যাঁদের কিছু ক্রনিক অসুখ রয়েছে, তাঁরা শীতে সাবধান।
কিছু প্রাণী শীতকালটা ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়। এমন শীতঘুমের ব্যবস্থা আমাদের জন্য থাকলে মন্দ হত না! কারও কাছে শীত মানে রোগব্যাধি, কারও কাছে আলস্য, কারও কাছে আবার ফুরফুরে মেজাজ। তবে যাঁদের কিছু ক্রনিক অসুখ রয়েছে, তাঁরা শীতে সাবধান। বছরের এই সময়েই কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ে। তা ছাড়া সর্দি-কাশির সমস্যা তো গোটা শীতকালই নাছোড়বান্দা।
সবটাই তাপমাত্রার তারতম্যে
শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, জয়েন্ট পেন, সাইনাসাইটিস, নার্ভের সমস্যা শীতকালে বাড়ে। সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নির্দেশ মতো চলতে হবে। সচেতন হলেও সামলানো যায় রোগের প্রকোপ। তবে এই রোগগুলি বাড়ার প্রধান কারণ তাপমাত্রার বদল।
• অ্যাজ়মার প্রকোপ এ সময়ে বেড়ে যায়। তাপমাত্রা এবং বাতাসের ধূলিকণা দু’য়েরই তফাত হয় শীতকালে। ঘুম থেকে উঠেই হাঁচতে শুরু করে দেন কেউ কেউ। অনেকের যেমন বাক্সবন্দি লেপ-কম্বল, বইয়ের সংস্পর্শে হাঁচি শুরু হয়ে যায়। সবটাই হয় অ্যালার্জি থেকে। এ ধরনের অ্যালার্জি থেকে রেহাই পেতে ইনহেলার নেওয়া উচিত। ওরাল মেডিসিনও আছে, কিন্তু তাতে বেশি পরিমাণ ড্রাগ শরীরে যায়। ইনহেলার নিলে কম পরিমাণ ড্রাগ সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে। ইনহেলারের ব্যবহার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ঝকঝকে ও নীরোগ ত্বক চাই? পার্লার নয়, ভরসা রাখুন রান্নাঘরের এ সব সামগ্রীতে
• জয়েন্ট পেন আর একটি সমস্যা, যা এ সময়ে মাথাচাড়া দেয়। রিউমাটয়েড এবং অস্টিয়ো দু’রকমের আর্থ্রাইটিস নিয়েই শীতে নাকাল হন মানুষ। তাপমাত্রা কমার ফলেই ব্যথা-যন্ত্রণা বাড়ে। এই যন্ত্রণার ক্ষেত্রে দু’টি জিনিস মাথায় রাখতে হবে। এক, গরম সেঁক বা হট ওয়াটার ব্যাগ দেওয়া যাবে না। বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকরা এই পদ্ধতি নাকচ করে দিয়েছেন। এতে সাময়িক আরাম হলেও আসলে সমস্যা বেড়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে— এ ক্ষেত্রে গরম সেঁক চলতে পারে। কিন্তু জয়েন্ট পেনের ক্ষেত্রে নয়।
এক নজরে
• ঠান্ডায় জয়েন্ট পেন বাড়ে। তবে ভুলেও সেখানে গরম সেঁক দেবেন না
• গরমে নয়, শীতেও ডিহাইড্রেশন হয়। পরিমাণ মতো জল খেতে হবে। নয়তো মাসল ক্র্যাম্পের সম্ভাবনা থেকে যায়
দুই, জয়েন্ট পেন হলেই অনেকে মনে করেন ক্যালশিয়াম কমে গিয়ে এটা হচ্ছে। তখন তাঁরা বাজারচলতি ক্যালশিয়াম কিনে খেতে শুরু করে দেন। অতিরিক্ত ক্যালশিয়াম বা ভিটামিন-ডি শরীরের জন্য খারাপ। হার্টের সমস্যা হতে পারে। অনেক দিন ধরে ব্যথা চললে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভিটামিন-ডি বা ক্যালশিয়াম কমেছে কি না জানার জন্য রক্তপরীক্ষা ছাড়াও বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করাতে হতে পারে।
• শীতকালে অনেকে মাথার যন্ত্রণায় ভোগেন। মাথার কোন অংশে ব্যথা হচ্ছে, সেটা খেয়াল করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে যদি মাথার পিছন দিকে ব্যথা হয়, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সাধারণ মাইগ্রেনে চায়ের বদলে কফি খেতে পারেন। ক্যাফেইন মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে।
• ঠান্ডায় পায়ের পেশিতে হঠাৎ করে টান ধরে যায়। শীতেও ডিহাইড্রেশন হয়। কম জল খাওয়ার জন্যই মূলত ক্র্যাম্প ধরে। এ ছাড়া শরীরে খনিজ পদার্থের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে টান ধরার সমস্যা হয়।
শীত মানেই সর্দি-কাশি
এটি ঠান্ডার সাধারণ সমস্যা। যাঁদের টনসিল, ফ্যারেঞ্জাইটিসের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা শীতের শুরু থেকেই ব্যবস্থা নিন। হালকা গরম জল খান, গলায় স্কার্ফ জড়ান এবং ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করবেন। এগুলি মেনে চললে শীতে ভাল থাকবেন।
• ঠান্ডা এবং দূষণের জন্য একবার কাশি হলে সহজে সারে না। আলাদা ধরনের কাশির জন্য আলাদা ওষুধ হয়। যেটা অধিকাংশ মানুষই জানেন না। ড্রাই, প্রোডাক্টিভ এবং টিনেশাস— সাধারণত এই তিন ধরনের কাশি দেখা যায়। প্রতিটিরই আলাদা ওষুধ।
সমস্যার পাশাপাশি শীতকালের কিছু ভাল দিকও আছে। এ সময়ে ভাইরাস জনিত অসুখ কম হয়। ডায়েটের জন্য শীত খুব ভাল সময়। প্রচুর টাটকা আনাজপাতি, শাক পাওয়া যায় এ সময়ে। পাশাপাশি ওয়র্কআউট করার জন্যও শীত উপযুক্ত। এতে সুস্থ থাকার পাশাপাশিই বাড়বে ফিটনেস।
তথ্য সহায়তা: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুবীর মণ্ডল