ইঁদুরদৌড়ের জীবনে কিছুটা আলস্য ও কিছুটা সময়ের অভাবেই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খুঁটিনাটি নজর রাখা হয়ে ওঠে না। সারা দিন খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, কাজের চাপে হাতের কাছে পেলে যা হোক কিছু খেয়ে ফেলা, রাস্তার ফাস্টফুডে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভরসা রাখা, এ সবই ডেকে আনে গ্যাস্ট্রাইটিস বা অম্বল।
নিত্য এই ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে অনেকেই নিয়মিত হজমের ওষুধ খান। বুক জ্বালা, চোঁয়া ঢেকুর এতে পুরোপুরি না কমলেও রোগী ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এক সময় ওষুধ না খাওয়া পর্য়ন্ত তিনি মনে মনেও নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। তবে কেবল খাওয়া দাওয়াই নয়, ঘুম, কায়িক শ্রম সবই হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে।
বহু মানুষকেই নিয়মিত হজমের ওষুধ খেতে হয়। কেউ বা ঘরোয়া উপায়ে তা কমাতে উদ্যোগী হন। বুক জ্বালা, চোঁয়া ঢেকুর এ সবের সমস্যা তাতেও পুরোপুরি কাটে না। তাই কেবল ওষুধে ভরসা না করে রোজের খাবারে রাখুন কিছু উপাদান, এতেই আরাম পাবেন, কাটবে অম্বলের সমস্যা। ঘরোয়া উপায়েই মোকাবিলা করতে পারবেন বদহজমের। কী কী সে সব?
ক্যালশিয়াম শরীরের অম্ল শুষে নিতে অনেকটা সাহায্য করে। তাই গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় ঠান্ডা দুধ খান। গরম দুধ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। শরীরে সহ্য না হলে গরম দুধে গ্যাসের সমস্যা বাড়ায়। কিন্তু দুধ ঠান্ডা হলে সেই সমস্যা তো থাকেই না, উল্টে গ্যাস্ট্রাইটিসের ব্যথাও অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে।
দুধের মতোই পটাশিয়ামের সাহায্যে গ্যাস-অম্বল কমাতে পারে কলা। প্রতি দিন ফ্রুট সালাডে রাখুন কলাকে। ব্রেকফাস্টেও রাখতে পারেন কলা।
ডাবের জল পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের অন্যতম প্রাকৃতিক খনি। তাই গ্যাস অম্বলের সমস্যা কাটাতে ডাবের জল হতে পারে ভাল বিকল্প। চিকিৎসকদের মতে, প্রতি দিন একটা সকালে বা দুপুরে খাওয়ার পর একটা ডাবের জল খেলে এর ক্ষারীয় ভাব হজম সমস্যাকে যেমন দূরে রাখে, তেমনই পেট ঠান্ডা হয়।
নিয়ত অম্বলের সমস্যা ভোগালে দু’চামচ জোয়ান সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন জলে। সকালে সেই জল ছেঁকে হালকা গরম করে খান। ক্রনিক গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যায় অন্যতম সেরা ঘরোয়া দাওয়াই। জোয়ান এমনিতেই হজমে সাহায্য করে। সারা রাত তার নির্যাস জলের সঙ্গে মিশে হজম প্রক্রিয়াকে সতেজ রাখে।
জোয়ানের সঙ্গে আদা কুচি মিশিয়েও রাখতে পারেন। আদা ফোটানো জল, আদার রস হজমে সাহায্য করে। তাই আদার সঙ্গে জোয়ান যোগ করলে ফল মেলে আরও ভাল। জোয়ান ও আদা কুচি সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেলে আরাম মেলে।
হজমের সমস্যাকে দূরে রাখে জিরে। শুকনো খোলায় জিরে ভেজে গুঁড়ো করে নিন। এ বার সেই জিরেগুঁড়ো গুলে নিন এক গ্লাস জলে। সেই পানীয় খেতে পারেন খাওয়াদাওয়ার পর। বাজারচলতি জলজিরা নয়, এমন ঘরোয়া উপায়েই রক্ষা পান অম্বলের হানা থেকে।
খাওয়াদাওয়ার পর মুখশুদ্ধি হিসেবে মৌরি খান অনেকেই। কেবল মশলার ঘ্রাণে মৌরি এগিয়ে এমনই নয়, গ্যাসের সমস্যা সমাধানেও এই মশলা বিশেষ কার্যকর। সারা রাত মৌরি ভিজিয়ে রাখুন জলে। খাওয়াদাওয়ার মিনিট দশেক পর সেই জল ছেঁকে খান।
দু’-তিনটে লবঙ্গ চিবিয়ে খান। প্রতি দিন খাওয়াদাওয়ার পর এই অভ্যাস গ্যাস-অম্বলের সমস্যার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। লবঙ্গর রসের প্রভাবে শরীরে হাইড্রক্লোরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ে। ফলে সমস্যা মেটে অনেকটাই।
এক কাপ জলে আধ চামচ দারচিনি গুঁড়ো যোগ করুন। সেই জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খান। দারচিনির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গ্যাস-অম্বলকে দূরে রাখে।