ওজন কমানোর ওষুধ একটানা খেলে কী কী ক্ষতি হয়? ছবি: ফ্রিপিক।
ওজন কমানোর ওষুধ নিয়ে নানা দিকেই চর্চা হচ্ছে। কিছু দিন আগেই নতুন একটি ওষুধও দেশের বাজারে এসেছে। তা ছাড়া ওজ়েম্পিক নিয়ে তো দিকে দিকে আলোচনার শেষ নেই। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা— অনেকেরই দাবি, ওজ়েম্পিক খেলে নাকি ওজন দ্রুত কমে। এই সব ওষুধে মেদ কমে ঠিকই, কিন্তু আরও নানা রকম অসুখবিসুখের ঝুঁকিও বাড়ে। যেমন হাড়ের ক্ষয়। চিকিৎসকেরা দাবি করছেন, ওজন কমানোর ওষুধ একটানা বেশি ডোজ়ে খেয়ে গেলে অস্টিয়োপোরোসিস নামক হাড়ের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
ওজ়েম্পিকের মতো ওষুধ খুব কম দিনের মধ্যেই ওজন অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। ধরুন, ওষুধ খেতে শুরু করার পর দেখা গেল, এক মাসের মধ্যে ওজন বেশ কিছুটা কমে গিয়েছে। শরীরও হালকা লাগছে। আর আপনিও তাই দেখে অতি উৎসাহে ওষুধ একটানা খেয়ে যেতে শুরু করলেন। এতে যে সমস্যা দেখা দেবে তা হল, ওজন সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে কমবে না। কখনও কম আবার কখনও হঠাৎ করে অনেকটা ওজন কমে যাবে। এতে পেশির ক্ষয় হতে শুরু করবে, বিপাকক্রিয়ায় বদল আসবে। ফলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করবে।
এই বিষয়ে একমত অস্থিরোগ চিকিৎসক সুব্রত গড়াইও। তিনি জানালেন, সুষম ডায়েট ও শরীরচর্চা করলে ওজন একটা সামঞ্জস্য রেখে কমে। কিন্তু ওষুধ বিপাকক্রিয়ার হার আচমকা কমিয়ে দেয়। ফলে খিদে কমে যায়। আর হঠাৎ করেই ওজন কমতে শুরু করে। এর জের পড়ে হাড়ের উপরে। এক দিকে যেমন পেশি ক্ষয়ে যেতে থাকে, তেমনই হাড়ের ঘনত্বও কমতে থাকে। অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস। এ ছাড়াও আছে নানা ধরনের খনিজ। বিভিন্ন কারণে ক্যালশিয়াম- সহ হাড়ের অন্যান্য উপাদান কমে গেলে হাড় পলকা হয়ে যায়, ফলে সামান্য চোট- আঘাতে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। একেই বলে অস্টিয়োপোরোসিস। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, ওজন কমানোর ওষুধ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। যেমন, মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে, শরীরে ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস শোষণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে। হাড় ভঙ্গুর হতে থাকে এবং অস্টিয়োপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। যাঁরা মাস তিনেকের বেশি একটানা ওজন কমানোর ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের এই আশঙ্কা বেশি। তাই ওষুধের বদলে খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ ও শরীরচর্চার মাধ্যমেই ওজন কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।