নিজস্ব চিত্র।
অ্যাজ়মা পরিচিত একটি রোগ। শ্বাসনালীকে আক্রান্ত করে। কিন্তু নামটা শুনলেই শ্বাসকষ্টে পীড়িত মুমূর্ষু রোগীর অবয়ব ভেসে ওঠে আমাদের মনে। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী এটি মৃদু, মাঝারি, তীব্র এমনকি, প্রাণঘাতিও হতে পারে। নির্ভরযোগ্য একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই রোগে ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ! তার মধ্যে প্রায় দশ শতাংশের বাস আমাদের দেশে। আশঙ্কার কথা হল, এই সংখ্যা দিন দিন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে চলেছে!
প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ এবং শিশুদের মধ্যে ১৫ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। যে কোনও বয়সেই হতে পারে এই রোগ। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেখা গিয়েছে ৩ বছর বয়সের শিশুদের বিপদই সব চেয়ে বেশি। শিশুকালে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে দ্বিগুণ বেশি দেখা গেলেও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতে এই অনুপাত প্রায় সমান সমান হয়ে যায়।
অ্যাজ়মা শ্বাসনালিতে প্রদাহের কারণে হয়। দীর্ঘকালীন প্রদাহের ফলে শ্বাসনালির স্বাভাবিক ব্যাস হ্রাস পায় এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, ফুসফুসে বায়ু আগমন নির্গমনে বাধা সৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে শ্বাসনালির অভ্যন্তরীণ মিউকাস ক্ষরণ বৃদ্ধি পেয়ে কার্যকরী ব্যাস আরও কমে যায়। তার ফলে শ্বাসনালি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে গেলে প্রাণঘাতী পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে!
অ্যাজ়মার ঝুঁকি ও তীব্রতা বৃদ্ধির কারণসমূহ:
১. বংশগত প্রবণতা
২. অ্যালার্জি
৩.মেদবহুলতা
৪. ভাইরাস সংক্রমণ
৫. ব্যায়াম ও অত্যধিক পরিশ্রম
৬. শীতল বায়ু
৭. পরিবেশ দূষণ ও ক্ষতিকারক গ্যাসের উপস্থিতি (সালফার ডাই অক্সাইড, ওজোন এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড)
৮. বিটা ব্লকার, অ্যাসপিরিন ও কিছু পেনকিলার সেবন
৯. বালিশ, লেপ তোশকের ধুলো
১০. পোষ্য জীবজন্তুর পশম
১১. ফুলের পরাগরেণু
১২. আবহাওয়া পরিবর্তন
১৩. মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে রোগের লক্ষণ বেড়ে যায়। কিন্তু স্ট্রেস অত্যধিক বাড়লে (আত্মীয়-বিয়োগ) প্যারাডক্সিক্যালি কমেও যেতে পারে।
১৪. কিছু কিছু মহিলার মাসিক পিরিয়ড শুরুর পূর্বে অ্যাজ্মা (ক্যাটামেনিয়াল অ্যাজ়মা) বাড়াবাড়ি হতে পারে। প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা হ্রাসের কারণ।
অ্যাজ়মার ওষুধ:
অ্যাজ়মার ওষুধকে মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা চলে।
রিলিভার— এই ওষুধগুলির ব্যবহারে শ্বাসনালির অন্তর্বর্তী ব্যাস অনতিবিলম্বে বৃদ্ধি পেয়ে ফুসফুসের বায়ু সরবরাহ স্বাভাবিক করে ও কষ্ট লাঘব করে।
কন্ট্রোলার— দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে নিয়মিত সেবনের ফলে শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
অ্যাজ়মার ওষুধ বড়ি হিসাবে খাওয়া যায়। আবার ইনহেলার রূপেও ব্যবহার করা যায়। বাড়াবাড়ি হলে ইনজেকশন নিতে হয়। তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত। ইনহেলার ব্যবহার বেশ কার্যকরী ও নিরাপদ। এতে রোগের উপশম শীঘ্র হয় এবং সাইড এফেক্টও তুলনায় অনেক কম! ইনহেলার স্পেশার ডিভাইস বা মিটারড ডোজে বা পাউডার রূপে নেওয়া যায়। ইনহেলার নিতে পারেন না যাঁরা, তাঁদের জন্য নেবুলাইজার মেশিন বিশেষ উপযোগী।
রোগীর করণীয়:
অ্যাজ়মা নিয়ন্ত্রণে রোগীর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগী জানেন, কীসে তাঁর অ্যালার্জি আছে! কীরূপে ক্রমশ হাঁচি, কাশি ও নাক দিয়ে জল পড়ার মাধ্যমে শুরু হয়ে এটা শ্বাসকষ্টের পর্যায়ে পৌঁছে যায়! ব্যক্তিগত সাবধানতা অবলম্বন বেশ কার্যকরী হয়। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, ঘরের ধুলো ও পরাগরেণু এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া ধূমপান বর্জন করা ও অ্যালার্জি থাকলে সুগন্ধি পারফিউম স্প্রে পরিহার করা দরকার। দৈহিক ওজন কমাতে হবে, অ্যালার্জেন থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়াম যুক্ত, ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। কম পরিমাণ ওমেগা-৩ পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ডি-এর অভাব অ্যাজ্মা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই নিয়মিত চেক-আপ করে সময়মতো ওষুধ খেতে হবে। ইনহেলার ব্যবহারে অনীহা বা অন্য ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করা চলবে না।
রোগ বাড়াবাড়ি হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অ্যাজ্মা রোগীর স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়। তাই এখন অসুবিধা নেই, ভালই তো আছি— ভেবে হঠাৎ ওষুধ বন্ধ করা ঠিক নয়।