prostate cancer

করোনা আতঙ্কে গোপন করছেন প্রস্টেটের সমস্যা? বাড়বে বিপদ

৬০ বছরের কাছাকাছি বয়সের পুরুষদের প্রস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত বলে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ১২:৩৭
Share:

ষাট পার হলেই বাড়ছে প্রস্টেটের ঝুঁকি। ছবি: ফাইল চিত্র

কোভিড-১৯ আতঙ্কে অবহেলায় বাড়ছে অন্য রোগের দাপট। এক দিকে অসুস্থ হয়ে রোগীর অবস্থা সঙ্গীন। অন্য দিকে, ক্রনিক রোগ ফেলে রাখলে আচমকা বিপদের আশঙ্কা। এ রকমই সমস্যা প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া। বয়স বাড়লে যেমন চুলের রং ফিকে হয়ে যায়, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় কিংবা ত্বকের টানটান ভাব শিথিল হতে শুরু করে। তেমনই ষাট পেরনো পুরুষের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই প্রস্টেট গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে সেটি বড় হতে শুরু করে। এর ফলে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীতে চাপ পড়ে। প্রস্রাবের সমস্যা শুরু হয়। এই অবস্থায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ না নিলে গুরুতর সমস্যা হতে পারে, জানালেন ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ।

Advertisement

একটি আখরোটের থেকে সামান্য বড় আকৃতির প্রস্টেট গ্রন্থি আদতে একটি মেল রিপ্রোডাক্টিভ গ্ল্যান্ড। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের প্রস্টেট গ্রন্থির ওজন ৭ থেকে ১৬ গ্রামের মধ্যে। ইউরিনারি ব্লাডারের ঠিক নীচে মূত্রনালীর চারপাশে থাকে এই গ্রন্থিটি। এর প্রধান কাজ প্রস্টেটিক ফ্লুইড তৈরি করা। ঘন সাদাটে এই ফ্লুইডটি স্পার্ম বা শুক্রাণু বহন করতে সাহায্য করে। সিমেনের ৩০ শতাংশ প্রস্টেটিক ফ্লুইড। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে বলে জানান অমিতবাবু। কাজ কমে যায় বলে গ্রন্থিটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। প্রথমে গ্ল্যান্ডুলার এলিমেন্টস ও ক্রমশ গ্র্যান্ডুলার নডিউলগুলি বড় হয়। প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি মূত্রথলির ঠিক নীচে থাকে বলে ব্লাডার আউটলেট অবস্ট্রাকশন শুরু হয়। অন্য দিকে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড ইউরেথ্রা অর্থাৎ মূত্রনালির চারপাশে ঘিরে থাকায় লোয়ার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সিম্পটম্পস দেখা দেয়।

অনেক সময় ম্যালিগন্যান্সি অর্থাৎ ক্যানসারের জন্যেও প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যেতে পারে বলে জানান অমিত ঘোষ। তাই ৬০ বছরের কাছাকাছি বয়সের পুরুষদের প্রস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত বলে পরামর্শ তাঁর। প্রস্টেটের সমস্যা গোপন করলে মূত্র সংক্রান্ত ঝুঁকি বাড়ে। আচমকা প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ রকম হলে ক্যাথিটারের সাহায্যে প্রস্রাব বের করে দিতে হয়। তাই করোনার ভয়ে এ জাতীয় রোগ গোপন করা অত্যন্ত ঝুঁকির, জানান চিকিৎসক।

Advertisement

প্রস্টেটের যে সব সমস্যা হলে ইউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া দরকার-

· প্রস্রাব পেলেও শেষ হতে অনেক সময় লাগে।

· প্রবল বেগ থাকলেও ধারা ক্ষীণ হয়ে থাকে।

· বারে বারে শৌচাগারে যেতে হয়, বিশেষ করে রাতে ঘুম ভেঙে যায়।

· প্রস্টেট গ্রন্থি অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে অনেক সময় প্রস্রাব আটকে যেতে পারে।

প্রস্টেট ক্যানসারের সে রকম কোনও উপসর্গ থাকে না। তাই ৫০ পেরনোর পর কোনও সমস্যা হোক বা না হোক ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে পিএসএ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন: করোনার আবহেই বাড়ছে ডেঙ্গির শঙ্কা, কী করবেন এই সময়ে

৪৫ বছর বয়সের পর প্রস্রাবের সমস্যা হলে ডাক্তার দেখানো জরুরি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে প্রস্টেট ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা অন্যান্য ক্যানসারের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে। তবে প্রস্টেট ক্যানসারের সুবিধাজনক দিক, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি স্লো-গ্রোয়িং ক্যানসার। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে পুরোপুরি সেরে যায়। তাই ৪৫ পেরনোর পর বছরে এক বার ইউরোলজিস্টের পরামর্শে পিএসএ টেস্ট করিয়ে নিন।

আরও পড়ুন: কাঁপুনি দিয়ে জ্বর-র‌্যাশ, স্ক্রাব টাইফাস নয়তো?

ক্যানসার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলে হরমোন থেরাপির সাহায্য নিয়ে রোগকে পুরোপুরি আটকে দেওয়া যেতে পারে। র‍্যাডিক্যাল প্রস্টেক্টমি, হরমোন থেরাপি বা ব্র্যাকি থেরাপি করে এই রোগ সারানো সম্ভব । বয়স বেশি বলে ভয় পেয়ে অসুখ পুষে রাখলে সমস্যা। ৮০ পেরিয়েও প্রস্টেট ক্যানসার সার্জারি করে সুস্থ আছেন অজস্র মানুষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement