Fitness Tracker

মাপামাপিতে বাড়াবাড়ি নয়

আমাদের দিনযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ফিটনেস ট্র্যাকার, অ্যাপ। এগুলোর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত?

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৭
Share:

সারা দিনে কতবার সিঁড়ি ভাঙলেন, ক’পা হাঁটলেন, বিকেলের দিকে এক টুকরো পিৎজ়া খাওয়ার ফলে কতটা অতিরিক্ত ক্যালরি গেল শরীরে... বলে দেবে ফিটনেস ট্র্যাকার। এখন স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। কতটা ক্যালরি শরীরে ঢুকছে, কতটা ক্ষয় হচ্ছে তার হিসেব আমরা পেয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সেই হিসেব কি আদৌ ঠিক? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার বা ফিটনেস অ্যাপের উপর নির্ভর করে খাদ্যতালিকা এবং ব্যায়াম স্থির করা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত?

Advertisement

সব জিনিসের ভাল-মন্দ দুটো দিক থাকে। এটা যেমন ঠিক যে, ফিটনেস অ্যাপ-ট্র্যাকারের জন্য সাধারণ মানুষ আগের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছেন, তেমনই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা অন্য বিপদ ডেকে আনছে। মানসিক দিক থেকেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সারা দিনে কতটা ক্যালরি কমাতে হবে, তার একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা যায় অ্যাপে। এ বার সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে, মনখারাপ হতে পারে। অনেকে বারবার ট্র্যাকার দেখে হিসেব কষেন ক’পা হাঁটলেন। নিয়মের বাইরে খেয়ে ফেললে মনঃকষ্টে ভোগেন। টার্গেট পূরণের জন্য কেউ কেউ অসুস্থ অবস্থাতেও ব্যায়াম করে ফেলেন। অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার ও অ্যাপ ব্যবহারের আগে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরি।

কী ভাবে কাজ করে ডিভাইস

Advertisement

ফিটনেস ট্র্যাকার এখন হাতঘড়ির জায়গা নিয়েছে। কিছু ডিভাইস সারাদিনের অ্যাক্টিভিটির হিসেব দেয়। কিছু হার্টবিট, পালসের হিসেবও দেয়। অত্যাধুনিক ট্র্যাকারগুলোয় জিপিএস স্টিস্টেমও থাকে। সারা দিনে কতটা হাঁটাচলা হল, ব্যায়ামে কতটা ক্যালরি ব্যয় হল, তার হিসেব রাখে ট্র্যাকার। মোবাইলের সঙ্গে ট্র্যাকারের যোগ থাকবে অ্যাপের মাধ্যমে। সেখানেই সব তথ্য জমা হবে। এ ছাড়া রয়েছে বাজারচলতি বিভিন্ন ফিটনেস অ্যাপ। এ জাতীয় অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখানে নিজের উচ্চতা-ওজন লিখে দিলে বিএমআই চলে আসবে। এ বার সেই নিরিখে কতটা ক্যালরি রোজ ঝরাতে হবে বা কী কী ব্যায়াম করা উচিত, কতটা বিরতিতে খাবেন— সেই নির্দেশ দেবে অ্যাপ। কী খাবার খাচ্ছেন, সেটা লিখে দিলে অ্যাপ হিসেব দিয়ে দেবে, কতটা ক্যালরি আপনার শরীরে গেল। অর্থাৎ আপনার হাঁটচলা, খাওয়াদাওয়ার নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়াচ্ছে অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার বা অ্যাপ।

ব্যায়ামের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর ডিজিটাল গাইড

ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করার ফলে আমজনতা যে শারীরচর্চায় বেশি মন দিয়েছেন, এ কথা মানছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস। পাশাপাশি এ-ও বললেন, ‘‘টাকা খরচ করে জিমে যাওয়ার বদলে অ্যাপের নির্দেশ মেনে ব্যায়াম করাটা অনেকের কাছে বেশি সুবিধেজনক। কিন্তু শুধু ওজন ও উচ্চতার হিসেব কষে একজন ব্যক্তির এক্সারসাইজ় রুটিন স্থির করা অনুচিত।’’ ওজন, উচ্চতার পাশাপাশি শারীরিক গঠন, বয়স, কোনও অসুস্থতা আছে কিনা, পারিবারিক অসুখ— সবটা বিচার করে ফিটনেস রুটিন তৈরি করেন বিশেষজ্ঞরা। কোনও অ্যাপের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, ব্যক্তির জন্য শরীরের কোন অংশের জন্য কতটা বা কী ধরনের ব্যায়াম জরুরি। ‘‘প্রতিটি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলে। তাঁকে দেখে শারীরচর্চার রুটিন স্থির করি আমরা। কার উচ্চ রক্তচাপ, হাঁটুতে ব্যথা, কার শরীরে ঊর্ধ্বাংশ বেশি ভারী... সবটা বুঝে এক্সারসাইজ ঠিক করতে হবে,’’ বললেন সৌমেন দাস।

ডায়েটের ক্ষেত্রে কতটা বিজ্ঞানসম্মত

শুধু অ্যাপ নয়, ইন্টারনেটেও কোন খাবারে কতটা ক্যালরি আছে, সেই তথ্য, তৈরি করা ডায়েট চার্ট দেওয়া থাকে। পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী জানাচ্ছেন, উচ্চতা, ওজন, শরীরের গঠন, অসুখ, জীবনযাপনের ধরন বিচার করে তিনি ডায়েট প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। ‘‘ধরা যাক, কোনও একটা ওষুধ আপনাকে নিয়মিত খেতে হয়। আপনার ডায়েটেও সেটার প্রভাব থাকবে। ফুড ও ড্রাগের একটা সম্পর্ক আছে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের চার্ট মেনে চললে সমস্যা হতে পারে,’’ ব্যাখ্যা তাঁর। কোয়েলের মতে, অনেকের কাছে ফিটনেস মানে ওজন কমানো। ‘‘ফিটনেস অ্যাপগুলো একেবারেই বাণিজ্যিক স্বার্থে কাজ করে। ইন্টারনেট লব্ধ ডায়েট মেনে অনেকে ওজন তো কমিয়ে ফেলেন, তার পর নানা সমস্যা শুরু হয়। কিডনি স্টোন, মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস, আইবিএস, চুল পড়ে যাওয়া, স্কিন পিগমেন্টেশন... এমন রোগী প্রচুর পাচ্ছি এখন।’’ একজন ব্যক্তির শারীরিক গঠন, লাইফস্টাইল, রোগ— সব কিছু বিচার করেই ডায়েট প্রেসক্রাইব করার উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, অ্যাপ বা ট্র্যাকার মেনে শারীরচর্চা করলেও অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা যেন তৈরি না হয়। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ক্যালরি আর এক্সারসাইজ়ের হিসেবনিকেশ চলতে দেওয়া যাবে না। নিজেদের স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তি দিয়েই বোঝা যায়, কোন খাবারে ক্যালরি বেশি বা কম। তার জন্য অ্যাপের প্রয়োজন নেই। এই ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করলেও একবার অন্তত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement