কী কী ব্যায়াম প্রয়োজন? নিজস্ব চিত্র।
একটা বাড়ির জন্য ভিত যেমন জরুরি, পায়ের পাতাও আমাদের শরীরের জন্য তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই অংশের ব্যায়াম বা যত্ন নিয়ে আমরা ততটা চিন্তিত নই। যাঁরা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন বা দাঁড়িয়ে, যাঁরা রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, ব্লাড সুগার কিংবা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে, নার্ভের রোগী, জিবি সিনড্রোম, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন— তাঁরা সকলেই পায়ের পাতার ব্যথায় ভোগেন। তাই তাঁদের এই অংশের জন্য আলাদা যত্ন নেওয়া জরুরি।
কেন জরুরি পায়ের পাতা?
ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সোনালি সেনগুপ্ত ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘‘একটা লাট্টু যখন ঘোরে তার পুরো ভারসাম্য থাকে একটা পয়েন্টের উপরে। সেই পয়েন্টটা যদি নড়বড়ে থাকে, তা হলে লাট্টু ঘুরতে পারবে না। পায়ের পাতার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হাতের তালু আর পায়ের পাতাকে নার্ভাস সিস্টেমের ট্রান্সমিটার বলা হয়।’’ শরীরের রক্ত চলাচল, রক্তচাপের সঙ্গে পায়ের পাতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের শরীরে দু’ভাবে ব্লাড সার্কুলেশন হয়। মাথা থেকে হৃদ্্যন্ত্র পর্যন্ত, যা আবার উল্টো পথে যায় এবং হার্ট থেকে পায়ের পাতা, যা ফের হার্ট পর্যন্ত যায়। পায়ের মাসল বা নার্ভে সমস্যা থাকলে রক্ত ঠিক মতো হৃদ্যন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছয় না।তখন ব্লাড পাম্প করার জন্যহার্টকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এর ফলে রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়।
কী কী ব্যায়াম প্রয়োজন?
পায়ের পাতার চোট, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, বাত, নার্ভের সমস্যা— সব ক্ষেত্রেই উপকার পাওয়া যাবে এমন কিছু বেসিক ব্যায়ামের কথা জানালেন ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সোনালি সেনগুপ্ত।
চেয়ারে নব্বই ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে বসতে হবে। পায়ের পাতা যেন মাটি স্পর্শ করে। এ বার গোড়ালি ফিক্সড রেখে পায়ের পাতা উপর-নীচ করতে হবে। কুড়ি বার করে তিন সেট।
চেয়ারে বসে একটি পা আর একটি পায়ের হাঁটুর উপরে তুলে রাখুন। এ বার পায়ের আর্চের অংশটা বুড়ো আঙুল দিয়ে মাসাজ করতে হবে। মাসলগুলো রিল্যাক্সড হবে।
পায়ের নীচে রুমাল বা একটা কাপড়ের টুকরো সমান করে পেতে রাখতে হবে। চেয়ারে বসে পায়ের আঙুলগুলো দিয়ে কুঁচকে কুঁচকে সেই কাপড়টা পায়ের নীচে আনতে হবে। টো ক্রল করা পায়ের পাতার জন্য খুব জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম। পাঁচ বার করে দু’পায়ে তিন সেট করতে হবে।
হিল রেজ়- পায়ের আঙুলের উপরে ভর দিয়ে গোড়ালি তুলে ওই পজ়িশনে ধরে রেখে দশ কাউন্ট করতে হবে। অথবা ভর দিয়ে গোড়ালি আপ-ডাউন করতে হবে দশ বার। এই রকম করে তিন সেট। চেয়ার বা দেওয়াল ধরেও এটা করা যায়। এতে পায়ের কাফ মাসলে প্রভাব পড়বে, রক্ত চলাচল ভাল হবে। আর এক ভাবে এই ব্যায়াম করা যায়। হালকা স্কোয়াট পজ়িশনে বসে আঙুলে ভর দিয়ে গোড়ালি তোলা নামানো। এতে অন্য মাসলের ব্যায়াম হবে।
অনেকের পায়ের আর্চের গড়ন ঠিক মতো থাকে না। ছোট বয়সে তা নজর করা গেলে ব্যায়ামের মাধ্যমে অনেকটা ঠিক করে নেওয়া যায়। ফুট আর্চ ঠিক না থাকলেও যন্ত্রণা হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞেরা বালির উপরে হাঁটার পরামর্শ দেন।
পায়ের তলায় একটা বল (বাতাবি লেবু সাইজ়ের) নিয়ে চাপ দিয়ে সামনে-পিছনে করতে হবে। আর্চের তলায় রেখে ক্লকওয়াইজ় ও অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ় ঘোরাতে হবে।
পায়ের আঙুলেও সমস্যা থাকে অনেকের। বিশেষত যাঁদের স্নায়ুরোগ আছে। ছোট ছোট পেবলস পাওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে আঙুলের ফাঁক দিয়ে গ্রিপ করে তুলতে হবে। কিছু পেবলস মেঝেতে ছড়িয়ে রেখে আঙুল দিয়ে তুলে একটা বাটিতে রাখতে হবে। এতে আঙুলের মাসলের স্ট্রেংথ বাড়বে।
থেরাব্যান্ড নিয়ে নানা রকম এক্সারসাইজ় আছে। যেমন সোজা দাঁড়িয়ে ব্যান্ডটা পায়ের পাতায় গলিয়ে নিন। বাঁ দিকের পা মাটিতে চেপে রেখে, ডান পা পাশ বরাবর তুলুন। দু’পায়ে ১৫ কাউন্টে তিন সেট করুন।
যাঁরা পায়ের পাতার ব্যথায় ভুগছেন না, তাঁরাও এই ব্যায়ামগুলো করলে উপকার পাবেন। এর সঙ্গে মনে রাখতে হবে পা ভাল রাখতে ভাল জুতো পরা খুব জরুরি।