পথে-ঘাটে, বাসে, মেট্রোয় মাথা দোলাতে দোলাতে আপনমনে হেঁটে যাচ্ছে এক ঝাঁকড়া চুলের কিশোর, কিংবা অফিসে পাশের ডেস্কে বসে গুনগুন করতে করতে কাজ করছে সহকর্মী— এমন দৃশ্য বিরল হয়ে গিয়েছে লকডাউনের সৌজন্যে। মাথায় কিংবা কানে লাগানো হেডফোন কখনও অবসরের নিত্যসঙ্গী, অনেক সময়ে কাজেরও। গত তিন মাসে মুঠোফোনের স্ক্রিনটাইমের পাশাপাশি বেড়ে গিয়েছে হেডফোনের ব্যবহারও। কখনও নিছকই গান শুনতে, কখনও ওয়েব সিরিজ় দেখার অবসরে। আবার বাড়ি থেকে কর্মরত আইটি কর্মী অথবা অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়া বাড়ির খুদে সদস্য... কাজ সহজ করতে হেডফোন দরকার হচ্ছে তাদেরও। এখন বাজারে এসে যাওয়া হেডফোনের হরেক রকম এক ক্লিকেই মুঠোয় আনা সম্ভব। কিন্তু কোন প্রয়োজনে কী ধরনের হেডফোন সুবিধাজনক, আপনার শ্রবণযন্ত্রটির পক্ষেও কোনটি বেশি আরামদায়ক, তা জেনে নিন।
হেডফোনের হরেকরকম
পোর্টেবিলিটির বিচারে করা শ্রেণিবিভাগে সাধারণত ওয়্যারড অর্থাৎ তারসমেত এবং ওয়্যারলেস অর্থাৎ তার ছাড়াই ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত, এই দু’ধরনের হেডফোন কিনতে পাওয়া যায়। ব্যবহারিক সুবিধার্থে ইদানীং দ্বিতীয় শ্রেণিটিই বেশি নজরে পড়ে। আবার যদি ভাগ করা যায় হেডফোনের সাইজ়, শেপ কিংবা পারফরম্যান্সের বিচারে, তা হলে ওভার-ইয়ার, ইন-ইয়ার, ইয়ার-ফিটিং ইত্যাদি নানা ধরনের হেডফোন রয়েছে।
• ফুল-সাইজ় বা ওভার-ইয়ার হেডফোন, অর্থাৎ কানের চারপাশটা ঢেকে রাখা ইয়ারপ্যাড যুক্ত হেডফোনই সবচেয়ে কমফর্টেবল এবং কানের পক্ষে আরামদায়ক। এতে বাইরের আওয়াজ তেমন ভাবে কানের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। তবে এর অসুবিধে একটাই, বেশ ভারী হওয়ায় বেশিক্ষণ মাথায় পরে থাকা কষ্টকর। রেকর্ডিংয়ের সময়ে বা কনসার্টে অনেক সময়ে এই ধরনের হেডফোন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
• অন-ইয়ার হেডফোনে ইয়ারপ্যাডগুলি কানের পুরো অংশ মুড়ে রাখে না, বরং কানটা চাপা দিয়ে রাখে। এই ধরনের হেডফোন অপেক্ষাকৃত হালকা, ফলে বেশিক্ষণ পরে থাকাও যায়। ইয়ারকাপের সাইজ় ছোট হওয়ায় বাইরের আওয়াজ প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি।
• ইয়ার-ফিটিং হেডফোনের মুখ কানের মুখে লাগানো, তবে ভিতরে প্রবেশ করে না। এতে বাইরের আওয়াজও কমবেশি প্রবেশ করে। কাজ করতে করতে কিংবা ড্রাইভ করার সময়ে এই হেডফোন ব্যবহার করা সুবিধাজনক, যাতে আশপাশ সম্পর্কেও সচেতন থাকা যায়।
• ইন-ইয়ার হেডফোনের মুখ প্রবেশ করে কানের গহ্বরের ভিতর পর্যন্ত। প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়ামের মতো শক্ত উপাদানে এর বহিরাবণ তৈরি, যাতে বাইরের কোনও আওয়াজ কানের ভিতরে না পৌঁছয়। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার কিংবা মিউজ়িশিয়ানরা এ ধরনের হেডফোন ব্যবহার করেন।
• এ ছাড়া মাইক্রোফোন সমেত হেডসেট পাওয়া যায়, সিঙ্গল ও ডাবল ইয়ারপিস সহ। মাইক্রোফোন অ্যাটাচড থাকে হেডসেটের একটি আর্মে। সাধারণত টেলি-কলার, থিয়েটার স্টুডিয়ো, অ্যাভিয়েশন বা অন্য যে কোনও ইন্টারকম সিস্টেমে, যেখানে ভয়েস চ্যাট প্রয়োজন, সেখানে এই হেডসেট কার্যকরী।
তারের ওপারে
ব্যবহারিক দিক থেকে এখন ব্লুটুথ হেডফোনের চাহিদা তুঙ্গে। ওয়্যারলেস ফুল সাইজ় হেডফোনও যেমন মেলে, তেমনই হ্যান্ডি ব্লুটুথ ইয়ারপডও। ট্রু ওয়্যারলেস ইয়ারপডে শুধু দুই কানের গর্তে লেগে থাকবে দু’টি বাড। আবার ইন-ইয়ার ওয়্যারলেসে তার নামবে শুধু কাঁধ পর্যন্ত। নানা ফিটিংয়ের ইয়ারবাড যুক্ত ইয়ারফোনও বেছে নিতে পারেন কমফর্ট অনুযায়ী।
গান হোক বা ছবির সংলাপ, কানের ভিতর দিয়া মরমে না পশিলে কি চলে?
কানে কানে
• সাউন্ড নিয়ে সিরিয়াস কাজের জন্য ফুল সাইজ় নয়েজ়-ফ্রি হেডফোনই উপযুক্ত
• টেলি-কমিউনিকেশনে কাজে লাগে মাইক সমেত হেডসেট
• ব্লুটুথ হেডফোনে চার্জ দ্রুত শেষ হতে পারে। তবে তারের ঝক্কি না থাকায় ক্যারি করা সুবিধেজনক। আবার চার্জ ফুরোনোর সম্ভাবনা এড়াতে ট্রাভেল করার সময়ে অনেকে ওয়্যারড হেডফোনই ব্যবহার করেন