মরে দলে দলে। অন্ত্র তখন সামান্য কিছু জীবাণুর দখলে চলে যায়। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে, এমনই বললেন গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট সব্যসাচী পট্টনায়ক।
আরও পড়ুন: মানসিক চাপ কমাতে মদ্যপান? বাড়ছে কোভিডের ঝুঁকি
তিনি জানালেন, শরীর সুস্থ রাখতে নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করা এবং সঠিক পরিমাণে ঘুম সবচেয়ে বেশি জরুরি। এতে ভাল জীবাণুর সংখ্যা বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও জোরালো হয়।