বাড়ি থেকে বসে অফিসের কাজ করাটাই মিলেনিয়ালদের কাছে এখন ‘নিউ নর্মাল’। যাঁদের উপার্জনের জন্য এই মুহূর্তে বাড়ির বাইরে পা না রাখলেও চলছে, তাঁদের বাড়তি সুবিধে তো আছেই। সেই ধরনের কর্মীদের সুবিধার্থে বাজারে এসে গিয়েছে নানা ধরনের অ্যাপ, সফটওয়্যারও— যা ওয়র্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধে করে দিচ্ছে। ফোনে আগে থেকেই ইনস্টলড হোয়্যাটসঅ্যাপ কিংবা গুগল ডুয়ো অথবা হালের জ়ুম অ্যাপ দিয়েই অনেকে অফিসের কাজ-মিটিং চালিয়ে নিলেও সকলের ক্ষেত্রে তা খাটে না। যাঁদের কাজের বেশির ভাগটাই মুখোমুখি যোগাযোগের মাধ্যমে হয়ে থাকে, যাঁদের শেখানো বা প্রেজ়েন্টেশন দেওয়াটাই অন্যতম কাজ— তাঁদের ওয়র্ক ফ্রম হোম করতে একটু অসুবিধে হচ্ছে বইকি। সেই সকল কর্মীদের সুবিধের জন্যও রয়েছে একাধিক অ্যাপ্লিকেশন। শুধু জানা চাই তার ঠিক প্রয়োগ।
আইটি কিংবা ম্যানেজমেন্টের পেশাদারদের ক্ষেত্রে ওয়র্ক ফ্রম হোমের প্রথম এবং প্রধান শর্ত মসৃণ ইন্টারনেট কানেকশন। আসলে যাঁরা বাড়ি থেকে কাজ করছেন, তাঁদের বেশির ভাগের জন্যই এ কথা সত্যি। প্রাথমিক শর্তগুলো পূরণ হলে প্রথমেই জেনে নিন, আপনার কাজের মেশিনটি থেকে স্বচ্ছন্দে অনলাইন ক্লাস, ভিডিয়ো কনফারেন্সিং বা মিটিং অথবা ওয়েবিনারে যোগদান করতে হলে কী কী ইনস্টল করে নেওয়া উচিত। কার্যকারিতাই বা কী।
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা
• এমন অ্যাপ্লিকেশনই ফোন বা মেশিনে ইনস্টল করবেন, যা আপনার কাজের জন্যই কাস্টমাইজ়ড। যেমন, পেশায় শিক্ষক হলে গুগল ক্লাসরুম কিংবা ডুয়োর মাধ্যমেই অনলাইন ক্লাস নেওয়া সম্ভব। প্রেজ়েন্টেশন দেওয়ার ব্যাপার থাকলে মাইক্রোসফট টিমসের মতো অ্যাপ সাহায্য করবে আপনাকে।
• সাধারণত অনেক অফিসই তাদের কর্মীদের জন্য কর্পোরেট সাবস্ক্রিপশনে বিভিন্ন অ্যাপ কিংবা সফটওয়্যার ইনস্টল করে দিয়ে থাকে। ব্যক্তিগত কাজের প্রয়োজনে আবার মেশিনে নামিয়ে নিতে পারেন মিট, টিমস কিংবা সিসকো ওয়েবএক্স। বাড়ি থেকেই সহকর্মী বা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মুখোমুখি হতে পারবেন এগুলির সাহায্যে।
• অনেক ক্ষেত্রেই মিটিং বা কনফারেন্সের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় একসঙ্গে একাধিক ইউজ়ারের অংশগ্রহণ। সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রেন্ডলি অ্যাপগুলিও অনেককে একসঙ্গে যোগদানের ক্ষেত্রে বিশেষ সাহায্য করতে পারে না। ফেসটাইম, ডুয়ো কিংবা জ়ুম কলে একসঙ্গে অনেকে জয়েন করতে পারলেও তা শুধুই কন-কল, অফিশিয়াল মিটিংয়ের উপযুক্ত নয়। তখনই মাইক্রোসফট টিমস কিংবা স্কাইপ ফর বিজ়নেসের মতো অ্যাপের তাৎপর্য বোঝা যায়।
• যে অ্যাপে শুধুমাত্র ভিডিয়ো কল বা কনফারেন্স করা যায়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অফিসের কাজের সহায়ক নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে স্ক্রিন শেয়ারিংয়ের অপশন থাকে না। থাকে না প্রেজ়েন্টেশন পেশ করার সুবিধেও। এর জন্যই ওয়েব মিটিংয়ের জন্য দরকার হয় স্পেশ্যালাইজ়ড অ্যাপ্লিকেশনের। ভার্চুয়ালি মুখোমুখি হওয়া ছাড়াও একাধিক স্ক্রিন শেয়ারের অপশন থাকে সেখানে।
• যাঁদের কল নিতে হয় বা টেলি-কমিউনিকেশনে সারাক্ষণ যোগাযোগ স্থাপন করতে হয় ক্লায়েন্টের সঙ্গে, তাঁদের ক্ষেত্রে দরকার উপযুক্ত হেডসেটেরও। মিটিংয়ের সময়েও পুরো সেট-আপের সঙ্গে হেডসেট কানেক্ট করা থাকলে অনেক সহজে ও মসৃণ উপায়ে পর্দার ও-পারের মানুষদের সঙ্গে কমিউনিকেট করা সম্ভব হয়।
টেকনোলজিই শেষ কথা
অনলাইনে শুধু অফিসের মিটিং বা পড়াশোনাই নয়, অতিমারি-পরবর্তী আগামীর জন্য বাড়িতে বসে অন্য কাজ করতেও অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে নেটিজ়েন। মনঃসংযোগ বাড়াতে তাঁরা স্বচ্ছন্দে নামিয়ে নিতে পারছেন নয়েজ়লির মতো অ্যাপ, আবার ওয়র্কিং আওয়ারের হিসেবনিকেশ করতে ক্লকিফাইয়ের মতো টাইম ট্র্যাকারের ব্যবহারও শিখে যাচ্ছেন। ওয়র্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য আসানা, ট্রেলো, বেসক্যাম্পের মতো অজস্র অ্যাপ পাওয়া যায় অ্যান্ড্রয়েড প্লে স্টোরে। অভাব নেই অ্যাপল স্টোরেও। প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিলেই হল। শুধু ডাউনলোড এবং ইনস্টল করার আগে মাথায় রাখতে হবে তার সিকিয়োরিটির দিকটি।
তবে কাজের সুবিধার্থে ব্যবহার করা যে কোনও অ্যাপ্লিকেশনই বেহাল হয়ে পড়বে দ্রুতগতির নেটওয়র্ক ছাড়া। তাই যদি বাড়ি থেকেই মিটিং, কনফারেন্স, ইন্টারভিউ, ক্লাস কিংবা সেমিনারের বন্দোবস্ত করতে হয় নিয়মিত, তা হলে হাইস্পিড ব্রডব্যান্ড অথবা হটস্পটের ব্যবস্থা করে রাখা ভাল। কারণ আপনার ঘরটিই এখন ভার্চুয়াল ওয়র্কস্পেস, আর সেখান থেকেই কাজের দুনিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। দেশজোড়া ‘আনলক ওয়ান’ পর্বে এটাই এখন ‘নিউ নর্মাল’।
যা যা জেনে রাখা ভাল
• ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাসের জন্য ব্যবহার করতে পারেন গুগল মিট বা ক্লাসরুমের মতো অ্যাপ্লিকেশন
• অফিসে অনেকে মিলে জরুরি মিটিং বা তথ্য সংবলিত প্রেজ়েন্টেশন ইত্যাদির জন্য বেছে নিতে পারেন মাইক্রোসফট টিমস কিংবা সিসকো ওয়েবেক্সের মতো মাল্টিডিমেনশনাল অ্যাপ। স্ক্রিন শেয়ারিং থেকে কনফারেন্স, সবই করার অপশন পাবেন
• বাড়িতে বসে ওয়র্কিং আওয়ার কিংবা ব্রেক টাইমের হিসেব রাখতে নামিয়ে নিতে পারেন নানা ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন
• উইট্রান্সফারের উপরে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় অনেকেই চিন্তিত। ভারী ফাইল শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ভরসা রাখতে পারেন গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্সে