ফাইল চিত্র
ওজন কমানো নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের ওজন বাড়ানো প্রয়োজন বা যাঁরা আন্ডারওয়েট। তাঁদের ক্ষেত্রে কী করণীয়? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে জেনে নিতে হবে, কারা আন্ডারওয়েট? বিএমআর (বেসাল মেটাবলিক রেট) এবং বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) এই দু’টি শরীরের মেটাবলিজ়মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই দু’টির মাত্রার উপরে নির্ভর করবে আপনি আন্ডারওয়েট কি না। বিশেষত এ ক্ষেত্রে বিএমআই-এর ভূমিকা অধিকতর। দেহের ওজনকে উচ্চতা দিয়ে ভাগ করলে জানা যাবে বিএমআই। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের বিএমআই ১৮ থেকে ২৪-এর মধ্যে থাকলে স্বাভাবিক। ২৫ থেকে ২৯-এর মধ্যে থাকলে ওভারওয়েট। ৩০-এর উপরে গেলে ওবিস। আবার ১৮-র নীচে নেমে গেলে আন্ডারওয়েট।
কিন্তু ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর কথায়, ‘‘এই প্যারামিটারকে নির্দিষ্ট করে ধরা যাবে না। ফ্যাট সোর, মাসল মাস কতটা বা ক্রনিক অসুখ আছে কি না, দেখেই ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে।’’ এ ছাড়া একজন মানুষের জিনগত গঠন, শারীরিক গঠন, লাইফস্টাইলের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। আন্ডারওয়েট ব্যক্তির অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া, অ্যানিমিয়া, অস্টিয়োপোরোসিস, ত্বক-চুল-দাঁতের সমস্যা, অনিয়মিত পিরিয়ডস ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
ওজন বাড়াতে কী কী খাবেন?
• খাবারের পরিমাণ বাড়ানো যায়। কার্বস ও প্রোটিন আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় খেতে পারেন। তবে কারও বিএমআর-এর উপরে নির্ভর করবে কতটা খাদ্য তাঁর প্রয়োজন।
• খাদ্যতালিকায় খেজুর, কাজু, আমন্ড, পেস্তা, ওয়ালনাটের মতো ড্রাই ফ্রুটস ৩-৪টি করে রাখুন।
• মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা এবং ফলের মধ্যে কলা রাখুন রোজকার তালিকায়। ছোলা, রাজ়মা-সহ বিভিন্ন ধরনের ডাল ঘুরিয়েফিরিয়ে খান।
• চিকেন-ভেজিটেবল স্যালাডে চিজ় দিতে পারেন। সকালে চিজ়, পিনাট বাটার, ক্যারামেল স্প্রেড দিয়ে ব্রেড খেতে পারেন। কোনও সমস্যা না থাকলে গরম ভাতে মাখন বা ঘি দিয়েও খাওয়া যায়।
কিছু ভ্রান্ত ধারণা
প্রোটিন শেক বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। জাঙ্কফুড খেলে ওজন বাড়বেই। কিন্তু সেটা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ‘‘আচমকা ওজন বাড়া বা কমা কোনওটাই ভাল নয়। এতে অন্য অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। ওজন বাড়াতে অনেক খেয়ে নিলাম আর এ দিকে কোলেস্টেরল বা হজমের সমস্যা দেখা দিল, এমন না হয়। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে ওজন বাড়ান,’’ মন্তব্য কোয়েল পাল চৌধুরীর। ওজন কম বলে সে এক্সারসাইজ় করবে না, এমন ধারণাও ভ্রান্ত। স্ট্রেচিং, কার্ডিয়ো সকলের জন্য জরুরি। মাসল গ্রোথের জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম হয়, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে তা করতে পারেন।
শিশুদের ক্ষেত্রে
আঠেরো বছরের আগে বিএমআই মাপা হয় না। কারণ তত দিন পর্যন্ত উচ্চতা বাড়ে। তবে চিকিৎসকেরা ছোটদের ক্ষেত্রে গ্রোথ চার্ট মেনটেন করতে বলেন। অনেক বাবা-মা সন্তান খুব রোগা বলে চিন্তিত হয়ে পড়েন। শিশু চিকিৎসকেরা বাচ্চাদের ওজনের চেয়েও সুস্থতার উপরে বেশি জোর দেন। গ্রোথ চার্ট অনুযায়ী শিশু আন্ডারওয়েট হলে দেখতে হবে তাঁর অন্য শারীরিক সমস্যা আছে কি না। যদি দেখা যায়, শিশুটির উচ্চতার বৃদ্ধি স্বাভাবিক এবং সে অল্পতেই হাঁপিয়ে যায় না, তা হলে চিন্তার কিছু নেই। তবে ছ’-সাত মাস ধরে শিশুর ওজন-উচ্চতা যদি না বাড়ে, তা হলে চিকিৎসককে জানান। শিশুর খাদ্যতালিকাতেও কার্বস-প্রোটিনের ব্যালান্স থাকা জরুরি। দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ফল সবই যেন থাকে সেখানে। চিকিৎসকের পরামর্শে চিজ়, মাখন, ঘি মাপমতো দিতে পারেন। বাচ্চা রোগা বলে দেদার চকলেট, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অনুমতি দেবেন না।
হঠাৎ খাওয়া বাড়িয়ে দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এমন যেন না হয়, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে সুগার, কোলেস্টেরল, বদহজমের সমস্যা বেড়ে গেল।