শ্বেতীর হানায় অবহেলা নয়। দরকার প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও চিকিৎসা। ছবি: শাটারস্টক।
এই রোগটির সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। কিন্তু কখন কার জীবনে এই রোগ হানা দেবে তা আগে থেকে বলা যায় না।যেমন বলা যায় না এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ কোনওউপায়ের কথা।রোগটি মারণ নয়, ঘাতকও নয়। তবে একবার শরীরে বাসা বাঁধলে তা ক্রমে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে। আর অটোইমিউন ডিজিজ হওয়ায় মুক্তি পাওয়ার সোজাসাপটা পথও থাকে না।
শ্বেতী নিয়ে তাই মাথাব্যথাও কম নেই চিকিৎসক মহলে। দুনিয়া জুড়েই এই অসুখ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাও চলে। তবে ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে,এমন কিছু উপায় আছে যা অবলম্বন করলে রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এই প্রসঙ্গে ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষের মতে, অবহেলা করলে এই অসুখ রোগীর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই শ্বেতীর দেখা মিললেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এই অসুখে আমাদের ত্বকের রং তৈরি করার কোষ বা মেলানোসাইট নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বা কমে যায়। সঞ্জয়বাবুর মতে, বেশির ভাগ শ্বেতী আজকাল অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার থেকে হয়। রোজকার জীবনে এই সব রাসায়নিক সকলের ত্বক সহ্য করতে পারে না। তখনই শুরু হয় সমস্যা।
আরও পড়ুন: অকালে চুল ঝরা থেকে টাক পড়া, এই দাওয়াই দিয়েই করুন সমস্যার সমাধান
সাবধান হোন হেয়ার ডাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
কী কী রাসায়নিকে বিপদ?
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, কিছু কিছু রাসায়নিক ব্যবহারের পর ত্বকের কোনও রকম পরিবর্তন হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। সাবধান হোন হেয়ার ডাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এতে থাকা পি-ফেনিলেনেডিয়ামাইন বা ‘পিপিডি’শ্বেতী ডেকে আনতে ওস্তাদ। তাই সাবধান হতেই হবে এ ক্ষেত্রে।
এ ছাড়া সাবধানতা অবলম্বন করুন ডিও, পারফিউম-স্প্রে, ফরসা হওয়ার বিভিন্ন ক্রিম, ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো সানস্ক্রিন, অ্যাডহেসিভ রয়েছে এমন কোনও আঠালো দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, কড়া অ্যান্টিসেপটিক থেকেও। এইগুলি ব্যবহার করলেই যে শ্বেতী হবে এমনটা নয়, তবে যাদের ত্বক এই সব রাসায়নিকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না, বিপদ ঘনাবে তাদেরই।
রাসায়নিকের প্রভাব ছাড়াও সূর্যালোক ও মানসিক চাপও এই অসুখের অন্যতম কারণ।
মিথ ভাঙুন
শ্বেতী নিয়ে সাবধানতা অবলম্বনের আগে শ্বেতী নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করাও আবশ্যক।
ঠিক সময়ে শ্বেতীর চিকিৎসা শুরু করলে তা অবশ্যই কমে। সেরেও ওঠে বেশির ভাগটাই। এই অসুখ মোটেও ছোঁয়াচে নয়। কোনও রকম যৌন সংসর্গের জেরে তা ছড়ায় না। বাবা-মায়ের থাকলেই সন্তানের এমন অসুখ হবে, এই ধারণা একেবারেই ভুল, কারণ এ অসুখ বংশগত নয়।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণের কোপে পড়ছে আপনার সন্তানও, বাঁচতে মেনে চলুন এ সব
কেবল এসপিএফ-ই নয়, নজর রাখতে হবে পিএফ ফ্যাক্টরেও।
কী কী সতর্কতা
কোনও রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে শরীরে কোনও সাদা দাগ হচ্ছে কি না সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তেনমনটা দেখা দিলেই বন্ধ করতে হবে ক্ষতিকর রাসায়নিক দেওয়া জিনিসের ব্যবহার। ডিটারজেন্ট ব্যবহারের সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন। সাবান, তেল, শ্যাম্পুর বেলায় বিজ্ঞাপনী চমকে প্রভাবিত হয়ে না কিনে, চেষ্টা করুন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কিনুন। সানস্ক্রিন ব্যবহারের সময় ইউভি এ ও ইউভি বি দুটোই ব্লক করছে কি না দেখুন। কেবল এসপিএফ-ই নয়, নজর রাখতে হবে পিএফ ফ্যাক্টরেও। এ ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের অনুমোদন দেওয়া সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কোনও রকম ফরসা হওয়ার ক্রিম, হেয়ার ডাই একেবারেই ব্যবহার চলবে না। শ্বেতী ধরা পড়লে ছেড়ে দিন প্লাস্টিক বা রবারের জুতো পরা। সার্বিক ভাবেই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে ফেলতে পারলে ভাল হয়। সাবধানতার সঙ্গে কিছু ওষুধও প্রয়োজন হয়। তাই চিকিৎসায় অবহেলা নয়। স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমায়। দরকারে চাপমুক্ত রাখে এমন কোনও শখ বা নেশার দ্বারস্থ হতে পারেন।
(ছবি: শাটারস্টক)