দশমীর মেনুকার্ডে কী চমক রাখলেন সুদীপা?
প্রতি বছরই অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো ঘিরে বেশ হইচই হয় শহর জুড়ে। টলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে নেতা-মন্ত্রী— পুজোর ক’দিন চট্টোপাধ্যায় অতিথির আগমন লেগেই থাকে। অগ্নিদেবের আদি বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। সেখানে প্রায় ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো হত। তবে গত ৯ বছর ধরে অগ্নিদেব ও সুদীপার উদ্যোগে কলকাতাতেই শুরু হয়েছে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুদীপা বললেন, ‘‘এ বছর তো কারও মন ভাল নেই। চিকিৎসক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সমাজটাকেই যেন নাড়িয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া এ বার আমার মা-ও নেই আমাদের সঙ্গে। প্রতি বছর যে রকম ধুমধাম করে পুজো হয় আমার বাড়িতে এ বছর তা হচ্ছে না। খুব ছোট করেই পুজোর আয়োজন করেছি। শুধু নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধবকেই এ বছরের পুজোয় আমন্ত্রণ করেছি। ভক্তিমনে পুজো করব, তবে পুজোর জৌলুস কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছে এ বছর।’’
চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় অন্নভোগ দেওয়া হয় মাকে। সুদীপা বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে আমাদের মা অন্ন এবং আমিষ আহার গ্রহণ করেন। অষ্টমীর সন্ধিপুজোর পর থেকেই মাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে মাংস আর নানা রকমের মাছ পরিবেশন করা হয়। মায়ের ভোগে থাকে গঙ্গা ও পদ্মার ইলিশ। এ বাড়ির পুজোয় মাকে এক এক দিন এক এক রকম চাল দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি, গোবিন্দভোগ, এ ছা়ড়া ঢাকা থেকে আনানো হয় বিশেষ চিনিগুড়া চাল। নবমীতে মায়ের ভোগে সাত রকম মাছ আর নিরামিষ মাংস থাকে আর দশমীর দিন গঙ্গার ইলিশ খেয়ে মা বিদায় নেন।’’
পুজোর ক’টা দিন বাড়িতেই কেটে যায় সুদীপার। খাওয়াদাওয়াও সারেন বাড়িতে। তাঁকেই যদি দেওয়া হয় আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের জন্য মেনুকার্ড বানানোর দায়িত্ব? ধরুন যদি দশমীর সকাল থেকে রাতের জমকালো খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনা করতে হল, তা হলে কী কী থাকবে সুদীপার মেনুতে? প্রশ্ন শুনে উত্তর দিতে খুব বেশি সময় নিলেন না তিনি।
দশমীতেই তো পুজো শেষ। তাই পুজোর শেষ দিনে তো ভালমন্দ খেতেই হবে। সুদীপা বললেন, ‘‘দশমীর দিন সকালে আমার বাড়িতে রাধাবল্লভী আর ছোলার ডাল খাওয়া হয়। আর সঙ্গে দোকান থেকে কেনা কোনও মিষ্টি নয়, বাড়িতেই বানানো হয় ঘি, কাজু-কিশমিশ দিয়ে সুজির হালুয়া।’’
বাড়ির পুজোতে সুদীপা। ছবি: সংগৃহীত।
দশমীর দিন মায়ের বিদায়ের পর থেকে সুদীপার বাড়িতে আর ইলিশ ঢোকে না, আবার সরস্বতী পুজোতে ইলিশ রান্না হয়। তাই দশমীর দিনের দুপুরের ভোজে ইলিশ তো রাখতেই হবে। সুদীপা বলেন, ‘‘ দশমীর দিন দুপুরের ভোজে থাকে ভাত, মুগের ডাল, বেগুনি, ইলিশ ভাপা, লাল লাল রঙের কচি পাঁঠার ঝোল, চালতার টক, পাঁপড় আর রসগোল্লা।’’
দেবী দুর্গার বিসর্জনের পর বাড়ি ফিরে খুব বেশি রান্নাবান্না করার ইচ্ছে থাকে না কারও। তা ছাড়া দুপুরে ভারী খাবার খেয়ে রাতে হালকা কিছু খাওয়াই ভাল। সুদীপা বলেন, ‘‘বিসর্জন শেষে বাড়ি ফিরে মটন ঘুগনি খাওয়ার চল রয়েছে আমার বাড়িতে। সেই ঘুগনির স্বাদ এতটাই ভাল হয় যে ক্লান্ত শরীর আর মন দুই-ই জুড়িয়ে যায়। কারও বেশি খিদে পেলে সঙ্গে পাউরুটি খেয়ে নিতে পারেন। মটন ঘুগনির সঙ্গে পাউরুটির যুগলবন্দি কিন্তু অসাধারণ।’’
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।