অবসর জীবন মানেই কিন্তু হতাশায় বাঁচা নয়, তার চেয়ে দৈনন্দিন যাপন একটু বদলে নিন। ছবি: সংগৃহীত।
রোজের ইঁদুরদৌড়ে নিজের জন্য কতটা সময় বার করতে পারে মধ্যবিত্ত বাঙালি? সারা জীবন ১০টা-৫টা কাজ করে অবসর নেওয়ার পর হঠাৎ নিজের জন্য অনেকটা ফাঁকা সময় পেয়ে যান সকলে। কিন্তু হঠাৎ অফুরন্ত সময় পেয়ে অনেকে আবার অস্তিত্ব সঙ্কটেও ভোগেন। রোজের রুটিন এলোমেলো হয়ে পড়ে। শুরুর দিকে কয়েকটি দিন ছুটি উপভোগ করলেও, দিন যতই এগোতে থাকে অনেকেরই মনে চেপে বসে একাকিত্ব। অশক্ত শরীর, তার উপর আচমকা বাইরের জগৎ থেকে দূরত্ব তৈরি হওয়া— সব মিলিয়ে মনের উপর চাপ তৈরি হওয়াও স্বাভাবিক। অবসর জীবন মানেই কিন্তু হতাশায় বাঁচা নয়, তার চেয়ে দৈনন্দিন যাপন একটু বদলে নিন। নতুন অভ্যাস তৈরি করে বাঁচতে পারেন প্রাণভরে। এত দিন কাজের চাপে যদি জীবনসঙ্গীকে সময় না দিতে পারেন, তবে এখন দু’জনে মিলে নতুন করে আনন্দে কাটান। অবসর জীবন রঙিন করে তুলবেন কী ভাবে, রইল হদিস।
নতুন কিছু শেখায় মন দিন
বাড়িতে বসে বসে দিন না কাটিয়ে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। নতুন ভাষা শিখতে পারেন, ছবি তোলা শিখতে পারেন, কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখতে পারেন। শেখার কোনও বয়স হয় না। আর বয়স হয়েছে বলেই অপেক্ষাকৃত তরুণদের সঙ্গে কিছু শিখতে গিয়ে লজ্জাও পাবেন না। এত বছর ব্যস্ততার জন্য যে কাজগুলি করতে পারেননি, অবসর সময়টি সেগুলির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। কারও শখ থাকে বাগান করার, কারও বা ছবি আঁকার, কারও আবার সঙ্গীতচর্চার। সেগুলিই নতুন করে চর্চা করতে পারেন। যে ভাল লাগাগুলিকে কাজের চাপে হারিয়ে ফেলেছিলেন, তাতে আবার মন দিন।
শরীরচর্চা করুন খোসমেজাজে
অবসর নেওয়া মানেই সারা দিনে শুয়ে-বসে সময় কাটাবেন না। যতটা পারবেন বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মে নিজেকে যুক্ত রাখুন। সকালে উঠে অল্প হাঁটাহাটি, যোগাভ্যাস, ধ্যান, নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করা অভ্যাস করে ফেলুন। বাগান করা, রান্না করা, ছোটখাটো দোকানবাজার, ব্যাঙ্কের কাজ— এগুলি বন্ধ করে দেবেন না। বিকেলে বা রাতে খাওয়ার পরও খানিক হাঁটাহাটি করে নিতে পারেন। এতে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়ে শরীর সুস্থ থাকবে অনেক দিন। বাড়িতে কোনও পোষ্য রয়েছে কি? না থাকলে এ বার সে বিষয়ে ভাবতে পারেন। পোষ্যের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করেও শরীর ফিট থাকে সহজে।
বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন
অবসর নেওয়া মানে বাকি জগতের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া একদমই নয়। তাই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, আড্ডা মারুন। একসঙ্গে বসে কোনও বিষয় আলোচনা করা, কোনও বই পড়া বা সিনেমা দেখার মতো কিছু কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে পারেন। পরিবারের ছোটদের সঙ্গে আড্ডা দিন। অনেক সময়ে বাড়ির খুদেরাও নানা রকম মজার নতুন জিনিস আমাদের শেখাতে পারে। বন্ধু বা প্রাক্তন সহকর্মীদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতেও যেতে পারেন দলবেঁধে। এতে শরীর-মন ভাল থাকবে।
বেড়িয়ে পড়ুন ভ্রমণ
ঘোরার শখ থাকলে কর্তা-গিন্নি মিলে বেরিয়ে পড়ুন। ভ্রমণপিপাসু মানুষের জীবনে সবচেয়ে উপভোগ্য মনে হবে এটাই। এখন অনেক সংস্থা বয়স্কদের নিয়ে ভ্রমণ করেন। একা যেতে ভরসা না হলে, তেমন কোনও ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন। এ ছাড়া পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়েও ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন।
সমাজের জন্য ভাবনা
আপনার অবসর সময়টি কিন্তু সামাজিক কাজেও দিতে পারেন। দুঃস্থ শিশুদের পড়ানো বা তাঁদের আঁকা শেখানো, সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা, কোনও সেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এ ছাড়াও আপনার নিজের ভাল লাগা থাকলে, পত্রিকা প্রকাশ, নাটক ও সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন। পাড়ার পুজোর দায়িত্বও ভাগ করে নিতে পারেন।