শরীরে চর্বি জমলে কিছু দিন জোরদার হাঁটাহাঁটি, ডায়েট মেনে খাওয়াদাওয়া আর পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে কিছুটা মেদ কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন অনেকেই। এতে শরীরের সার্বিক ওজন কমলেও পেটের মেদ সব সময় এতে কব্জায় আসে না। এমনিতেই ভুঁড়ি কমাতে সময় ও পরিশ্রম দুই-ই বেশি লাগে।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সুকোমল সেনের মতে, ‘‘পেটের মেদ সহজ নিয়মে কমতে চায় না। তার জন্য দরকার পড়ে ধৈর্য ও শারীরিক কিছু কসরতেরও। সারা দিন কাজের ফাঁকেও কিছু কৌশলের শরণ নিতে হয়। তবেই পেটের মেদ কমতে শুরু করে। কিছু বিশেষ ব্যায়াম ও কসরত এর জন্য জরুরি।’’ কেমন সে সব?
ম্যাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে হাত দুটো দু’পাশে ছড়িয়ে দিন। এ বার ধীরে ধীরে দুই পা একসঙ্গে জুড়ে উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। কোনও ভাবেই হাঁটু ভাঁজ করবেন না। শরীরচর্চায় অভ্যাস না থাকলে প্রথমেই অনেকটা পা উঠবে না, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পদ্ধতি নিখুঁত করার চেষ্টা করুন।
এই ব্যায়ামে পেটের পশিতে চাপ পড়ে, ফলে জমে যাওয়া মেদ নরম হয় ও গলে যায়। ৫ বার এই ব্যায়াম করলে একটি সেট সম্পূর্ণ হয়। প্রতি দিন তিনটি করে সেট অভ্যাস করুন।
এই ব্যায়ামের পরেই অভ্যাস করুন আর একটি কসরত। সোজা হয়ে শুয়ে হাত দুটো মাথার পিছনে নিন। এ বার ধীরে ধীরে ঘাড় ও মাথা তুলে সামনের দিকে ঝোঁকান। এর সঙ্গে পা দুটো ভাঁজ করে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন। মনে মনে দশ গুনুন। ঘাড় তোলা অবস্থাতেই পা সোজা করুন। আবার ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন।
প্রতি বার পা ভাঁজ করা ও সোজা করার প্রক্রিয়াটি ধরলে ব্যায়ামটি সম্পূর্ণ এক বার করা হয়। প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এটি বার পাঁচেক করুন। এতে একটা সেট হয়। প্রতি দিন দুটো করে সেট অভ্যাস করুন প্রথম প্রথম। আয়ত্তে এসে গেলে তিনটি করে সেট করুন।
পেটের মেদ কমাতে খুব কার্যকর প্লাঙ্ক ও সাইড প্লাঙ্ক। প্লাঙ্কের জন্য উপুর হয়ে শুয়ে হাতের তালু ও পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোটা শরীরটাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিন। এই অবস্থায় পেটকে টেন ধরে থাকুন ভিতরে। প্রথম দিকে দশ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুন।
পেটের পেশিতে টান পড়ায় এই ব্যায়ামে ভুঁড়ি কমবেই, পেট ভিতরে টেনে রাখলে ফলাফল আরও ভাল পাবেন। প্রতি তিনটে প্লাঙ্কে একটা করে সেট হয়। চেষ্টা করুন তিনটে সেট অভ্যাস করতে।
প্লাঙ্কের চেয়ে আর একটু কঠিন সাইড প্লাঙ্ক। কোমর ও পেটের মেদ ঝরাতে খুবই কার্যকরী এটি। পাশ ফিরে শুয়ে পড়ুন প্রথমেই। এ বার এক হাতের তালু ও এক পায়ের আঙুলগুলোর উপর ভর দিয়ে শরীরকে উপরের দিতে তোলার চেষ্টা করুন। মনে মনে দশ গুনে ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুন।
কোমরকে টোনড রাখতে ও ভুঁড়ি কমাতে যেমন কাজে আসে, তেমনই হজমশক্তি বাড়াতেও এই সাইড প্লাঙ্ক খুবই কার্যকর। প্রতি তিনটেয় এক সেট সম্পূর্ণ হবে। প্লাঙ্কের মতোই এটিও তিন সেট করার চেষ্টা করুন। তবে প্রথম দিকে দুটি সেটই যথেষ্ট।
পেটের মেদ কমাতে প্লাঙ্কের মতোই আর এক উপকারী ব্যায়াম লেগ কিক। উপুর হয়ে শুয়ে দুই পা ভাঁজ করে পিঠের কাছে আনুন। এ বার দুই হাত দিয়ে পায়ের পাতা ছোঁওয়ার চেষ্টা করুন। এই সময় বুক থেকে মাথা ম্যাট ছেড়ে উপরের দিকে উঠবে। দশ সেকেন্ড ধরে রেখে শরীর স্বাভাবিক করুন।
প্রতি পাঁচ বারে একটা করে সেট হয়। দিনে দু’টি সেটই যথেষ্ট। এ ছাড়া প্রতি দিনই নানা কাজের ফাঁকে পেটকে মাঝে মাঝেই ভিতরের দিকে টেনে ধরে থাকুন। শ্বাস স্বাভাবিক রেখে ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরুন। পেটের পেশিতে চাপ দিয়ে মেদ কমাতে এই কৌশল কার্যকর। কাজের মধ্যে থেকেও নানা সময়ে করতে পারেন এমন।