প্রতীকী ছবি।
কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা দ্বিতীয় বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সপ্তাহখানেক আগে। গত বছর এপ্রিলে করোনা ধরা পড়ার পরে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। উপসর্গহীন থাকায় কাজের চাপে তিনি এখন কলকাতা পুর ভবনে নিয়মিত আসছেন। ওই শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই অফিসে আসছি। কোভিড মোকাবিলায় এখন অফিসে না এলেই নয়। তবে একটানা কাজ করতে গেলে হাঁফিয়ে উঠছি। কিন্তু কিছু করার নেই! দায়িত্ব তো ঘাড়ে রয়েছে।’’ আবার প্রথম দফায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের এক ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি। প্রায় এক
মাসেরও বেশি সময় পরে সুস্থ হয়ে তিনি কাজে যোগ দেন। কিন্তু দেখা যায়, আগে যে কর্মক্ষমতা তাঁর ছিল, তা হ্রাস পেয়েছে শারীরিক দুর্বলতার কারণে। চিকিৎসকেরা তাঁকে ফের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশ্রামে যেতে বলেন। বাধ্য হয়ে তিনি ফের ছুটি নিয়ে পরে কাজে যোগদান করলেও আগের মতো কর্মশক্তি ফিরে পাননি। কলকাতা পুরসভা বা পুলিশের মতো জরুরি বিভাগে কাজ করা আধিকারিকেরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে কাজে ফিরলেও শারীরিক শক্তি পাচ্ছেন না।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতা পুরসভার প্রায় ১০ জন শীর্ষ আধিকারিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়াও, আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকশো সাধারণ কর্মী। সাধারণ কর্মীদের তুলনায় পদস্থ আধিকারিকদের কাজের চাপ তুলনায় বেশি। তাঁদের কথায়, ‘‘করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরে ১৪ দিন কাটতেই কাজের চাপে অফিসে আসতে হচ্ছে। কিন্তু একটানা কাজ করতে গেলেই ঝিমুনি ভাব আসছে। ভীষণ অবসন্ন ও দুর্বল ভাব রয়েছে।’’ কলকাতা পুরসভার ডিজি (এমপি ল্যাড) দেবাশিস ঘোষ গত ৩ মে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, ক্যানসার ধরা পড়ার পরেই তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি অনেকটাই ভাল ছিলেন। কিন্তু গত বছরে তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে অবনতি হতে শুরু করে। গত সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। গড়িয়াহাটে কর্মরত, পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘মাসখানেক আগে আমার করোনা হয়েছিল। দফতরে কর্মী সংখ্যার হাজিরায় শিথিলতা আনা হয়েছে। তার উপরে করোনা সন্দেহে রোজই কেউ না কেউ গরহাজির থাকছেন। চাপটা আমাকে তো নিতেই হচ্ছে। কিন্তু একটানা কাজ করার পরে খুব অবসন্ন হয়ে পড়ি।’’
লালবাজার জানাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েও ফের ছুটিতে যেতে হয়েছে আক্রান্ত পুলিশদের অনেককেই। আবার শারীরিক দুর্বলতার জন্য কাজের চাপ কমাতে হয়েছে পুলিশ বাহিনীর অনেক করোনা আক্রান্ত সদস্যের।
গত বছর করোনার প্রথম দফায় ৪৩০০-এর বেশি পুলিশকর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগকেই ওই সমস্যায় ভুগতে হয়েছে বলে দাবি এক পুলিশকর্তার। তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ করে যাঁদের বয়স বেশি বা কো-মরবিডিটি রয়েছে এমন পুলিশকর্মীদের কাজের ধরন বদলে দিয়েছিলেন ইউনিট হেড বা থানা এবং গার্ডের ওসিরা।’’
সূত্রের খবর, দ্বিতীয় দফায় এখনও পর্যন্ত ৩০০-র বেশি পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হওয়ার থেকে সুস্থতার হার বেশি। তবে দ্রুত সুস্থ হলেও তিন সপ্তাহের আগে কেউ যাতে কাজে যোগদান না করেন, সেটি দেখা হচ্ছে।
পুলিশকর্মীরা জানান, তাঁদের যেহেতু রাস্তায় বা বাইরে ঘুরে কাজ করতে হয়, তাই শারীরিক দক্ষতার বেশি প্রয়োজন পড়ে। তাই সুস্থ হলেও ফিট হতে কয়েক মাস সময় লেগে যাচ্ছে। তার পরেও দুর্বলতা বা করোনার প্রভাব থেকে যাচ্ছে শরীরে। এই বছর সেই সময় আরও বেশি লাগছে । দেড় মাস আগে করোনায় আক্রান্ত একাধিক পুলিশকর্মী মঙ্গলবার পর্যন্ত সুস্থ হয়ে কাজে যোগদান করেননি বলে সূত্রের খবর।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত করোনায় আক্রান্তদের তিন মাত্রার উপসর্গ থাকে। হাল্কা, মাঝারি এবং মারাত্মক। যাঁদের হাল্কা মাত্রার উপসর্গ থাকে, তাঁদের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু মাঝারি ও মারাত্মক মাত্রার আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে তিন মাস সময় লাগে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, তিন মাসেও অনেকে সুস্থ হচ্ছেন না। এটাই ভাবনার বিষয়। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ নিয়োগী বলেন, ‘‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে সংক্রমণের মাত্রা বেশ বেশি। করোনায় মাঝারি ও মারাত্মক মাত্রার আক্রান্তরা এখন তিন মাস পরেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারছে না। এখন তাঁদের বেশি করে প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। সঙ্গে জল ও ফল বেশি করে খেতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’’