Curtains

পর্দায় ঘেরা ছায়ানীড়

ঘর সাজানোর জন্য চাই রুচিবোধ ও দেখার চোখ। দক্ষিণ কলকাতার এক ফ্ল্যাটে নজর কাড়বে শৈল্পিক কায়দায় সাজানো অন্দরসজ্জাঘর সাজানোর জন্য চাই রুচিবোধ ও দেখার চোখ। দক্ষিণ কলকাতার এক ফ্ল্যাটে নজর কাড়বে শৈল্পিক কায়দায় সাজানো অন্দরসজ্জা

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০১:৩৩
Share:

যে কোনও বাড়ি বা ফ্ল্যাটে জানালার পর্দা সেই বাড়ির বাসিন্দাদের রুচিবোধের আভাস দেয়।

মা কিংবা ঠাকুমাকে দেখে অনেকের ঘর সাজানোর ধারণা তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সেই ধারণার উপরে প্রলেপ পড়ে নিজের বোধ, দৃষ্টি, ভালবাসা ও শৌখিনতার। তবে তাঁর ফ্ল্যাট সাজানোর ক্ষেত্রে এমন কেউ অনুপ্রেরণা ছিলেন না বলে জানালেন ডিজ়াইনার চন্দনী বসু। ‘‘এ ক্ষেত্রে আমি ওঁদের কোনও নম্বর দিতে পারছি না,’’ হালকা হাসি তাঁর কণ্ঠে। লেক গার্ডেন্সের চল্লিশ বছরের পুরনো এক আবাসনের থার্ড ফ্লোরে তাঁর ফ্ল্যাট। একাই থাকেন। কিন্তু ঘর সাজিয়েগুছিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। বেডরুম, লিভিং, স্টাডি, গার্ডেন এরিয়া ঘুরলে নজর কাড়বে চন্দনীর শিল্পবোধ ও নান্দনিকতা।

Advertisement

যে কোনও বাড়ি বা ফ্ল্যাটে জানালার পর্দা সেই বাড়ির বাসিন্দাদের রুচিবোধের আভাস দেয়। পর্দার ক্ষেত্রে সিন্থেটিক বা আর্টিফিশিয়াল ফ্যাব্রিক পছন্দ করেন না চন্দনী। তাই তাঁর বেডরুমে সাদা গদির সঙ্গে মানানসই লাল-কালো সরু পাড়ের শাড়ি পর্দা হিসেবে শোভা পাচ্ছে। আবার লিভিং রুমে হলুদ দেওয়ালের বিপরীতে লাল ও সবুজ রঙের পর্দা ঘরের রূপ আরও খোলতাই করেছে। সব ঘরেই পর্দার স্ট্যান্ডি থেকে ঝোলানো রয়েছে বিভিন্ন নজরকাড়া হ্যাঙ্গিং। ড্রেপ কার্টেনস চন্দনীর ফ্ল্যাটের সাজে যেমন রূপ-রং যোগ করেছে, তেমনই এনেছে ছায়াময় নীরবতা। ঘরের পছন্দের কোণে ছায়াই তো খোঁজে অলস দুপুর...

সোফা-ফার্নিশিংয়ের ক্ষেত্রেও ব্যালান্সের বোধ স্পষ্ট। ঘরের কোনও অংশ দেখে মনে হবে না যে, অতিথিদের নজর কাড়ার জন্য থরে থরে জিনিস সাজানো। বরং অল্পের মধ্যেই কী ভাবে চোখ টানা যায়, সেই বোধের ছাপ প্রতিভাত অন্দরসজ্জায়। চন্দনী বললেন, ‘‘আমার সোফার রং যেহেতু বেজ, তাই ঋতু অনুযায়ী আমি এর সাজ পাল্টে ফেলি। মেঝেতে পাতার রাগ অথবা দরি ব্যাকরেস্টে দিয়ে তা সহজেই করা যায়।’’

Advertisement

তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটে নিজের বেডরুম ছাড়া একটিকে স্টাডি, অন্যটিকে গেস্ট রুম বানিয়েছেন চন্দনী। স্টাডির অন্দরসাজেও পারিপাট্য নজর কাড়ার মতো। একটি রিভলভিং বুক কেসের উপরে রাখা রয়েছে ব্ল্যাক সেরামিকের ফুলদানি। যেখানে ফুলের বদলে চন্দনী রেখেছেন তাঁর বাগানের গাছের পাতা। আলাদা বাগান তো আছেই, তবে ঘরেও সবুজের ছোঁয়া রাখার পক্ষে তিনি। তাঁর বেডরুমেও ছোট গাছ, ফুল দিয়ে সাজানো পাত্রের উপস্থিতি চোখে পড়ে। ইনডোর প্লান্ট তাঁর প্রতিটি ঘরের সাজের অপরিহার্য অঙ্গ। এ ছাড়া রয়েছে অসংখ্য সাকিউল্যান্টস। ব্যালকনিতে রয়েছে তাঁর সাধের চাঁপা গাছ ও ট্রাভেলার্স ফার্ন।

ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের শখ রয়েছে চন্দনীর। প্রথমত, অ্যান্টিক আসবাবপত্র। তাঁর স্টাডির বুককেসটি একটি অ্যান্টিক শপ থেকে সংগ্রহ করা। কনসোল, ড্রেসার, স্টাডির লো-সিটার চেয়ার, শু-ক্যাবিনেট... এগুলিও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে অ্যান্টিক আসবাবপত্রের দোকান থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি। পাশাপাশি হ্যান্ডিক্রাফ্টের বিভিন্ন আর্টিফ্যাক্ট সংগ্রহ করার শখও রয়েছে তাঁর। যার মধ্যে বিভিন্ন আকারের হাতি ও পাখি তাঁর মূল্যবান কালেকশন।

লিভিং রুমে কনসোলের সামনে রাখা রয়েছে নানা হস্তশিল্প মেলা, ফোর্ট কোচি থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ধরনের হাতি-পুতুল। একটি অভিনব সেটআপ সকলের নজর কাড়তে বাধ্য, পুতুলের সঙ্গে লাগানো মোমদানি (ছবি)। পুরনো গয়নার বাক্স ভর্তি করা হয়েছে বিভিন্ন আর্টিফ্যাক্টস দিয়ে। তার উপরে রাখা মোমদানি। এটি সংগ্রহ করা হয়েছে অ্যান্টিক স্টোর থেকে। আর পুতুলটি আসলে ধূপদানি। জার্মানি থেকে এক বন্ধুর দেওয়া উপহার। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া পছন্দের জিনিস সাজিয়ে নিজের মতো করে স্টেটমেন্ট তৈরি করেছেন তিনি।

লকডাউনের মধ্যে নিজের শিল্পবোধকে মুরাল পেন্টিংয়ের রূপ দিয়েছেন তিনি। গার্ডেন এরিয়ার দেওয়ালে চন্দনীর মুরাল পেন্টিংয়ের অনুপ্রেরণা ফোর্ট কোচির আর্ট ফেস্টিভ্যাল। ওই ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শন করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের চোখজুড়োনো সব ওয়াল আর্টের। সেখান থেকেই এই ধারণা পেয়েছেন তিনি।

তাঁর ফ্ল্যাটের প্রতিটি ঘরের একটি দিকে রয়েছে প্লাস্টার না করা, অসমান দেওয়াল। এই আনফিনিশড লুক চন্দনী ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করেন। আনইভন টেক্সচারিং দৃষ্টিনন্দন তো বটেই, পাশাপাশি সব কিছু নিখুঁত পরিপাটি থাকলে তার মধ্যে একটা দেখনদারি কাজ করে। কিন্তু আনইভন টেক্সচার গল্প বলে খুঁত নিয়ে বেঁচে থাকার, হোঁচট খেয়েও এগিয়ে চলার...

চন্দনীর ফ্ল্যাটের যে কোনও সজ্জার উপকরণ তাঁর কাছে মূল্যবান। কারণ কিছু তাঁর সংগ্রহের, কিছু কাছের মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার। শিল্প-সংস্কৃতির সমঝদার বলেই তাঁর চোখ খোঁজে সাধারণের মধ্যে অসাধারণকে, অনেকের মাঝে অনন্যকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement