ভিটামিন সি-এর উৎস হিসেবে পাতিলেবুর উপকারিতার কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু তা ছাড়াও এর অন্যান্য কার্যকারিতাও রয়েছে, যে কারণে রোজকার খাবারের পাতে একটা করে লেবু রাখা আবশ্যিক। প্রায় পুরোটাই গুণসমৃদ্ধ হলেও কিছু ক্ষেত্রে লেবু খাওয়ার মাত্রা খানিক নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। কেন পাতে লেবু অপরিহার্য, জেনে নেওয়া যাক।
এমন বন্ধু আর কে আছে
বহু ধরনের লেবুর মধ্যে দৈনন্দিন ব্যবহারে পাতিলেবুই সবচেয়ে পরিচিত। জলে মিশিয়ে বা ভাতের পাতে, দিনে একটা পাতিলেবু খেলে কী কী উপকার হতে পারে?
* অন্যান্য ফলের চেয়ে লেবুতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামেও সমৃদ্ধ লেবু। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের জোগান হিসেবে এবং ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
* চুল, ত্বক ভাল রাখা তো বটেই, পাতিলেবুর গুণাগুণ ধমনীকে ভাল রাখতে ও এর কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে পরোক্ষে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ও রক্ত চলাচলেও এর সদর্থক প্রভাব পড়ে।
* শরীরে প্রবিষ্ট অনেক ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি। ফুড পয়জ়নিং কিংবা ডায়েরিয়া প্রতিরোধে তাই পাতিলেবুর রস কাজে দেয়। এতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড হজমশক্তিও বাড়ায়। পেট খারাপ হলে লেবু খেতে নেই— এটি ভ্রান্ত ধারণা।
* লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত হওয়ায় পাতিলেবুর রস ডায়াবেটিক রোগীদের পক্ষে উপকারী। উচ্চ রক্তচাপযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে লেবুতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ভাল কাজে দেয়। তা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমায়।
খাওয়ার মাধ্যম
ভিটামিন সি জলে দ্রাব্য ভিটামিন, তাই জলে লেবু রস গুলে খেতে পারেন। আবার ভাতের পাতেও খেতে পারেন তা। কোনও দিন বাড়িতে ফল কেনা না থাকলে, মিড মর্নিং স্ন্যাকের সঙ্গে লেবুর রস খেয়ে নিতে পারেন। আবার ছানা তৈরির সময়েও পাতিলেবুর রস ব্যবহার করাই ভাল। তবে দুধ আর লেবু পরপর খাবেন না কখনওই।
অনেকেই ভাত খাওয়ার সময়ে প্রায় সব পদের সঙ্গে লেবু চিপে নিয়ে খান। তাতে ক্ষতি নেই, জানালেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী। ‘‘যে কোনও ফর্মে লেবু শরীরে গেলেই হল। তবে গরম জলে লেবু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যেস থাকে অনেকের, যা ঠিক নয়। কারণ, গরম জলের উচ্চ তাপমাত্রায় ভিটামিন সি-এর কার্যকারিতাই নষ্ট হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু খাওয়াও উচিত নয়, এতে অ্যাসিড হতে পারে,’’ বললেন তিনি। একই কারণে ত্বকে সরাসরি লেবু মেখে নেওয়ার প্রবণতা সম্পর্কেও সচেতন করলেন সুবর্ণা রায়চৌধুরী। লেবুর রস ত্বকে সরাসরি মাখার পরে সেখানে রোদ পড়লে তা ত্বককে পুড়িয়ে কালো করে দিতে পারে, র্যাশও বেরোতে পারে। ‘‘একে ফাইটোফোটোডার্মাটিস বলা হয়। শুধু লেবুই নয়, অ্যালো ভেরা সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতেও বারণ করা হয় একই কারণে,’’ বললেন তিনি।
অতিরিক্ত নয়
অতিমারির পর থেকে অনেক বাড়িতেই লেবু খাওয়ার চল বেড়েছে আগের চেয়ে। কেউ খাবারের সঙ্গে, কেউ চায়ে দিয়ে খাচ্ছেন লেবু। রোজ একটা করে লেবু খেলে তার উপকার যেমন অনেক, তেমনই লেবুর অতিরিক্ত ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা ভাল। যেমন, কিডনির অসুখ থাকলে শরীরে পটাসিয়াম লেভেল হাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ‘‘লেবুতে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় কিডনির রোগীদের অতিরিক্ত লেবু খেতে বারণ করা হয়। ইউরিক অ্যাসিডের রোগীদের ক্ষেত্রেও লেবুর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকলে ভাল। সরাসরি লেবু খাওয়ার অভ্যেস থাকলে এক সময়ে তা দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তা ছাড়া খিদের মুখে শুধু লেবুর রস পেটে গেলে লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে পাচকরসে থাকা অ্যাসিড মিলে পাকস্থলীর গাত্রের ক্ষতি করতে পারে, যার জেরে স্টমাক আলসারও হতে পারে,’’ বললেন সুবর্ণা।
সর্বগুণসম্পন্ন লেবুতে ‘দোষ’ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ডায়েটে নিয়মিত একটা করে পাতিলেবু যোগ করতে ভুলবেন না।