নিজের প্রাণ নেওয়ার আগের মুহূর্তে এ ভাবে ভিডিয়ো কলের বিষয়টি ভাবাচ্ছে মনোরোগ চিকিৎসকদের। প্রতীকী ছবি।
ভিডিয়ো কল করে কেউ পরিজনকে দেখিয়েছেন যে, তিনি দিয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন। কেউ ভিডিয়ো কল করে পরিজনের চোখের সামনেই গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছেন। আত্মহননের আগের মুহূর্তে পরিজন-পরিচিতদের এমন মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী করে যাওয়ার প্রবণতা বিগত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে দেশের অনেক জায়গাতেই। বাদ নেই কলকাতাও। যার কারণ খুঁজতে চাইছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরাও।
চলতি বছরে কলকাতা শহরেই তিনটি এমন ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা এক আইনজীবী ভিডিয়ো কল করে, কার্যত তাঁর বাবার চোখের সামনেই বিদ্যাসাগর সেতু থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। গত ফেব্রুয়ারিতেরাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকার বাসিন্দা এক যুবক একই ভাবেস্ত্রীর সামনেই গঙ্গায় ঝাঁপ দেন বিদ্যাসাগর সেতু থেকে। গত জানুয়ারিতে গরফার বাসিন্দা এক ব্যাঙ্ক আধিকারিক নিজের ফ্ল্যাট থেকে ভিন্ রাজ্যে বসবাসকারীস্ত্রীকে ভিডিয়ো কল করেন। তার পরে স্ত্রীর চোখের সামনেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন।
নিজের প্রাণ নেওয়ার আগের মুহূর্তে এ ভাবে ভিডিয়ো কলের বিষয়টি ভাবাচ্ছে মনোরোগ চিকিৎসকদের। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, যে ক্ষোভ-অভিমান থেকে ওই মানুষটি আত্মঘাতী হচ্ছেন, তা তিনি উপলব্ধি করাতে চাইছেন প্রিয়জনদের। কারও আবার অভিমত, সুইসাইড নোটেরবদলে প্রিয়জনের সঙ্গে শেষ বার কথা বলার আকুতি থেকেই এমনভিডিয়ো কল। পাশাপাশি তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রিয়জনের আত্মঘাতী হওয়ার অভিঘাত এমনিতেই তীব্র হয়। তার উপরে ভিডিয়ো কলে শেষ সময়ের সাক্ষী থাকলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারেমনের উপরে।
মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘এই ধরনেরনানা ঘটনার কথা শুনছি আমরা। হতে পারে ওই ব্যক্তির মনেএমন কোনও ক্ষোভ-অভিমান ছিল,যা অন্য কেউ উপলব্ধি করতে পারছিলেন না। তা-ই হয়তো সেটা বোঝাতে তাঁদের সাক্ষী রেখে এই ধরনের পদক্ষেপ করছেনকেউ।’’ শুধু কলকাতা নয়, গত জানুয়ারিতে কটকে এমসিএ-র এক পড়ুয়া এই ভাবে ভিডিয়োকলে থাকাকালীন ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন। আবার ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদে এক ব্যবসায়ী স্ত্রীকে নিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁর বন্ধুকে ভিডিয়ো কল করেন। সেখানে তিনি তাঁর দুই সন্তানের দেহও দেখান ওই বন্ধুকে। ঘটনায় হতচকিত হয়ে পড়েন ওই ব্যবসায়ীর বন্ধু।
মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেলের ব্যাখ্যা, আত্মহত্যারআগে মানুষ চান প্রিয়জনের সঙ্গেশেষ বার দেখা করতে কিংবা কথা বলতে। ভিডিয়ো কলে সেই দু’টো কাজই করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘সুইসাইড নোটে মানুষ তাঁর প্রিয়জনের উদ্দেশে না বলা কথাবলে যেতে পারেন। কিন্তু প্রিয়জনের বক্তব্য শুনতে পান না। ভিডিয়োকলে এই দু’টি কাজ একসঙ্গে হয় বলেই হয়তো বর্তমান প্রযুক্তিরযুগে এই পথ অনেকে বেছে নিচ্ছেন। কেউ হয়তো আবার অন্য কাউকে দেখে প্রভাবিত হয়েই এমনটা করছেন।’’
অনেকে মনে করেন যে, এমন ঘটনার মনস্তত্ত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে চিন্তাভাবনার প্রয়োজনরয়েছে। তবে এই ধরনের ঘটনার কথা যত কম প্রচারিত হওয়ার সুযোগ পাবে, তত মানুষের মধ্যেএ নিয়ে উৎসাহ কম তৈরি হবেবলেও মনে করছেন তাঁরা। কারণ অতীতে দেখা গিয়েছে, সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ারএকটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসারপরে একাধিক ব্যক্তি সেই একই পথে হেঁটেছেন। দু’-একটি ক্ষেত্রে পুলিশ খবর পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তিকে শেষ মুহূর্তে উদ্ধারও করেছিল।