সচেতনতাই জন্ডিস তাড়ানোর প্রাথমিক ধাপ। ছবি: শাটারস্টক।
জন্ডিস আতঙ্ক কলকাতায়। বাঘাযতীন, যাদবপুর, গল্ফগ্রিন মিলিয়ে নানা এলাকাতেই এই গরমে হেপাটাইটিস হানা শঙ্কায় রেখেছে শহরবাসীদের। ইতিমধ্যেই আক্রান্ত এলাকা থেকে জলের নমুনাসংগ্রহ করেছে কলকাতা পুরসভা।সেই নমুনা থেকে জন্ডিসের ভাইরাসও মিলছে।
এমনিতেইগরম শুরু হতেই নানা রকম হজমজনিত সমস্যা, পেটের অসুখের আক্রমণ শুরু হয়। এ বার মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এসে হাজির হয়েছে জন্ডিস। চিকিৎসকদের মতে, মূলত খাদ্য ও জল থেকেই এই রোগের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। আবার আক্রান্তের রক্ত-সহ যে কোনও দেহরস থেকেও এই অসুখ ছড়াতে পারে। তাই সতর্ক হওয়াই প্রাথমিক চিকিৎসা।
এই প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘রক্তে হলুদ রঙের পিত্তরঞ্জক বিলিরুবিন বেড়ে গেলে তাকে জন্ডিস বলে ডেকে থাকি আমরা। আসলে জন্ডিস একটি অবস্থার নাম, অসুখটি মূলত হেপাটাইটিস। এর ভাইরাস সরাসরি লিভারকে আক্রমণ করে। এর লক্ষণও অনেক সময় খুব সহজে ধরা পড়ে না, বা জল বেশি করে খেলে সে সব লক্ষণ সরেও যায়।পরে যদিও তা ফিরে আসে। কিন্তু অবহেলা করলে অসুখ মারাত্মক আকার নিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ঠিক মতো বিশ্রাম ও চিকিৎসা না করালে মৃত্যুও হতে পারে এর থেকে।’’
আরও পড়ুন: নাক ডাকার সমস্যায় জেরবার? এ সব উপায়ে মিলবে মুক্তি
রাস্তার খাবার, ফলের রস ও জল এড়িয়ে চলুন।
তাই উপশমের উপায় ছাড়াও কোন কোন লক্ষণ দেখলে হেপাটাইটিস বাসা বেঁধেছে তা জেনে রাখাও দরকার। এই প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন,
এই অসুখে প্রথমেই লক্ষ্য রাখুন প্রস্রাবের রঙের দিকে। হলুদ প্রস্রাব ক্রমাগত হতে থাকলে রক্তপরীক্ষা করান। চোখ, গায়ের চামড়া ইত্যাদিও হলুদ হতে থাকে। তাই সতর্ক থাকুন। অন্যতম লক্ষণ মল ও মূত্রের রঙের অদলবদল ঘটা। সাধারণত সাদাটে মল ও হলদেটে মূত্র হলেই ধরে নিতে হয় হেপাটাইটিসের আক্রমণ শুরু হয়েছে। খিদে চলে যাওয়া,সঙ্গে মুখের স্বাদ চলে যাওয়ার এর অন্যতম লক্ষণ। অনেকেই এই সময় মাছ-মাংসের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। তেমনটা মনে হলেও এক বার রক্ত পরীক্ষা করান।
জন্ডিস এড়াতে গেলও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কেমন তা? পরামর্শ দিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তনুজ সরকার।
আরও পড়ুন: সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ার দূষণ থেকে বাঁচার অঙ্গীকার করুন
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
প্রথমেই পানীয় জল নিয়ে সচেতন হোন। রাস্তার জল এড়িয়ে চলুন। একান্তই তা খেতে বাধ্য হলে সঙ্গে রাখুন জিওলিনের মতো জীবাণুনাশক। খাবার বানাতেও জলের সাহায্য আবশ্যিক। তাই রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন। বাড়ির খাবার যে জলে বানাচ্ছেন, তাকতটা স্বাস্থ্যকর বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে সে দিকে কড়া নজর থাক। রাস্তার কাটা ফল, ঘোল, শরবত সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন। হেপাটাইটিস আক্রান্ত অঞ্চলে বাস করলে জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খান। জল পরিশোধক ব্যবহার করলে তা প্রতি দিন পরিষ্কার করুন। তেল-মশলার খাবারএড়িয়ে চলুন, এতে লিভারের উপর চাপ কম পড়বে। পেঁপে, সবুজ শাকসব্জি, ফল (ফলের রস নয়) রাখুন খাদ্যতালিকায়। আক্রান্ত রোগীর রক্ত থেকেও শরীরে সংক্রমণ ঘটতে পারে এই অসুখ। তাই ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ব্যবহারে সতর্ক হোন, মশার হাত থেকেও বাঁচুন।