Health

অল্প পুড়লেও অবহেলা নয়

ছেঁকা লাগা থেকে শুরু করে গরম জল বা গরম তেল লেগে পুড়ে গেলে সাবধান হন

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০২
Share:

আগে বুঝতে হবে মাইল্ড, মডারেট না সিভিয়র বার্ন। সেই মতো শুরু হবে চিকিৎসা।

রান্নাঘরের কাজে ছেঁকা লাগা বা মাছ ভাজার তেল ছিটকে এসে হাতে, গলায় বা মুখে ফোস্কা পড়া খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে এর পরে অনেকেই হয়তো একটু বরফ ঘষে বা কোনও অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগিয়েই নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু এটুকু যথেষ্ট নয়। সামান্য পোড়া থেকেই পরে ইনফেকশন হতে পারে।

Advertisement

বার্নের ধরন বুঝে চিকিৎসা

Advertisement

আগে বুঝতে হবে মাইল্ড, মডারেট না সিভিয়র বার্ন। সেই মতো শুরু হবে চিকিৎসা। মেডিসিনের ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘যে কোনও বার্নকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ড্রাই বার্ন— এ ক্ষেত্রে গরম পাত্র অর্থাৎ গরম কড়াই বা চাটু ধরতে গিয়ে ছেঁকা লেগে গেল। আর একটা হয় স্কাল্ড— এ ক্ষেত্রে গরম জল বা রান্না করা খাবার হয়তো গায়ের কোথাও পড়ে গিয়ে পুড়ে গেল। সে ক্ষেত্রেও ফোস্কা পড়ে যায়। চামড়ার কতটা অংশ পুড়েছে সেটা দেখা দরকার। অনেক সময়ে শুধু উপরের চামড়া পুড়ে যায়। কিন্তু স্টোভ বা গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গিয়ে কেউ পুড়ে গেলে সেই বার্ন সিভিয়র। তখন চামড়ার নীচের মাংসল অংশও পুড়ে যায়। তাই হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হয়।’’ তবে শরীরের কোন অংশ পুড়ছে, সেই অনুযায়ীও বার্ন সিরিয়াস কি না বিবেচনা করা হয়। যেমন, মুখে বার্ন হলে তা সিরিয়াস ধরা হয়। আবার পিঠের তুলনায় আঙুলের মাথা গোল করে বা গোড়ালির অংশ পুড়ে গেলে তা সিরিয়াস বার্নের অন্তর্গত হবে। কারণ সেই অংশে পোড়া জায়গা শুকোনোর পরে চামড়ায় টান পড়লে অসুবিধে হয়।

কী কী করবেন?

• পুড়ে যাওয়ার পরে অনেকেই হাতে বরফ ঘষতে থাকেন। বরফ না দিয়ে কলের তলায় হাত বা পোড়া জায়গাটা মিনিট কুড়ি মতো ধরে রাখতে হবে।

• হাওয়ায় হাতটা শুকিয়ে নিন। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হালকা করে মুছে নিতে পারেন। ঘষবেন না। মনে রাখবেন, পোড়া জায়গার চামড়ায় যেহেতু তখন ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা থেকে কিন্তু ইনফেকশন হতে পারে। তাই পোড়া জায়গাটা যথাসম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে।

• হাতে ফোস্কা পড়লে অনেকেই সেটা ফাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফোস্কা না ফাটানোর পরামর্শ দিলেন ডা. তালুকদার।

• হাত বা আঙুল পুড়ে গেলে চুড়ি, আংটি খুলে রাখতে হবে। এই প্রসঙ্গে ডা. তালুকদার বললেন, ‘‘পুড়ে যাওয়ার পরে সেই অংশ অনেক সময়ে ফুলে যায়। তখন সেই আংটি বা চুড়ি গেঁথে বসে যায় ফোলা অংশে। এতে রোগীর ব্যথা বাড়ে। এ দিকে ফুলে যাওয়ার জন্য তা খোলাও যায় না। এমনও উদাহরণ আছে যে, তখন চুড়ি বা আংটি কেটে বার করতে হয়েছে। তাই পুড়ে গেলে সেখানে কোনও গয়না পরা থাকলে তখনই কিন্তু তা সাবধানে খুলে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।’’

মনে রাখবেন

  • পোড়া জায়গায় ঘন-ঘন জল লাগাবেন না। জলের কাজ করলে ক্ষত জায়গা ঢেকে নিন
  • শিশুদের হাতে বা শরীরের কোনও অংশে পুড়ে গেলে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
  • পোড়া জায়গায় যাতে ঘষা না লাগে, সে দিকেও খেয়াল রাখুন

পুড়ে গেলে সেই অংশ ঠান্ডা জলে ধুয়ে, শুকিয়ে তাতে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখতে পারেন। কোনও কসমেটিক ক্রিম লাগাবেন না। পেট্রোলিয়াম জেলি ওই ক্ষতকে রক্ষা করবে। এই জেল লাগানো এক ধরনের গজ কিনতে পাওয়া যায় দোকানে। এই গজও পোড়া অংশে বেঁধে রাখতে পারেন। এতে বাইরের ধুলো-ময়লা থেকে ক্ষতকে আড়াল করা যাবে। যেহেতু বাতাসেও আর্দ্রতা থাকে, তাই তা ক্ষত শুকোতে দেয় না। আর জল লাগলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।

• বার্ন থেকে ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করারও দরকার পড়ে কখনও-কখনও। তবে তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগাতে বলা হয়, কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

তাই পোড়া সামান্য হোক বা বেশি, তা অবহেলা করবেন না। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement