বিয়ের মরসুম চলছে। আবার এক মাসের বিরতি দিয়ে বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে যাবে লম্বা বিয়ের মরসুম। বন্ধুবান্ধুব, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিশেষ কিছু দেওয়ার ইচ্ছে সকলেরই থাকে। প্রিয়জনের নতুন সংসারে সেই উপহারেই ধরা থাকে কাছের মানুষের আশীর্বাদ, স্নেহ-ভালবাসা। হয়তো দশ-বারো বছরের পুরনো সংসারেও হঠাৎ এক-একটা জিনিস বেরিয়ে পড়ে, তা দেখে মনে পড়ে যায় প্রিয় মানুষটিকে।
রুপোর বাটি-চামচে হয়তো বাঁধা পড়ে থাকেন প্রাণের পিসিমা, যে আসলে হয়তো ইহজগতে নেই। আবার একটা সোনার কঙ্গনে ধরা থাকে প্রয়াত ঠাম্মির গায়ের ওম। প্রীতি-উপহার তো নিদেনপক্ষে একটা কিছু কিনে দেওয়া নয়। তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক চিন্তাভাবনা। তাই ভালবাসার মানুষকে দেওয়ার জন্য কিছু বিশেষ প্রীতি-উপহারের সন্ধান দেওয়া হল।
উপহার হোক অমূল্য
-
ঘড়ি: সময়ের দাম অনেক। আর তাই এখনও মোবাইলের মাথায় ডিজিটাল টাইমেও ঘড়ির মূল্য কমেনি। ভাল কোম্পানির ঘড়ি তো রয়েছেই। একটু সাবেকি ধরনের পকেটঘড়িও উপহার দিতে পারেন। কলকাতার একটু পুরনো সাবেকি ঘড়ির দোকানে এমন অনেক রকমের পকেটওয়াচ পেয়ে যাবেন। ধুতি-পাঞ্জাবির সঙ্গে নতুন বরের আভিজাত্য বাড়িয়ে দেবে এই ঘড়ি। এখন তো শুধু সময় দেখার জন্য নয়, বরং ঘড়ি হয়ে উঠেছে স্টাইল স্টেটমেন্টের অঙ্গ। পাশ্চাত্যের ঘড়ি সনাতনী সাজের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক মিশ খায় না। সে ক্ষেত্রে এমন একটা পকেটঘড়ি অবশ্যই সারা জীবনের সম্পদ। এ ছাড়া বড় পেন্ডুলাম ক্লক দিতে পারেন, নতুন ঘরবাড়ি বা সংসার সাজানোর জন্য।
-
বাসনকোসন: বিয়ের বাসনকোসন একটা জরুরি বিভাগ। নবদম্পতির সংসারে তার চাহিদাও কম নয়। তবে কাচের ওই একঘেয়ে ডিনার সেটের বদলে কিনে দিতে পারেন সেরামিক বা চিনেমাটির বাসনের সেট। বাজেট একটু বেশি থাকলে রুপোর পেয়ালা, পিরিচ, ফুলবাটির সেটও দিতে পারেন। রুপোর কাটলারি বা বাটির সেটও রাখতে পারেন উপহারের তালিকায়।
-
শয়নে-স্বপনে: নবদম্পতির শয়নকক্ষের জন্যও পাওয়া যায় স্লিপিং সেট। সেখানে যেমন থাকে সুন্দর রেশমবস্ত্র। তার সঙ্গে দু’জোড়া কাপড়ের চটি, আইপ্যাচ, কমফর্টার। এই ধরনের সেটের বাক্সটিও ভারী সুন্দর হয়। অনলাইন স্টোর বা ভাল আপহোলস্ট্রির দোকানে পেয়ে যাবেন এই জিনিস। বাজেট কম থাকলে শুধু জয়পুরি, ব্লক প্রিন্টের কমফর্টার বা বেডকভারও দিতে পারেন।
-
কলমে লেখো নাম: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেনের ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির কথা মনে পড়ে? যেখানে সুচিত্রা একটি দামি কলম উপহার হিসেবে নিয়ে যান বাপের বাড়িতে। কলম সত্যিই মহামূল্যবান উপহার। এখন দৈনন্দিন দিনযাপনে ডিজিটাল অক্ষরে হাতের আখর আমরা ভুলতে বসেছি। তবে এখনও আইনি কাগজে সইসাবুদ, লেখালিখির জন্য কলমের ব্যবহার কমেনি। তাই ভাল ব্র্যান্ডের কলমও (বলপয়েন্ট বা ফাউন্টেন) থাকতে পারে আপনার উপহারের তালিকায়। তবে যাঁকে দিচ্ছেন, সেই পাত্র-পাত্রী কলমের মূল্য কতটা বুঝবেন, সেটা বুঝেই এই উপহারের কথা ভাববেন।
-
এমন বন্ধু আর কে আছে!: একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী মিলে বই পড়তেও কিন্তু মন্দ লাগে না। একটা বই দু’জনে একসঙ্গে পড়ার মজাও আছে। একটা পাতা কার আগে পড়া শেষ হবে, কার পরে... সেই অনুযায়ী ধৈর্য ধরে অপেক্ষাও যে সঙ্গী হয়। দাম্পত্যে তা কাজে লাগে বইকি! তাই বইপ্রেমী দম্পতি হলে তাঁদের বিয়েতে এমন অনেক বই বা পুস্তকবিপণির গিফট কুপন দেওয়া যায়। এই উপহার অমূল্য। বইয়ের গল্পগুলো তাঁদের সঙ্গে থেকে যাবে চিরকাল।
-
পুরাতন যাহা: এখন ব্যবহার না হলেও ডায়াল করা যায়, এমন ফোনের সেট, গ্রামোফোনের মতো উপহারও দিতে পারেন। পোর্সেলিনের মূর্তিও থাকুক না হয় এই তালিকায়। সুদৃশ্য আলো বা ঝাড়ও দিতে পারেন।
-
ধাতব দ্যুতি: অনেকে হয়তো গয়না দেওয়ার কথা ভেবেও পিছিয়ে আসেন বাজেট কম থাকায়। সে দিক দিয়ে নতুন ধরনের গয়না বাছতে পারেন। সোনার গয়নার বদলে ভাল রুপোর চিরুনি, বাগান, কাঁটা, শিরোমণি বা কপারের সুন্দর চন্দ্রহার, পাটিহার, কর্ণফুল বন্ধুবান্ধবকে দেওয়াই যায়।
-
সবুজের সমারোহ: গাছ, সঙ্গে সুদৃশ্য প্লান্টারও দিতে পারেন নবদম্পতিকে। গাছ ভালবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর গাছের মতো ভাল উপহার আর কী-ই বা হতে পারে। সুন্দর কোনও ফুল বা পাতাবাহার গাছ দিতে পারেন। সঙ্গে থাকুক সুদৃশ্য মেটাল বা সেরামিক প্লান্টার। তবে চেষ্টা করবেন, গাছের প্লান্টারে প্লাস্টিক এড়িয়ে চলতে। প্লান্টার সুন্দর হলেও নীচের অংশটি সুন্দর করে মোড়কে মুড়ে দিলে দেখতে সুন্দর লাগবে।
-
পুষ্পস্তবক: ফুলের আবেদন চিরকালীন। যে কোনও উপহারের সঙ্গে একটা পুষ্পস্তবক তার মূল্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। অনেক নবদম্পতিই উপহার গ্রহণ করতে চান না। সেখানে অর্কিড, গ্ল্যাডিয়োলাস ইত্যাদি নানা ফুল দিয়ে তৈরি একটা সুন্দর পুষ্পস্তবক নিয়ে যেতে পারেন।
এমন কিছু উপহারও দিতে পারেন, যা সুন্দর মুহূর্ত হিসেবে থেকে যাবে নবদম্পতির জীবনে। ধরুন তাঁদের মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার দুটো টিকিট কেটে উপহার দিতে পারেন। অথবা তাঁদের পছন্দের গন্তব্যে ২ দিনের হোটেল বুক করে দিলেন। বিয়ের পরে একটা দারুণ রেস্তরাঁয় ডিনার বুক করে দিলেন। এতে তাঁদের সংসার জীবনের সূচনায় কিছু বিশেষ মুহূর্ত জুড়ে থাকবে আজীবন। তবে অবশ্যই এ ধরনের উপহার দেওয়ার আগে নবদম্পতির একজনের সঙ্গে অন্তত আলোচনা করে নিন।
তবে যে উপহারই দিন না কেন, তার মোড়ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্লাস্টিক বা সহজলভ্য চকচকে র্যাপিং পেপারে না মুড়ে কাপড় বা রঙিন কাগজে তা মুড়ে দিন। উপরে লাগিয়ে দিন দু’একটা ফুল। মোড়কেও থাকুক আন্তরিকতার পরশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)