কোন কোন বিষয় মাথায় রাখলে জীবনে ভাল থাকা সম্ভব? —প্রতীকী ছবি।
জীবন চলছে জীবনের ছন্দে। এখনও একঘেয়ে, কখনও খানিক মজা। কিন্তু ঝিমিয়ে পড়া জীবনে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করা যায় সহজেই। গতানুগতিক জীবনেই যার ফলে জুড়ে যাবে বাড়তি ভাললাগা। জীবনে আসবে উদ্যম, কর্মক্ষেত্রে সাফল্য।
ভাবছেন নিশ্চয়ই, এ ম্যাজিক নাকি! সত্যিই তাই। আসলে সঠিক পরিকল্পনা, কর্মতৎপরতা, কয়েকটি সু-অভ্যাস বদলে দিতে পারে জীবনের ছন্দ। মনোরাগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার জানাচ্ছেন, দৈনন্দিন জীবনে বেশ কয়েকটি বিষয় মেনে চললে, দিনের শেষে ভাল থাকা যায়।
১. একটা নতুন দিন, একটা নতুন শুরু। সেই দিনটা পাওয়ার জন্যই ধন্যবাদ জানিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। হাসিমুখে অন্য মানুষকে ‘শুভ দিন’ বলায় একটি ইতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে যায়। সেই মানুষটির মুখেও হাসি ফোটে।
২. শর্মিলা বলছেন, অফিস, সংসার কোনও ক্ষেত্রে সন্তানের দায়িত্ব, বয়স্ক বাবা-মায়ের দায়িত্ব থাকে। শুরু থেকেই কাজ নিয়ে পরিকল্পনা করলে সুবিধা হয়। প্রয়োজনমতো রুটিন তৈরি করে নিলে সুবিধা।
৩. প্রতি দিন অফিস যাচ্ছেন, কাজ করছেন, চলে আসছেন। প্রতি দিন যে কাজ একঘেয়ে লাগছে, সেটাই ভাল লাগবে যদি পরিবেশ ঠিক থাকে। কাজের পাশাপাশি সহকর্মীদের সঙ্গে সুস্থ, সুন্দর সম্পর্ক অফিসের পরিবেশ ভাল করে তোলে। কাজের ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ করে শুধু কাজেই মন দিতে হবে, যত ক্ষণ না তা শেষ হয়। প্রতি দিন এ রকম লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। কাজের সময় শুধুই কাজ, বিরতির সময় আবার জমিয়ে আড্ডা। তখন কাজ নয়।
মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ, তবে অফিসের কাজ অফিসে শেষ করে আসাই ভাল। বাড়ি ও অফিসের মধ্যে তফাতটুকু করা দরকার। অফিসের কাজ যদি বাড়িতে করতে হয়, সে ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় তার জন্যে নির্ধারিত করা দরকার।
পাশাপাশি মা যখন সন্তানকে সময় দেবেন, তিনি তখন শুধু তাকে নিয়ে থাকবেন। রান্না করতে করতে বা কাউকে ফোন করতে করতে সন্তানের পড়াশোনা বা তাকে দেখতে গেলে সন্তান সে ভাবে মাকে পাবে না। তার চেয়ে যখন যে কাজটা তিনি করবেন, তখন যেন সেই কাজটুকুই মন দিয়ে করেন।
৪. জীবনে শেখার জায়গাটা সব সময় খোলা রাখা উচিত। নিত্যনতুন শিক্ষা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। নতুন কিছু জানা, শেখার একটা আনন্দ থাকে। অনেক সময় এই বিষয়টা গুরুত্ব পায় না। তাতেই জীবন গতানুগতিক হয়ে যেতে পারে। যেমন কোনও মহিলা হয়তো সংসারটিই মন দিয়ে করেন। তিনি নিজের পছন্দের সব্জি দিয়ে হয়তো নতুন একটা রান্না শিখলেন। সেটা রাঁধলেন। নিজের ভাল লাগল। বাড়ির অন্যেরাও প্রশংসা করল। বিষয়টি খুব ছোট্ট মনে হলেও, এর মধ্যে শেখার, নিজের ইচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়ার আনন্দ আছে। আবার একটি বই পড়লেন। তা থেকেও যা শিখলেন, তাতে মনে ভাললাগা তৈরি হল।
৫. ভাল থাকা জন্য নিজেকে সময় দেওয়া খুব জরুরি বলছেন শর্মিলা। সেই সময়টায় নিজের ইচ্ছামতো কাজ করা দরকার। এমনকি তাঁর পরামর্শ, নিজেকে উপহার দিন। এতে মন ভাল থাকবে। অনেক সময় সাংসারিক চাপে নিজের ভাললাগা চাপা পড়ে যায়। প্রয়োজনে একটা ফুলও নিজেকে উপহার দেওয়া যেতে পারে।
৬. দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তি, সমাজমাধ্যম, মোবাইল অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এর যেমন ভাল দিক আছে, তেমনই খারাপ দিকও আছে। ইন্টারনেটের জগতের এক অদ্ভুত টান আছে, যা কাজ ভুলিয়ে সে দিকেই মনকে আকৃষ্ট করে। এ ক্ষেত্রে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ, মোবাইল দেখার জন্য, সমাজমাধ্যমে বিচরণের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা দরকার। মোবাইলে মুখ ডুবিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকা কাজের নয়। বরং যদি মনে হয়, মোবাইল ছাড়া কিছুই ভাল লাগছে না, তখন বুঝতে হবে বিষয়টি ঠিক নয়। বরং একটা সময় বাড়ির সকলে মিলে একসঙ্গে টিভি দেখা যেতে পারে। ওয়েব সিরিজ় দেখার হলে, স্থির করে নিতে হবে দু’টি পর্বের বেশি দেখবেন না। না হলে অন্য কাজ কিংবা হয়তো রাতের ঘুম পণ্ড হবে।
৫. ফুরফুরে থাকার জন্য বন্ধুবান্ধব, আড্ডা জরুরি। কিন্তু অনেকে আছেন, যাঁরা সব সময় অন্যের সমালোচনায় ব্যস্ত। না হলে নিজের দুঃখের খাতা খুলে বসেন। ব্যস্ত জীবনের ছুটিটা এমন ধরনের মানুষের সঙ্গ এড়িয়ে চলাই ভাল। বরং সেই মানুষগুলিকে গুরুত্ব দিন যাঁরা প্রতিকূলতার মধ্যেও হাসিমুখে এগিয়ে চলেছেন। জীবনে খারাপের চেয়ে তারা ভাল দিকগুলি দেখেন। তবে একই সঙ্গে মনোরোগ চিকিৎসক বলছেন, কোনও মানুষ হয়তো নেতিবাচক কথা বলেন না। আচমকা তাঁরা কষ্টের কথা বলছেন। তখন দেখা দরকার সমস্যা কোথায়। তিনি হতাশায় ভুগছেন কি না, বোঝা দরকার। সেই সময় কিন্তু মানুষটির সহযোগিতা, সহমর্মিতার প্রয়োজন।