বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকলে তা অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয়। প্রথাগত চিকিৎসার শরণ নেওয়াই তখন একমাত্র উপায়। কিন্তু সময়ের আগেই তা কমতে শুরু করলে বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ আছে বইকি! অকালে কমতে থাকা দৃষ্টিশক্তি ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদেরও। তাঁদের মতে, সময়ের আগে দৃষ্টিশক্তি কমার জন্য কিছুটা হলেও দায়ী আমরাই।
দৈনন্দিন জীবনে আমাদেরই কিছু ভুল তৈরি করছে এই সমস্যা। কখনও নিজেদের অজান্তে আবার কখনও বা কিছু অভ্যাসের দায়ে চোখের ক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলছি আমরাই। চিকিৎসকদের মতে, সে সব অভ্যাসে রাশ টানলে দৃষ্টিশক্তি কমানোকে অনেকটাই আটকানো যায়। অতিরিক্ত টিভি দেখা বা মোবাইল ঘাঁটা ছাড়াও কোন কোন অভ্যাসে দাঁড়ি টানার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা?
তীব্র রোদে যখনই বাইরে যান, সানগ্লাস পরার কথা কি মনেই থাকে না? তা হলে সাবধান। ক্যাটারাক্টের অন্যতম কারণই সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি। তাই সানগ্লাস পরুন অবশ্যই। তবে বাজারচলতি ফুটপাত থেকে কেনা সানগ্লাস নয়। চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ইউভি প্রোটেক্টর রোদচশমা ব্যবহার করুন। চোখে পাওয়ার থাকলে তা যোগ করুন সানগ্লাসেও।
চশমার পরিবর্তে কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন অনেকেই। কিন্তু তেমন যত্নের ধার ধারেন না। লেন্স এক বার পরে আর তা খোলেন না একটানা দু’-তিন দিন। চিকিৎসকদের মতে, এ ভাবে লেন্সের নিয়ম না মেনে তা পরলে চোখের খুব ক্ষতি হয়। অনেকেই লেন্স দেওয়া নেওয়া করে পরেন। কখনও তা নিছকই স্টাইল ও ফ্যাশন করতেও। এটাও চোখের জন্য খুব ক্ষতিকর।
ঘন ঘন চোখ কচলান কিংবা যখন তখন চোখে হাত দেন? হাতে থাকা রোগ-জীবাণু চোখে লেগে যায় প্রতি বারই। দিনের পর দিন এই কাজ করতে করতে চোখের কর্নিয়ায় সংক্রমণ দেখা দেয়। দৃষ্টিশক্তি কমার নেপথ্যে এটিও একটি কারণ। চিকিৎসকদের মতে, চোখ কড়কড় করলে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। অপরিষ্কার হাতে চোখে হাত দেওয়া র অভ্যাস যতটা পারেন কমাতে হবে।
কী ধরনের মেক আপ ব্যবহারের সময়ও সচেতন হোন। আপনার মেক আপ কিটে এমন কোনও মেক আপ থেকে যায়নি তো, যার মেয়াদ ইতিমধ্যেই ফুরিয়ে গিয়েছে? চোখের প্রসাধনে ব্যবহার করেন এমন মেক আপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বার বার দেখে নিন তা মেয়াদুত্তীর্ণ কি না। সচেতনতার ক্ষেত্রে এটি খুবই জরুরি।
ধূমপানে আসক্তি আছে? এ বার তবে সচেতন হোন। কেবল হার্ট নয়, ধোঁয়া থাবা বসাচ্ছে আপনার চোখেও। ক্যাটারাক্ট তো বটেই, বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশানকেও (রেটিনার অসুখ) ত্বরান্বিত করে। দৃষ্টিশক্তি কম হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে এই ধূমপানকেই চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকরা।
ঘন ঘন স্মার্টফোন? কথায় কথায় হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে ঝড়? ফেসবুকের তর্ক-বিতর্কে মত প্রদান? এ সব আজকাল জীবনের অঙ্গ। তাই বাদ দেওয়া যায় না পুরোপুরি। তবে মাক্রা চাড়ালে বিপদ আছে। বিশেষ করে রাতে আলো নিভিয়ে চোখের কাছে মোবাইল রেখে তাতে সিনেমা দেখা বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট, কাড়ছে দৃষ্টি। সাবধান হোন অতএব।
চোখের অসুখ থাকলে তো সময় অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। অসুখ না থাকলেও বছরে দু’বার চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া খুবই প্রয়োজন। এই কাজে অবহেলা করবেন না। চোখের সামগ্রিক চেক আপ করিয়ে রাখুন।
চোখ লাল হয়েছে বা একটু কড়কড় করছে? ওমনি ওষুধের দোকানে বলে কিনে ফেললেন ড্রপ, কিংবা বাজারচলতি প্রচলিত ড্রপ লাগিয়ে নিলেন চোখে। এই অভ্যাস থাকলে আজই তা বদলান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ড্রপ লাগালে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, বা আপনার চোখে তা কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সে সিদ্ধান্ত চিকিৎসককেই নিতে দিন।