— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গলায় ব্যথা নানা কারণে হতে পারে। কারণ অনুযায়ী ব্যথার ধরনও আলাদা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ঢোঁক গিলতে গিয়ে বা খাবার গিলতে গিয়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা হয়, অনেকটা গলায় কাঁটা ফুটে গেলে যেমন হয়। যে কারণে এ ধরনের ব্যথা হয়, তাকে বলে ঈগল সিনড্রোম। স্টাইলয়েড বা স্টাইলোহয়েড বা স্টাইলয়েড-ক্যারোটিড আর্টারি সিনড্রোম— একাধিক নাম আছে ঈগল সিনড্রোমের। ১৯৩৭ সালে অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট ডা. ওয়াট ডব্লিউ ঈগল এই সমস্যাটি প্রথম নির্ণয় করেন। তাঁর নামেই এই রোগের নামকরণ করা হয়।
সমস্যটি আসলে কী?
ঈগল সিনড্রোম সম্পর্কে ইএনটি স্পেশ্যালিস্ট ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত বললেন, “এটা বিরল একটি সিনড্রোম। মানুষের মাথার খুলি বা স্কালের গলার হাড়ের পিছনে টনসিলের পাশে ছোট হাড় থাকে, যাকে স্টাইলয়েড প্রসেস বলে। স্টাইলয়েড প্রসেস মানুষের ক্ষেত্রে খুব বড় হয় না। সাধারণত এর দৈর্ঘ্য ২.৫ সেন্টিমিটার। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাড় বেড়ে গিয়ে লম্বা শিংয়ের মতো আকৃতি ধারণ করে। চার সেন্টিমিটারের বেশি হয়ে গেলে সেই বাড়তি হাড় গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল নার্ভকে সঙ্কুচিত করে। আর তখনই একটা তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা অনুভূত হয় গলায় এবং দাঁতের চারপাশে।” এই হাড় বেড়ে যাওয়ার পিছনে কি ক্যালশিয়াম বা ভিটামিন ডি-র অভাব দায়ী? “না, এ রকম কোনও কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। দেখা গিয়েছে এটা সাধারণত ৩০-৬০ বছর বয়সি মহিলাদের হয়। যদিও এটা রেয়ার সিনড্রোম, খুব কম মানুষের মধ্যে হতে দেখা যায়,” বললেন ইএনটি স্পেশ্যালিস্ট ডা. উত্তম আগরওয়াল।
লক্ষণ
চিকিৎসা
ওষুধ এবং সার্জারি— দু’ভাবেই চিকিৎসা করা সম্ভব। চিকিৎসা প্রসঙ্গে ডা. আগরওয়াল বললেন, “আগে দেখে নেওয়া হয় গলায় অন্য কোনও কারণে সমস্যা হচ্ছে কি না। যেমন ফ্যারেঞ্জাইটিস, খাবার আটকে যাওয়ার সমস্যা ইত্যাদি। প্রথমে টনসিলের কাছে আঙুল দিয়ে প্রেশার দেওয়া হয়। ব্যথা অনুভূত হলে এক্স-রে করা হয়। দরকার হলে সিটি স্ক্যান করে দেখা হয়। কারণ সিটি স্ক্যানে স্টাইলয়েড প্রসেসটা কতটা বেড়ে গিয়েছে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। সমস্যাটি নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির করা হয়। প্রথমে ব্যথা কমানোর, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি এবং স্নায়ু শিথিল করার ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধে সমস্যার সমাধান না হলে সার্জারি করে স্টাইলয়েড প্রসেসের বেড়ে যাওয়া হাড়ের অংশটি বাদ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে টনসিলও বাদ চলে যায়।”
স্টাইলয়েড সিনড্রোমের রোগী বেশ কম। তাই এই সমস্যা নিয়ে সচেতনতাও কম। কিন্তু সাবধান থাকার জন্য গলা ব্যথা ফেলে না রেখে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই উচিত। সার্জারি প্রসঙ্গে ডা.দাশগুপ্তর মত, “রোগী জোর না করলে আমি অপারেশন করতে চাই না সাধারণত। অনেক সময়ে দেখা যায়, অপারেশন করার পরেও রোগী ভাল হন না। তাই রোগীকে সব কিছু খোলাখুলি জানিয়ে দেওয়া হয়। ওষুধ দিয়ে স্টাইলয়েড লিগামেন্টের চার পাশের পেশি শিথিল করে সামগ্রিক ব্যথা কমানো যায়।”
সমস্যা যতই গুরুতর হোক না কেন, যত আগে ধরা পড়বে, তত তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলার সুযোগ থাকে। এই রোগের ক্ষেত্রেও তাই। সে জন্য গলা ব্যথা যেমনই হোক না কেন, তা বেশি দিন স্থায়ী হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভাল।