medicine

ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক খান? ‘সুপারবাগস’ বিপদ ডাকছে অজান্তেই

চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সতর্ক না হলে এমন একটা সময় আসবে যখন অধিকাংশ সুপারবাগের সঙ্গে লড়ার মতো কোনও ওষুধই পাওয়া যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:০৪
Share:

মেদ তো বাড়েই, সঙ্গে প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে।

পেটের গোলমাল হোক বা দিন কয়েকের জ্বর, ওষুধ তো জানাই আছে! নিজের জানা একটা অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করলেই ল্যাঠা চুকল!

Advertisement

সামান্য সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ভুলতেই বসি আমরা। ঘরের চেনা ওষুধেই কাজ সারি। কাজ হয়ও। অন্যান্য বার যে অ্যান্টিবায়োটিকে কমেছিল অসুখ, সে সবেই ভরে নিই মুঠো। খাওয়ার নিয়মকানুনও জানা থাকে। তাই অসুবিধা হয় না।

কিন্তু অসুবিধা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, এই প্রবণতাই ঠেলে দিচ্ছে অসুখের দিকে। গবেষণার পর শিউরে উঠেছেন বিজ্ঞানীরাও। জগৎ জুড়ে সচেতনতার ডাক ইতিমধ্যেই দিয়েছেন অনেক চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সংগঠন।

Advertisement

আরও পড়ুন: কথায় কথায় স্ট্রেচিং করেন? বিপদ ডাকছেন অজান্তেই

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘এই অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে মেদ তো বাড়ছেই, তার সঙ্গে শরীরে সুপারবাগসের উপস্থিতি সমস্যায় ফেলছে রোগী ও চিকিৎসককে। যখন-তখন ইচ্ছে মতো অ্যান্টিবায়োটিক নিতে নিতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ (এএমআর)। এটাই ডেকে আনছে আগামী দিনের গুরুতর বিপদ।

সুপারবাগস কী?

ঘন ঘন কোনও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে শরীর নিজের মধ্যেই সেই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ তৈরি করে। ফলে দিনের পর দিন সেই ওষুধ নেওয়ার ফলে একটা সময়ের পর তা আর শরীরে কাজ করে না। কারণ শরীরে উপস্থিত ব্যাকটিরিয়া ওষুধের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে তত দিনে, হয়ে উঠেছে আরও শক্তিশালী। অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন সেই জীবাণুদেরই চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘সুপারবাগস’।

চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সতর্ক না হলে এমন একটা সময় আসবে যখন অধিকাংশ সুপারবাগের সঙ্গে লড়ার মতো কোনও ওষুধই পাওয়া যাবে না। ফলে বহু রোগের চিকিৎসা মিলবে না।

এএমআর-এর ক্ষতির নিরিখে বিশ্বের প্রথম পাঁচের মধ্যে রয়েছে ভারত। ‘হু’-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, এ দেশে পাঁচ বছরের নীচের শিশুদের মৃত্যুর ২৫ শতাংশ ঘটছে নিউমোনিয়া থেকে। যা সারানো যাচ্ছে না এএমআর-এর কারণেই।

আরও পড়ুন: ডায়েটে নেই রাঙা আলু? হাতছাড়া করছেন মেদ ঝরানোর অন্যতম সেরা উপায়

শরীরে সুপারবাগসের উপস্থিতি সমস্যায় ফেলছে রোগী ও চিকিৎসককে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শঙ্কর দাসের মতে, ‘‘এমন অবস্থা যে সাধারণ ভাইরাল ফিভারও সারছে না সহজে। কিছু অসুখের চিকিৎসা করতে গেলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা করতে হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে বাতিল অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।’’

অ্যান্টিবায়োটিক ও ফ্যাট

ফ্যাট, খিদে এ সব সামলায় ঘ্রেনিল নামের হরমোন। শরীরের ভাল কিছু জীবাণুর উপস্থিতিতে এর কাজকর্মের গতি বাড়ে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের ঘন ঘন ব্যবহার এই ভাল জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলে। ফলে ওজন বাড়ে। এদের মৃত্যুতে পাকস্থলীতে ইস্ট সংক্রমণ বেড়ে শরীরে জল যেমন জমে, তেমনই থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট করে।

কাজেই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হল, কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে ভাল খাওয়া–দাওয়া করে, পরিমিত ব্যায়াম করে ও নিয়ম মেনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান৷ তাতে রোগ যেমন কম হবে, বশে থাকবে ওজনও৷

তা হলে উপায়

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক একেবারেই চলবে না। প্রাকৃতিক উপায়ে খাওয়াদাওয়ার প্রতি নজর দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। খাওয়ার অনিয়ম হলে অপুষ্টি ঠেকাতে ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শ নিন। শরীরচর্চায় মন দিন। ক্যালোরি ঝড়াতে ও অসুখ ঠেকাতে এর কোনও তুলনা নেই৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement