যত্ন নেওয়ার পাঠ জানলে বাড়িতেও তাজা থাকবে এই ফুল।
লালচে ইট বার করা পুরনো বাড়িটির আলাদা করে নজর কাড়ার মতো তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু পাঁচিলের গা বেয়ে বাড়তে থাকা থোকা থোকা বুগেনভিলিয়াই একেবারে ভোল বদলে দিল গোটা বাড়ির। বুগেনভিলিয়ার রূপই এমন। লাল, আলতা-সিঁদুরে গোলাপি কিংবা সাদা বুগেনভিলিয়া ধরা দেয় আলাদা ভাবে। রাস্তার ধারে কিংবা কোনও বাড়ির পাঁচিলে বুগেনভিলিয়া বেড়ে ওঠে সহজেই। কিন্তু বাড়ির টবে পুঁততে গেলেই বাঁচে না বুগেনভিলিয়া— এমন ধারণা আছে অনেকের। তবে তা একেবারেই ঠিক নয়। কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে বাড়িতেও তরতরিয়ে বেড়ে উঠবে বুগেনভিলিয়া।
গাছের যত্নআত্তি
বুগেনভিলিয়ার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন আলো, মাটি, জল, সার। কেমন হবে সেগুলি?
আলো: বুগেনভিলিয়ার চাই ভাল আলো। অন্ততপক্ষে ছ’ঘণ্টা সূর্যের কড়া আলোয় এই গাছ রাখা জরুরি। শুধু আলো নয়, তাপও সহ্য করতে পারে বুগেনভিলিয়া। তাই ছাদ, বেশি রোদ-আলো ঢোকে এমন বারান্দায় রাখুন এই গাছ। যত আলোয় থাকবে বুগেনভিলিয়া, তত উজ্জ্বল রং ধরবে তার গায়ে।
মাটি: দোআঁশ মাটির সঙ্গে শুকনো চা পাতা, পাতা পচা, শিং কুচি, রক্তসার একসঙ্গে মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। তার পরে হাত দিয়ে ঝুরো ঝুরো করে সেই মাটিতে বসাতে পারেন গাছ।
জল: যেহেতু বুগেনভিলিয়া রোদে থাকে, তাই মাটিও শুকিয়ে যায় তাড়াতাড়ি। গরমকালে প্রত্যেক দিন জল দেওয়া প্রয়োজন। তবে জল যেমন গাছের গোড়ায় দাঁড়াবে না, তেমনই পুরো জল আবার বেরিয়েও যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, মাটি যেন জল শোষণ করে এবং একেবারে ভিজে ভিজে না থাকে। শীতকালে এক দিন অন্তর দেওয়া যেতে পারে জল।
সার: একটি টবে মাসে এক বার এক টেবিল চামচ সরষের খোল দিলেই চলে। আলাদা করে অন্য কোনও সারের দরকার নেই। তবে দু’-তিন সপ্তাহ অন্তর মাটি সামান্য খুঁচিয়ে দিলে ভাল হয়।
প্রপ্যাগেশন
হাট থেকে অনেক সময়েই বুগেনভিলিয়ার চারা কিনে এনে ঠকে যান কেউ কেউ। অনেক ক্ষেত্রে চারাগাছের বদলে শুধু মাত্র ডাল কেটে মাটিতে পুঁতেও বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে বাড়িতে ফিরে দেখা যায়, রি-পটিং করার পরেও গাছ বাঁচে না। একটি একটি করে পাতা ঝরে গিয়ে শূন্য ডাল পরে থাকে। তবে ভগ্ন মনোরথ না হয়ে ধৈর্য ধরা দরকার। এ রকম অবস্থাতেও গাছ শিকড় তৈরি করে ফের বেঁচে উঠতে পারে। তার জন্য আলো, মাটি, জল, সারের খেয়াল রাখতে হবে। আর সমস্ত পাতা ঝরে গেলে গাছের আগার দিক বেশ খানিকটা ছেঁটে দিতে হবে। নিয়মিত জল, আলো পেলে দেখা যাবে ধীর ধীরে কচি পাতা জন্মাচ্ছে। এমনকি ঋতু পরিবর্তনের সময়েও একই ভাবে ধৈর্য ধরে রাখতে হবে। ডাল কেটে ফের গাছ তৈরি করাকে বলে প্রপ্যাগেশন। এ ক্ষেত্রে সমস্ত পাতা ঝরে গেলেও প্রপ্যাগেশন পদ্ধতিতেই ফের জন্মাতে পারে গাছ।
এক টব, হরেক রং
গোলাপি, লাল, সাদা... নানা ধরনের রঙের জন্য আলাদা আলাদা টবে পুঁততে পারেন বুগেনভিলিয়া। চাইলে একটি বড় টবেও দু’টি বাই-কালারের গাছ বসাতে পারেন। এতে আসবে নতুনত্ব।
ফুল কিন্তু ফুল নয়
বুগেনভিলিয়ার ফুল বলতে যে লাল, গোলাপি, সাদা রং দেখি... তা কিন্তু আদতে ফুল নয়। সেগুলি আসলে হল ব্র্যাক্ট। পাতাগুচ্ছের রংই বদলে অমন রঙিন দেখায়। তার মাঝে থাকে ছোট্ট ছোট্ট ফুল।
কৃত্রিম রঙে নয়, বারান্দা বা বাইরের দেওয়াল ভরাতে পারেন রঙিন বুগেনভিলিয়ায়। তার জন্য দরকার শুধু ধৈর্য আর স্নেহ।