lifestyle section

যে কারণে কোভিড আক্রান্ত হলে স্বাদ, গন্ধের অনুভূতি চলে যায়

কোভিডের মতো অন্য ভাইরাসগুলির সংক্রমণেও কেন আমাদের ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা নষ্ট হওয়ার ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক নয় তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৫:২৯
Share:

সংক্রমণে হারায় ঘ্রাণশক্তিও। -ফাইল ছবি।

কোভিড সংক্রমণের ফলে আমাদের ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা হারানোর ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। এমনকী সংক্রমণ থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও আমরা সেই ক্ষমতা সাময়িক ভাবে হারিয়ে ফেলতে পারি। শুধু কোভিড-১৯ ভাইরাসই নয় যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণেই আমাদের ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা নষ্ট হয়। কারণ কোভিডের মতো অন্য ভাইরাসগুলির হানাদারিও হয় আমাদের শ্বসনতন্ত্রের উপর দিকটায়।

Advertisement

গরিব দেশগুলিতে টিকাকরণের জন্য বিল গেটসের সংস্থা ‘দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি)’-র একটি ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কোভিডের মতো অন্য ভাইরাসগুলির সংক্রমণেও কেন আমাদের ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা নষ্ট হওয়ার ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক নয় তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে ব্রিটিশ রাইনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ক্লেয়ার হপকিন্স এবং ইউকে ইএনটি-র প্রেসিডেন্ট নির্মল কুমার বলেছেন, ‘‘এটা অনেক দিনই আমরা জানি ভাইরাসগুলি থেকে জ্বর ও পরে সংক্রমণ হলে পরে যখন রোগী সংক্রমণ মুক্ত হন তখনও তাঁদের নানা ভাবে ভুগতে হয়। এগুলোকে বলা হয় ‘পোস্ট-ইনফেকশাস লসেস’। ২০০-রও বেশি ভাইরাস আছে যারা আমাদের শ্বসনতন্ত্রের উপর দিকটার ক্ষতি করে সংক্রমণের মাধ্যমে। তাই কোভিড রোগীরাও যে ঘ্রাণশক্তি বা স্বাদক্ষমতা হারাচ্ছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’

Advertisement

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হানাদারির ফলে নাকের নাসারন্ধ্র্রের ভিতরে আমাদের ঘ্রাণশক্তি ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে যে বিশেষ ধরনের কোষগুলি, কোভিড-১৯ ভাইরাস সেই কোষগুলিকেই সংক্রমিত করছে। সেই কোষগুলি তখন সংক্রমণ রুখতে ব্যস্ত হয়ে উঠছে। ফলে তাদের যেটা মূল কাজ সেই ঘ্রাণশক্তিকে অক্ষুণ্ণ রাখার কাজে তাদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য ওই কোষগুলি আর জরুরি বার্তা পাঠাতে পারে না স্নায়ুগুলিকে। ফলে, কোভিড রোগীরা প্রাথমিক ভাবে হারিয়ে ফেলছেন ঘ্রাণশক্তি। অন্য ভাইরাসের সংক্রমণেও এটা হয়।

সংক্রমণ শুরু হওয়ার ৫ মাস পর দেখা গিয়েছিল শরীরের খুব বেশি তাপমাত্রা বা জ্বর, লাগাতার সর্দি, হাঁচি, কাশির মতোই কোভিড রোগীরা প্রাথমিক পর্বে তাঁদের ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘অ্যানোস্মিয়া’। কোভিড রোগীদের এমনকী স্বাদক্ষমতাও হারাতে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ মিষ্টিকে নোনতা বলে মনে করছেন। কখনও মিষ্টিজাতীয় জিনিস তাঁদের টোকো লাগছে। ওই সময় ব্রিটেনের একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র জানায় কোভিড রোগীদের অর্ধেকই প্রাথমিক পর্বে হারিয়ে ফেলছেন ঘ্রাণশক্তি। আর ১৬ শতাংশ কোভিড রোগী সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পরেও তাঁদের ঘ্রাণশক্তি ফিরে পাননি। তার পর বিভিন্ন গবেষণাপত্রে দাবি করা হয় কোভিড সংক্রমণের পর ‘ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা হারানো খুব স্বাভাবিক’। প্রতি ১০ জন কোভিড রোগীর মধ্যে এক জনের চেয়েও বেশি ক্ষেত্রে এই দু’টি লক্ষণ দেখা গিয়েছে।

আরও পডুন: ‘টিকার মতোই শুধু আইন বাঁচায় না, তার প্রয়োগ বাঁচায়’

আরও পডুন: ক্যানসার সচেতনতা আটকে স্রেফ উদ্‌যাপনেই

পরে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় কোভিড রোগীরা যে শুধুই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন তা-ই নয়; তাঁরা কোনও একটি গন্ধের সঙ্গে অন্য ধরনের গন্ধকে গুলিয়ে ফেলছেন। কফির গন্ধও কারও কটূ লাগছে। কেউ আঁশটে গন্ধ পাচ্ছেন। কারও পচা মাছের গন্ধ নাকে আসছে। কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনার সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়তে দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এও জানাচ্ছেন, ঘ্রাণশক্তি হারাতে পারে নানা ধরনের স্নায়ুরোগেও। তাই ঘ্রাণশক্তি হারানোটাই যে কোভিড সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলির অন্যতম, সেটাও খুব জোর দিয়ে বলা উচিত নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement