— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তীব্র গরমে পুড়ছে শহর। তবু কাজের সূত্রে অনেককেই ভরদুপুরে থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই ঘোরাঘুরির মধ্যেই লুকিয়ে প্রাণঘাতী সমস্যা, ‘হিট স্ট্রোক’!
তবে, সেই মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিটি মানুষের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যদিও সেগুলি নিত্যদিনের সমস্যা ভেবে বেশির ভাগই উপেক্ষা করে যান। তাতেই বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হয় একাংশকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হিট স্ট্রোকে যথাযথ চিকিৎসা না পেলে ২০-২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু হতে পারে। তাঁরা এ জন্য জোর দিচ্ছেন জনসচেতনতায়। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগে কী লক্ষণ দেখে কেউ নিজেই সতর্ক হবেন? কিংবা তাঁর চোখের সামনে কেউ মাথা ঘুরে পড়ে জ্ঞান হারালে কী করণীয়? সে সব সকলের জানা একান্ত জরুরি।’’
চৈত্রের শেষেই শহর থেকে শহরতলির তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রির ঘরে। বৈশাখে এই তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলেই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এমন পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যা আরও মাথাচাড়া দেবে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তীব্র গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে আসা রোগীদের তথ্য স্বাস্থ্য ভবনকে জানাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে থাকা থার্মোস্ট্যাট। প্রতিটি মানুষের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ভাবে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। সেই তাপমাত্রা গরমে এবং ঠান্ডায় কতটা বাড়বে বা কমবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে ওই হাইপোথ্যালামাস। অতিরিক্ত গরমে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয়ে যায়। ঘামের মাধ্যমে শরীরের ভিতরের তাপ ওই পথে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। তবে শুকনো গরমে শরীর থেকে জল বেরোতে শুরু করলেও, বেশি ঘাম না হওয়ায় মানুষ বুঝতে পারেন না দেহে জলশূন্যতার বিষয়টি। তখনই হিট-স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগের পর্যায় বা লক্ষণ দেখা যায়। অথচ, বিষয়টি জানা না থাকায় বেশির ভাগ মানুষই তা উপেক্ষা করে যান।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘তাতেই বড় বিপদের আশঙ্কা থাকে। শরীরে জলশূন্যতার লক্ষণ দীর্ঘ ক্ষণ উপেক্ষা করায় একটা সময়ের পরে বাইরের অত্যধিক তাপমাত্রায় প্রথমেই বিকল হয় হাইপোথ্যালামাস। তাতে দেহের তাপমাত্রা মারাত্মক বেড়ে শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া পদ্ধতিগুলি ঘাঁটতে শুরু করে। তাতেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে হয়। ফলে অনেকের মৃত্যুও হয়।’’
তাপের ছোবলে প্রথমেই মানুষ জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন, তেমনটা নয় বলেই জানাচ্ছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তিনি জানাচ্ছেন, গরমের কারণে শরীর অতিরিক্ত গরম হয়েছে বা জ্বর এসেছে বলে অনেকেই ভুল করেন। মনে রাখতে হবে, জ্বর ও হিট স্ট্রোক এক নয়। সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার জন্য সাধারণ জ্বর শরীর নিজেই তৈরি করে। হাইপোথ্যালামাস তখন শরীরকে প্রতিটি পদে সঙ্কেত পাঠায়, কী করতে হবে।
অরুণাংশু জানাচ্ছেন, কিন্তু হিট স্ট্রোক তা নয়। এখানে হাইপোথ্যালামাস নিজেই বিকল হওয়ায়, বাইরের আর দেহের ভিতরের তাপমাত্রা এক হয়ে যায়। দেহের তাপ বেড়ে গেলে প্রোটিন নষ্ট হয়। তখন ক্ষতিকারক পদার্থের প্রভাবে হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক কাজ করতে না পেরে বিকল হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জলশূন্যতার কারণে রক্তচাপ কমে যায়। তাতে হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কম হয়। ফলে নাড়ির গতি প্রচণ্ড বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জ্ঞান হারানো বা খিঁচুনি হয়, সেটাই হিট স্ট্রোক।