আরব সাগরের পাশে ফ্লুরিজ়ের নয়া ঠিকানা। —নিজস্ব চিত্র।
আরবসাগরের সৈকতে এক টুকরো কলকাতা। বা ‘বোম্বাইয়া বর্ষায়’ কলকাতার ধ্রুপদী আস্বাদ। এটুকু বললে বাড়াবাড়ি হবে না। আজকের ভারতে বড় শহরগুলির মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য-পানীয় ব্র্যান্ডের ছড়িয়ে পড়াও নতুন কথা নয়। এই যাওয়া-আসার স্রোতেই এ বার গা ভাসাচ্ছে ফ্লুরিজ়। ১৯২৭ থেকে পার্ক স্ট্রিটে ঘাঁটি গাড়া অভিজাত চা-ঘর এই প্রথম কলকাতার বাইরে পুরোদস্তুর বসত করতে চলেছে।
এত দিন অবশ্য কলকাতা বা কলকাতার বাইরে ছোট ছোট বিপণি বা বিমানবন্দরের কিয়স্কে ফ্লুরিজ়ের দেখা মিলেছে। তাতে বসে খাওয়ার আয়োজন ছিল নামমাত্র। দক্ষিণ কলকাতার পূর্ণ দাস রোডের শাখাতেও ফ্লুরিজ় আপন মহিমায় উদ্ভাসিত। কিন্তু এ বার তাদের ডানা মেলা কলকাতা ছাড়িয়ে ভারতের বাণিজ্য রাজধানীতে। এবং সেখানেও ভরপুর স্থান মাহাত্ম্য। ফ্লুরিজ়-এর এখনকার মালিক, এপিজে সুরেন্দ্র পার্ক হোটেলের চেয়ারপার্সন প্রিয়া পাল বলছেন, “পার্ক স্ট্রিটের পরে যে সে ঠিকানা নয়, মুম্বইয়ে কোলাবার গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া তল্লাটের লোকেশনই আমরা খুঁজছিলাম।”
পার্ক স্ট্রিটের ফ্লুরিজ় এখন কলকাতার একটি পরিচয়। এ দেশের কেক-প্যাটির ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ উঠলে মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে বসেও কলকাতার ফ্লুরিজ়কে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়। সেই সঙ্গে সকাল থেকে রাত চা, কফি বা সুরা সহযোগে পূর্ণাঙ্গ ভোজ-বিলাসের আয়োজনও পার্ক স্ট্রিটে। মুম্বইয়ে আরবসাগর সৈকতেও তেমনই বন্দোবস্ত থাকছে।
তবে কলকাতার হেরিটেজ ব্র্যান্ড এ শহরের বাইরে গিয়েও সফল হচ্ছে, তেমন নজির বেশি নেই। প্রবাসী বাঙালিদের কাছে পৌঁছতে হাল আমলে তুলনায় নবীন ওহ ক্যালকাটা, ভজহরি মান্না-রাও দেশের ভিন্ শহরে পাড়ি দিয়েছে। তবে কোভিডের সময়ে বিপুল ভাড়ার খরচ টানতে না-পেরে মুম্বইয়ের ভজহরি মান্না ঝাঁপ বন্ধ করে। বেঙ্গালুরুর সিক্স, বালিগঞ্জ প্লেস-এর পুরনো ঠিকানাও আর নেই। বাড়িটি ভেঙে সম্প্রসারণের সময়ে রেস্তরাঁটি বিদায় নিয়েছে। ইদানীংকালে নয়ডা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে চাউম্যানকে পেয়েও খানিকটা কলকাতা ধাঁচের চিনে খাবারের স্বাদ পাচ্ছে বাঙালিরা। অউধ ১৫৯০-এর শাখা হয়েছে দিল্লিতে।
ফ্লুরিজ়-এর নতুন জয়যাত্রায় অবশ্য শুধুমাত্র কলকাতা-আবেগটাই পুঁজি নয়। ফ্লুরিজ়-এর ন্যাশনাল হেড রাজেশ সিংহ বলছেন, ‘‘মুম্বইয়ে আরবসাগরের তীরে এমন চমৎকার লোকেশনে তেমন কাফে নেই। তবে থিয়োব্রোমা, স্টারবাকস, সব কা কাফে-র মতো বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বীরাও আশপাশে। এটা মাথায় রেখেই মেনু সাজানো।”
কোলাবার ফ্লুরিজ়ের প্রধান শেফ আর্শাদ শেখ কলকাতার ফ্লুরিজ়ের কিচেনেও লম্বা সময় কাটিয়েছেন। মুম্বইয়ের ঠিকানার রামবল, সিলভ্যানা, চকলেট শর্ট ব্রেড, পাইনঅ্যাপল কিউব, বাবা কেক থেকে ভিয়েনিজ কফিতে তার ছাপ মিলবে, শোনা যাচ্ছে আশ্বাস-বাণী। ইতিমধ্যে কলকাতার মতো মুম্বইয়ে টি২ বিমানবন্দরেও ফ্লুরিজ়-এর দু’টি বিপণি রয়েছে। বছরখানেকের মধ্যে দেশ জুড়ে কম-বেশি ১২০টি শাখায় ছড়িয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়েই এগোচ্ছে কলকাতার ফ্লুরিজ়।