R G kar Medical College And Hospital Incident

‘যে আন্দোলন চলছে, তাতে আমার স্বর আছে’! পর পর সরকারি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নিয়ে মুখ খুললেন ব্রাত্য বসু

বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতিদের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নিয়ে শিক্ষক দিবসে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানালেন ব্রাত্য বসু। কী বললেন শিক্ষামন্ত্রী?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২৪
Share:

ব্রাত্য বসু। ছবি: ফেসবুক।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শাসক প্রদত্ত পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রাপকেরা। শিক্ষক থেকে নাট্যব্যক্তিত্ব— এই তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। এই প্রতীকী প্রতিবাদের আবহে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নিয়ে শিক্ষক দিবসে প্রথম নীরবতা ভাঙলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি একাধারে নাট্যব্যক্তিত্বও। সরকার প্রদত্ত পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন কয়েক জন নাট্যব্যক্তিত্বও। তাঁদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘নাটকের পুরস্কার যাঁরা ত্যাগ করেছেন, তাঁদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি। তাঁদের অধিকার আছে। শুধু এটুকু বলব, যিনি নাট্য নির্দেশকের পুরস্কার ত্যাগ করেছেন, তিনি বামফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন। তার পরেও নাট্য অ্যাকাডেমি তাঁকে পুরষ্কৃত করেছে।’’ পুরস্কার ফেরানোর সিদ্ধান্ত একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয়, তাই তা নিয়ে এর চেয়ে বেশি গভীর আলোচনায় যেতে নারাজ শিক্ষামন্ত্রী। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘প্রত্যেকেরই পুরস্কার ত্যাগ করার অধিকার আছে। তাঁরা করতেই পারেন। শুধু এটুকু বলব, এর পরে দেশে কোনও ঘটনা ঘটলে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রেও যেন তাঁরা এমন আচরণ করেন।’’ শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

Advertisement

ব্রাত্য নিজে সরকারের অংশ। তাই নিজের দিকে নিজের আঙুল তোলার বিষয়টির অর্থ নেই বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০০৬-০৭ সালে আমার রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল না। ২০১১ সাল থেকে আমার রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি হয়েছে। ফলে আমাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। যে আন্দোলন চলছে, তাতে আমার স্বর আছে। আন্দোলনের আঙুল প্রশাসনের দিকে উঠছে। আমি প্রশাসনের অংশ, আমি কী করে নিজেই নিজের দিকে আঙুল তুলব। প্রতিবাদের ভাষা শোনারও লোক লাগে। আমরা শুনছি।’’

শুরুটা করেছিলেন আলিপুরদুয়ারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিমল দে। গত সপ্তাহেই তিনি ‘বঙ্গরত্ন’ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নাটকের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার’ প্রত্যাখ্যান করেন নাট্যকর্মী চন্দন সেন। শিল্পীদের এমন প্রতিবাদে জোর পায় আন্দোলন। এরই মাঝে নাট্য অ্যাকাডেমির দেওয়া সেরা নির্দেশকের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্দেশক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। নাট্যক্ষেত্রে শাসকের পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার পর্ব এখানেই শেষ নয়। নাট্যকর্মী সঞ্জিতা মুখোপাধ্যায়ও সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করেন, নাট্য অ্যাকাডেমির পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন।

Advertisement

ধীরে ধীরে এই ফিরিয়ে দেওয়া পুরস্কারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নাট্যক্ষেত্র ছাড়াও এই প্রতীকী প্রতিবাদে এগিয়ে আসে শিক্ষাক্ষেত্রেও। প্রাবন্ধিক অভ্র ঘোষ তাঁর সারা জীবনের গবেষণামূলক কাজের জন্য বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেয়েছিলেন। বুধবার তিনি এই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ওই একই দিনে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ ফিরিয়ে দিতে চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন প্রাবন্ধিক ও লেখক আশীষ লাহিড়ী। গোপালনগরের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক দীপক মজুমদারও চিঠি দিয়ে ২০১৩ সালে পাওয়া ‘শিক্ষারত্ন পুরস্কার’ ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আরজি কর-কাণ্ডকে সামনে রেখে প্রতিরোধ-প্রতিবাদে, দ্রোহ-বিদ্রোহে উত্তাল হয়েছে কলকাতা। আন্দোলনের নানা রূপ দেখেছে এ শহর। শাসকের দেওয়া খেতাব থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেওয়া প্রতিবাদের নতুন নয়। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে তা দেখা গিয়েছে। অনেকেরই মনে হয়েছে, প্রতিবাদের এই ভাষা আন্দোলনকেও জোরালো করে তুলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement