শেষ থেকে শুরু

একটা বছর প্রায় শেষ। নতুন বছর শুরু হতে চলেছে। এই সন্ধিক্ষণটা খুব সুন্দর, যদি তা উপভোগ করা যায় মনের মতো করে। বর্ষপূর্তি না হয় কাটুক একটু অন্য ছন্দে...সেই শীতই ঘুরে আসে প্রত্যেক বছর... দেখতে দেখতে বছর ঘুরে শুরু হয় নতুন বছর। এ বারটা না হয় সাজানো থাক ভালবাসার ওমে।

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৪
Share:

কিছু লিখতে বসলেই ছোটবেলাটা হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে চোখের সামনে। তখন অবশ্য ক্রিসমাস আর বর্ষপূর্তির এত আড়ম্বর ছিল না। ২৫ ডিসেম্বর মা-বাবার হাত ধরে চার্চ বা চিড়িয়াখানা আর বছরশেষের পিকনিক। শীত এলেই কেমন একটা সাজো সাজো রব উঠত। কাঁথা-কম্বল বেরোত খাটের তলার ট্রাঙ্ক থেকে, খেজুর রসের হাঁড়ি নামিয়ে দিয়ে যেতেন হারুকাকা, শীতের রোদে পিঠ বিছিয়ে, পা ছড়িয়ে, উলের গোলা লুটিয়ে সোয়েটার বুনতে বসতেন ঠাকুমা-দিদিমারা। রান্নাঘরে নতুন চাল আর নতুন গুড় নিয়ে চলত গবেষণা। কারও হেঁশেলে নকশি পিঠে, কোথাও মুগ পাকন, পাটিসাপটা, দুধপুলি... বন্ধুরা টিফিন বাক্সে ভরে জড়ো হতাম পাড়ার গোলদিঘির মাঠে। সেই শীতই ঘুরে আসে প্রত্যেক বছর... দেখতে দেখতে বছর ঘুরে শুরু হয় নতুন বছর। এ বারটা না হয় সাজানো থাক ভালবাসার ওমে। যাতে একটু অন্য ভাবে এই বছর শেষ করে পা রাখতে পারি নতুন বছরে...

Advertisement

সঙ্গসুধা

Advertisement

‘খেয়েছিস তো? অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছিস?’ সারা দিনে কত ফোন আসে মা-বাবার কাছ থেকে। এ দিকে সে খেয়েছে কি না বা তার কোনও দরকার আছে কি না, তা জানা হয় না। কখনও হয়তো কাজের চাপে সেই কলগুলি জমা হতে থাকে মিস্ড কল লিস্টে। ছোটবেলায় মায়ের প্রিয় বন্ধুর কোলে করে ঘুরে বেড়ালেও বড় হওয়ার পরে হয়তো তাঁর আর খোঁজ নেওয়ার সময়ই হয়নি। বছরশেষে ওঁদের সঙ্গে একটা দিন কাটাতে পারেন। মাকে না জানিয়েই তাঁর প্রিয় বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করতে পারেন। খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব না হয় নিজের কাঁধেই থাকুক। রান্না করতে না চাইলে ওঁদের পছন্দের পদ অর্ডার করতে পারেন। দেখবেন, মা তো খুশি হবেনই, নিজেরও ভাল লাগবে। একই ভাবে, মা-বাবা উভয়েই ওয়র্কিং হলে, সারা দিন বাড়ির খুদেটি একাই থাকে। তার জন্য সময় বার করুন। সে দিন কাটুক তার মতো করে। একটা ফুটবল নিয়েই না হয় ওর সঙ্গে খেলতে নেমে যান বাড়ির বাগানে। ডেকে নিন ওর বন্ধুদেরও।

পিঠেবিলাস

ব্যস্ত জীবনে পিঠে তৈরি ও খাওয়া সত্যিই বিলাসিতা। একা হাতে পিঠে বানানোও অনেক ঝােমলার। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিঠে-পার্টি করতে পারেন। পাটিসাপটা, সরুচাকলি, গোলাপ পিঠে, মুগের পুলি... কে পুর বানাবে, কে রস তৈরি করবে, কে ভাজবে... নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিতে পারেন। নতুন ধরনের হাউসপার্টিতে ইনভল্ভ করতে পারেন বাচ্চাদেরও।

পটারিতে এক দিন

কলকাতার আশপাশে বা শহরতলিতে অনেক পটারি আছে। টুক করে পটারি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। হাতে করে মাটির পাত্র বানানোর আনন্দই আলাদা। কিছু পাত্র বানিয়ে নিয়ে আসতে পারেন বাড়ি সাজানোর জন্য। আবার বন্ধুবান্ধবকে উপহার দেওয়ার জন্যও খুব ভাল অপশন।

পটলাক পার্টি

ঘরোয়া পিকনিক বলাই যেতে পারে। বন্ধুবান্ধব মিলেই রান্না করে নিয়ে একজনের বাড়িতে জড়ো হন। তবে পটলাকের নিয়ম হল, আগে থেকে বলা যাবে না, কে কী খাবার আনছেন। তাই সকলেই যদি একই খাবার আনেন, তা হলে একই পদে সারতে হবে এই পার্টি। সেটাই হল পটলাকের মজা। সঙ্গে রাখতে পারেন বারবিকিউ। তা হলে অন্তত কিছু মেনু আগে থেকে জানা থাকবে।

টুক করে টুর

দু’দিনের ছুটি থাকলে এক দিন ঘুরে আসতে পারেন কাছেপিঠের ছোট ছোট গ্রাম থেকে। হুগলি জেলার আঁইয়া পঞ্চায়েতের গাংপুর গ্রামে চলে যেতে পারেন। এই গ্রামে প্রায় চল্লিশটি বাড়িরই ঘুম ভাঙে দুধের জ্বালে। গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই রয়েছে মাটির উনুন। সেই উনুনে ঢিমে আঁচে দুধ জাল দিয়ে চলে রাবড়ি তৈরি। এই রাবড়ি গ্রাম রাখতে পারেন লিস্টিতে। আছে মেদিনীপুরের শিল্পগ্রাম নয়া। কলকাতা থেকে দু’ঘণ্টার রাস্তা। সারা দিন এখানে চলে পটচিত্র আঁকা। গান গাইতে গাইতেই শিল্পীরা জামায়, ওড়নায় তুলে আনেন কত নকশা। প্রাকৃতিক উপাদান জাল দিয়ে রং তৈরি করে, তা দিয়ে এই পটচিত্র তৈরি দেখতেও বেশ ভাল লাগবে। আছে হুগলির দশঘড়া গ্রাম, যার আনাচকানাচে ছড়িয়ে পুরনো দিনের জমিদারি মেজাজ, নাটমন্দির, সিংহদুয়ার। গন্তব্য স্থির না থাকলেও বেরিয়ে পড়ুন অজানার উদ্দেশে।

সিক্রেট সান্তা

সকলেই তার জীবনে একজন সান্তা ক্লজ় চায়। কিন্তু অন্য কারও জীবনে যদি একবার সান্তা হওয়ার সুযোগ আসে! এই মরসুমে সেটাই করতে পারেন। এক দিন সান্তা সেজে চলে যেতে পারেন কোনও অরফ্যানেজ বা ওল্ড-এজ হোমে। সেখানে আপনিও ছড়িয়ে দিতে পারেন খুশির হাওয়া। দেখবেন, ফেরার পথে আপনার ঝুলিই ভরে উঠবে অমূল্য প্রাপ্তির আনন্দে।

খেলার ছলে

এ বার বেশ জাঁকিয়েই শীত পড়েছে। আর শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন কোর্টের মতো প্রেম পর্যায় আর কী-ই বা হতে পারে! নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের নীচে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে পারেন। শীতে উষ্ণ পরশ তো পাবেনই। সঙ্গে একটু গা-ও ঘামাতে পারবেন। মেদ ঝরুক না ঝরুক, নিজের ফিটনেসের পরীক্ষা হয়ে যাবে।

সাজপাঠ

বেশি পরিশ্রমে যেতে না চাইলে সোজা চলে যেতে পারেন একটি ভাল স্পায়ে। হোল বডি স্পা, ফেসিয়াল, হেড মাসাজ, হেয়ার স্পা করে যখন উঠবেন, দেখবেন পুরো নতুন ‘আমি’কে পেয়ে গিয়েছেন। ক্লান্তি ঝরিয়ে বরং নতুন বছর শুরু করুন নতুন উদ্যমে।

বৃক্ষরোপণ

লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, গাছ লাগান। পরিবেশ বাঁচাতে বন্ধুবান্ধবের হাত ধরে বৃক্ষরোপণ উৎসবের আয়োজন করতে পারেন। ফুল-ফলের গাছের চারা পেয়ে যাবেন স্থানীয় নার্সারিতে। কিছু ক্লাব থেকে গাছের চারা বিতরণও করা হয়। তাই এর জন্য খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে না। শুধু চারা গার্ড করতে খাঁচার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে তারা হেসেখেলে বাড়তে পারে।

বাঙালির বর্ষবরণ যদিও বা হয় পয়লা বৈশাখে, তবুও সারা বিশ্বের সঙ্গে এ সময়েও উৎসবে গা ভাসাতে মন্দ লাগে না। এ বার নতুন বছর না হয় আসুক কেক বেকিং, পিঠের গন্ধে, কাঁথার ফোঁড়ে আর উলের গোলায়।

মডেল: সুস্মেলী দত্ত, মোনালিসা পাহাড়ি, হিয়া মুখোপাধ্যায়,

নয়নিকা সরকার, অলিভিয়া সরকার, রাইমা গুপ্ত, দীপ্তার্ক সেনগুপ্ত

ছবি: জয়দীপ মণ্ডল, দেবর্ষি সরকার (নয়নিকা), অমিত দাস (অলিভিয়া); মেকআপ: চয়ন রায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement