কিডনির অসুখে নিয়মিত ঠিক খাদ্যতালিকা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি
kidney

Kidney: কিডনি ভাল রাখতে মেপে খান

শরীরের বর্জ্য ও টক্সিন বার করার কাজটি করে কিডনিদ্বয়। যদি সেই কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়, তা হলে শরীরে টক্সিন জমতে থাকবে।

Advertisement

নবনীতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২২ ০৮:২১
Share:

শরীরের বর্জ্য ও টক্সিন বার করার কাজটি করে কিডনিদ্বয়। যদি সেই কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়, তা হলে শরীরে টক্সিন জমতে থাকবে। ফলে শুধু কিডনিই নয়, শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও প্রভাব পড়বে। তাই কিডনির রোগে যথাযথ খাদ্যতালিকা মেনে চলা খুব জরুরি, যাতে কিডনির উপরে চাপ না পড়ে।

Advertisement

কী কী বাদ দেবেন?

পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, “কিডনির রোগীদের সোডিয়াম আর ফসফরাসসমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাই প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া চলবে না। সেগুলোয় সোডিয়ামের আধিক্য থাকে। নুনের পরিমাণ অনেক কমাতে হবে। প্রোটিন ও দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সারা দিনে ৭৫ গ্রাম মতো মাছ খেতে পারেন। একবেলা একটা ছোট টুকরো মাছ খেলেই যথেষ্ট। তখন রাতে আর কোনও প্রোটিন রাখা যাবে না। ডাল, দুধ, পনিরও রাখা চলবে না ডায়েটে। পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। না হলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সিট্রাস ফ্রুট যেমন কমলালেবু, মুসাম্বি খাওয়া যাবে না। কলায় পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি। তাই কলাও বন্ধ। একই কারণে ডাবের জলও খাওয়া যাবে না।”

Advertisement

আবার কিডনির রোগী যদি ডায়াবেটিক হন, তাঁর ডায়েটে আরও নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। পুষ্টিবিদ প্রিয়া আগরওয়াল বললেন, “আমাদের দেশে বেশির ভাগ কিডনির সমস্যায় ভুক্তভোগীরা ডায়াবেটিক রোগী। তার কারণ হল ডায়াবিটিসের জন্যই অনেকের কিডনির সমস্যা শুরু হয়। পরে তা বাড়তে থাকে। শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ় পাকস্থলী, কিডনিতে সঞ্চিত হতে শুরু করে। ফলে ক্রমশ সেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি শুরু হয়। তাই গোড়া থেকেই ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ডায়েট মেনে চলা জরুরি। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। খেলে মঙ্ক সুগার খেতে পারেন।” তাই কিডনি রোগীদের চিনির পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন বিভিন্ন শাক, ব্রাউন রাইস, সিট্রাস ফ্রুট (মুসাম্বি, কমলালেবু), ক্যানড প্রডাক্ট, হোলহুইট ব্রেড, ডেয়ারি প্রডাক্ট, প্রসেসড ফুড, আচার, রাঙা আলু, আলু, টম্যাটো, ড্রাই ফ্রুটস, কোল্ড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে বলে জানালেন প্রিয়া।

কী কী খাবেন?

কিডনির রোগীদের খাদ্যতালিকা বানাতে হবে কিছু নির্দিষ্ট খাবার দিয়ে। মনে রাখতে হবে, শরীরের টক্সিন ও বর্জ্য যত কম তৈরি হয়, এমন খাবার বাছতে হবে। “ব্লু বেরিজ়, স্ট্রবেরিজ়, ক্র্যানবেরিজ়, কালো আঙুর, অলিভ অয়েল, বাঁধাকপি, ডিমের সাদা অংশ দেওয়া যেতে পারে। ম্যাকাডেমিয়া বাদাম দিতে পারেন। ভাত বা রুটির বদলে বাকহুইটস, কিনোয়া, অমরন্থ জাতীয় গ্লুটেনফ্রি শস্য দিতে পারেন। প্রোটিন দেওয়ার সময়ে তার পরিমাণও খেয়াল রাখতে হবে,” বললেন প্রিয়া।

এ ক্ষেত্রে একটা দিক উল্লেখ করলেন তিনি। ডায়ালিসিস রোগীদের প্রোটিন দরকার হয়। তাই তাদের ডায়েটে প্রোটিন পরিমাণ মতো যোগ করতে হবে। তবে খুব বেশি নয়। “রোগীর শরীরের ওজনের ১.২ গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন খেতে পারেন। অর্থাৎ রোগীর ওজন ৭০ কিলোগ্রাম হলে তিনি দিনে ৭০ গুণ ১.২ গ্রাম অর্থাৎ ৮৪ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারেন। সেটা যদি সকালে খেয়ে নেন, তা হলে আর রাতে খাওয়া চলবে না।” ডায়ালিসিস চলাকালীন রোগীকে ছানা, অড়হর ডাল, টোফু, সয়াবিন, ডিমের সাদা অংশ, ছোট এক টুকরো মাছ, রাজমা ডাল, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন দিতে পারেন। কিন্তু নন-ডায়ালিসিস রোগীদের এত প্রোটিন দেওয়া যাবে না। সারা দিনে আনাজপাতি যা খাবেন, তার মধ্যেই যা প্রোটিন থাকে, তাদের জন্য যথেষ্ট। শুধু এক কাপ মুগ ডাল দেওয়া যেতে পারে বলে জানালেন প্রিয়া। তবে সপ্তাহে এক-আধবার মাছ, মাংস (রেড মিট নয়) খেতে পারেন। তার বেশি নয়।

জলের পরিমাণ

কিডনির রোগে সারা দিনের ফ্লুয়িড ইনটেকের পরিমাণ খুব জরুরি। সুবর্ণা বললেন, “জিএফআর অর্থাৎ গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট দেখে জলের পরিমাণ ঠিক করা হয়। এই লেভেলটা দেখে বোঝা যায় কিডনি কতটা সক্রিয়। যদি এই লেভেল ষাটের উপরে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে কিডনি ঠিক আছে। এটা ষাটের নীচে নেমে গেলে বুঝতে হবে যে কিডনির অবস্থা একটু খারাপ। আর ১৫-র নীচে নেমে গেলে কিডনি ফেলিয়োর হয়ে যায়। তাই এই রেটটা খুব জরুরি। তার সঙ্গে রোগী কতটা মূত্রত্যাগ করছেন, সেটা দেখা হয়। সেই পরিমাণ অনুযায়ী জলগ্রহণের পরিমাণ ঠিক করা হয়। উদাহরণস্বরূপ যদি রোগীকে দিনে ১ লিটার জল খেতে বলা হয়, তা হলে সারা দিন চা, ফলের রস, মাছের ঝোল, ডাল... সব মিলিয়েই ফ্লুয়িড ইনটেক ১ লিটারের মধ্যে রাখতে হবে।” তবে জলগ্রহণের পরিমাণ ঠিক করবেন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

মনে রাখা দরকার

প্রত্যেক কিডনি রোগীর ডায়েট চার্ট আলাদা রকম হবে। পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, “এই ডায়েট রোগীর শরীরের উপরে নির্ভর করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াবিটিস থেকে কিডনির সমস্যার সূত্রপাত হয়। তাই কিডনির রোগীর ডায়েট চার্ট করার সময়ে সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। আবার রোগী ইনসুলিন নেন কি না তার উপরে নির্ভর করে কার্বস গ্রহণের পরিমাণ। অনেক সময়ে কিডনির সমস্যায় শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। তখন আয়রনসমৃদ্ধ খাবার দিতে হয়। অনেক সময়ে লিভারের সমস্যা থেকে কিডনি ফেলিয়োর হতে পারে। তাই কোনও নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা সব কিডনি রোগীর জন্য প্রযোজ্য নয়। এমনকি কিডনি রোগীদের ডায়েট চার্ট নিয়মিত আপডেট করাও জরুরি।”

ওষুধের পাশাপাশি যথাযথ খাদ্যতালিকা মেনে না চললে সমস্যার সুরাহা মেলা কঠিন। পুষ্টিবিদদের মতে, স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যেস গড়তে হবে কম বয়স থেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement