অনেক সময়েই দেখা যায় বাড়ির খুদেটি নতুন নতুন বদভ্যাস রপ্ত করছে। হয়তো মুখে আঙুল দিয়ে বসে আছে। সেটা বন্ধ হল, তো নখ খাওয়া শুরু করল। অনেকে আবার চুল ছেঁড়ে। নিজের চুল তো ছিঁড়তেই পারে, আশপাশের মানুষের চুল ধরেও টান দেয়। অনেক শিশু যে কোনও জিনিস মুখে পুরে চিবোতে থাকে। হয়তো একটা খেলনা গাড়ি কিনে দিলেন খেলতে। কিছুক্ষণ বাদে দেখলেন, গাড়ির টায়ারগুলি নেই। ততক্ষণে সে তা খুলে মুখে চালান করে দিয়েছে, তার পরে অবসরে বসে জাবর কাটছে। শিশুদের মধ্যে এ রকম আচরণ অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।
সমস্যা কোথায়?
• খেলনা হোক বা নিজের আঙুল, যা-ই সে মুখে দিক না কেন, তার মাধ্যমে ময়লা চলে যেতে পারে পেটে। পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফ্লুয়ের সিজ়নে সর্দি-কাশি বা ভাইরাল অসুখে আক্রান্ত হতে পারে।
• নখ খাওয়া বা নাকে আঙুল দেওয়ার মতো বদভ্যাস থেকে নাকে বা নখের কোণে কেটে গিয়ে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কী কী করা যেতে পারে?
• সন্তানকে বকাঝকা করবেন না। প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, শিশু মানেই তাকে জোর করে কিছু করাতে যাবেন না। আপনি যত শাসন করবেন, বকবেন... ততই কিন্তু তা বেড়ে যাবে। তাই প্রথম পদক্ষেপ এই বিষয়গুলি ওর সামনে ইগনোর করা। ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিলে নিজে থেকেই হয়তো সে এক সময়ে নখ খাওয়া বা চুল ছেঁড়ার মতো অভ্যেস বন্ধ করে দেবে।
• মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবির মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সন্তানের সারা দিনের অ্যাক্টিভিটিকে টার্গেটে বেঁধে দিন। তার সুঅভ্যাসের জন্য তাকে একটা করে স্টার দিন। পাঁচটা স্টার জোগাড় করতে পারলে তাকে একটা উপহার দেবেন বলে কমিট করতে পারেন। এর মধ্যে সে যদি কোনও বদভ্যাস রিপিট করে, তা হলে সেই স্টার কেটে নিন। প্রথমে দু’বার ওয়র্নিং দিতে হবে। তার পরেও কাজ না হলে স্টার কেটে নিতে পারেন। এতে কিন্তু সে সচেতন হবে।’’
• দ্বিতীয়ত, সন্তানের কোনটা বদভ্যাস আর কোনটা নয়, সেটা আগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। অনেক সময়েই হয়তো কোনও কাজ করতে করতে অবচেতনে এক-দু’বার সে দাঁতে নখ কাটল। হয়তো পরে সেটা আর করল না, এমনও হতে পারে। সেটা কিন্তু বদভ্যাস নয়। কিন্তু যে কোনও কাজের মাঝেই যদি নখ খেতে শুরু করে, তখন বুঝতে হবে, সেটা তার অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। তখন সচেতন হতে হবে।
• সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। একজন পূর্ণবয়স্কের মতোই ওর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাকে জিজ্ঞেস করুন, সে কেন এমন করছে। হয়তো তার উত্তর থেকে সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
• এমন পদ্ধতিতে বোঝান, যাতে সে বোঝে। যেমন যদি সে নখ খায়, তাকে বলুন যে, এতে তার নখ বাজে দেখতে হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত নখ কেটেও দিন, যাতে সে নখ খেতে না পারে। অন্য দিকে নাকে আঙুল দিলে বলুন, এতে তার বন্ধুরাও তার সঙ্গে খেলবে না। কারণ তার হাতটা নোংরা হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা সমস্যা ধরে তার সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন।
• শুধু সন্তানকে বারণ করলেই হবে না। ভেবে দেখুন তো, ওর সামনে আপনি নিজে কোনও বদভ্যাসের শিকার নন তো? হয়তো আপনাকে দেখে সে-ও শিখেছে। তাই নিজের আচরণ ও স্বভাব সম্পর্কে আগে সচেতন হন।
কী কী করবেন না
• সন্তানের বদভ্যাস নিয়ে তাকে বকবেন না বা শাসন করবেন না। এতে কিন্তু তার জেদ আরও বেড়ে যাবে। ফলে আপনার আড়ালেও সে কাজটা করতে পারে। তাই বোঝান, বকাঝকা নয়।
• ডা. আবির মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘সব সময়ে ওর নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করবেন না। মাঝেমাঝে ভাল কাজের জন্য ওর প্রশংসাও করুন। এতে ও ভাল কাজ করতে উৎসাহ পাবে।’’
• ধৈর্য হারালে চলবে না। মনে রাখতে হবে, সে কিন্তু শিশু। আপনি তাকে কিছু বুঝিয়ে বারণ করলেও সেটা সে রিপিট করতে পারে। তখন ধৈর্য হারাবেন না। বরং তাকে বোঝাতে হবে যে, এতে আপনি দুঃখ পেয়েছেন। তাতে কাজ হবে।
তবে খেয়াল রাখবেন, একটা বদভ্যাস পালটাতে যেন আর একটা বদভ্যাস তার সঙ্গী না হয়ে যায়। অনেক সময়েই মোবাইল থেকে দূরে সরাতে গিয়ে টিভির নেশা ধরে যায়। ফলে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, রোমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: শান্তনু পাল
মেকআপ: চয়ন রায়
লোকেশন: হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল