স্টেরয়েড মেশানো ক্রিমের যথেচ্ছ ব্যবহারে ক্ষতি হয় ত্বকের। ছবি: শাটারস্টক।
শক্তিশালী স্টেরয়েড, হাইড্রোকুইনোন নামে একটি ব্লিচ আর ট্রেটিনয়েন নামে একটি ওষুধ। অবৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতির জন্য এই তিনটি উপাদানই যথেষ্ট। অথচ দিনের পর দিন এই সব উপাদানে তৈরি ত্বককে উজ্জ্বল করা এককথায় ফর্সা করার ক্রিমের ব্যবহার এ দেশে হরবখত বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিজ্ঞাপনী চমকের প্রভাবে দাদ-হাজার মলমের ব্যবহার। আর তাতেই প্রমাদ গুনছেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
আদৌ কি এই সব ক্রিম মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়? ত্বকের সমস্যা সেরে যায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? ত্বক বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহিড়ীর মতে, ‘‘রোগ আদতে কী, শরীর কী ভাবে সেই অসুখের সঙ্গে লড়তে সক্ষম, কত দিন যাবত এই ওষুধ প্রয়োগে অসুখ সরবে, এ সব না জেনে অনুমানে প্রয়োগ করতে থাকলে অসুখ তো সারেই না উল্টে ত্বকের ক্ষতি হয়।’’
কেন ক্ষতি?
কারও জ্বর হলে কেন জ্বর তা না জেনেই যদি দিনের পর দিন নিজে নিজেই ওষুধের দোকান থেকে কোনও রকম বৈধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেউ ওষুধ খেতে থাকেন, তা হলে জ্বর কমলেও শরীর দানা বাঁধতে পারে আরও ভয়াবহ অসুখ। খাওয়ার ওষুধের যা নিয়ম, লাগানোর ওষুধের বেলাতেও তাই।
ফর্সা হওয়ার ক্রিমে যেমন স্টেরয়েড থাকে, তেমনই থাকে হাইড্রোকুইনোন নামে একটি ব্লিচ আর ট্রেটিনয়েন নামক একটি উপাদান। দাদ-হাজা কমানোর জন্য বাজারচলতি মলম আসলে অ্যান্টিবায়োটিক,অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্টেরয়েডের ভয়ঙ্কর ককটেল !
এই সবের ককটেলে বানানো ক্রিম কাজ করতেও শুরু করে দ্রুত। প্রদাহ কমে যাওয়ায় রোগী ভাবেন, যথার্থ ওষুধ বোধ হয়! এখানেই হয়ে যায় মস্ত ভুল। একটা সময়ের পর ব্যবহার করা এই সব ওষুধ শরীরের ভিতর উল্টো প্রতিক্রিয়া শুরু করে। ডেকে আনে অন্য অসুখ।
স্টেরয়েড কি চিকিৎসার শত্রু?
ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষের মতে, ‘‘একেবারেই তা নয়। তবে রোগীরা অপরিমিত হারে ও অবৈজ্ঞানিক ভাবে তা ব্যবহার করলে তাতে ক্ষতি হয় বইকি! কোনও কোনও ক্ষেত্রে অসুখের ধরন বুঝে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট একটি ডোজে চিকিৎসকরাও এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তবে তা নির্দিষ্ট সময় ও ডোজ বুঝে। অপরিমিত হারে ব্যবহার করলেই তা চরম ক্ষতি করবে ত্বকের।’’
কী কী ক্ষতি?
এই ধরনের স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম অকারণে মুখে মাখতে মাখতে পাতলা হয়ে যেতে পারে ত্বক, অতিরিক্ত সূর্য-সংবেদী হতে পারে ত্বক। বে ব্রণ ও অবাঞ্ছিত লোম। স্টেরয়েডের এই ভয়াবহ ব্যবহারের ফলে ‘টপিক্যাল স্টেরয়েড ড্যামেজড ফেস’ (TSDF) নামে অসুখও দেখা দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দাদা-হাজা কমানোর এই সব স্টেরয়েডের ওষুধের প্রভাবে একসময় বেড়ে যায় অসুখ।
তা হলে উপায়?
কৌশিক লাহিড়ীর মতে, ফর্সা হওয়ার উদগ্র বাসনা কমাতে ও মানুষকে সচেতন করতে সর্বস্তরে প্রচার যেমন প্রয়োজন, তেমন আমাদেরও সতর্ক হতে হবে। আসলে ত্বকের রং নির্ধারণ করা মেলানিন রঞ্জককে কোনও ভাবেই ক্রিম ঘষে বাড়ানো-কমানো যায় না। ওই সব ক্রিম কেবল ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে তোলে চামড়াকে সাদা দেখিয়ে। যা আদতে ক্ষতিকর। আর এই যুগে দাঁড়িয়ে ফর্সা-কালো এ সব ধারণা থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসা উচিত।
এই সচেতনতার অন্য আর একটি দিক উপযুক্ত চিকিৎসা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ ব্যবহার।
অন্য অসুখের জন্য কোনও নতুন ওষুধ ব্যবহার করলে সেটাও জানাতে হবে চর্মরোগের চিকিৎসককে।