Heat Stroke

যেখান-সেখান থেকে জল, কাটা ফল খাবেন না, হিট স্ট্রোকের লক্ষণ পেটে মোচড়ও, বলছেন ডাক্তাররা

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তীব্র গরমে কিংবা তাপপ্রবাহের মধ্যে দুপুরে গনগনে রোদে রাস্তায় থাকলে শরীরে শুধুমাত্র জলশূন্যতা তৈরি হয়, তেমনটা নয়। বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপে পেটের সমস্যাও মারাত্মক হতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৫
Share:

বিপদ: রাস্তার ধারের কাটা ফলের দোকানে ক্রেতার ভিড়। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বৈশাখের শুরুতেই বৃহস্পতিবার শহরের তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস রয়েছে আবহাওয়া দফতরের। সেই সূত্র ধরেই পেটের গোলমাল বাড়ার আশঙ্কাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি পেটে সংক্রমণ হয়ে ডায়েরিয়াও শুরু হতে পারে। সজাগ থাকতে হবে।’’

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তীব্র গরমে কিংবা তাপপ্রবাহের মধ্যে দুপুরে গনগনে রোদে রাস্তায় থাকলে শরীরে শুধুমাত্র জলশূন্যতা তৈরি হয়, তেমনটা নয়। বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের জন্য পেটের সমস্যাও মারাত্মক আকার নিতে পারে। এই সময়ে তেষ্টা মেটাতে বহু পথচলতি মানুষ যেখান-সেখান থেকে জল পান করেন। কিংবা রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া আইসক্রিম, রঙিন শরবত বা লেবুর জল কিনে পান করেন। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

মেডিসিনের চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সর্বত্র বিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়াটাই কঠিন। তাই তেষ্টা মেটাতে যেখানে সেখানে জল বা শরবত পান করে পেটের গোলমাল হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, দুপুরের তীব্র রোদে রাস্তায় দীর্ঘ ক্ষণ ঘোরাঘুরির মধ্যে যদি পেটে বার বার মোচড় দেয় কিংবা পাতলা পায়খানা হয়, তা হলে দেরি না করে বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া ভাল। নারায়ণ বলেন, ‘‘গা গোলানো, মাথা ঝিমঝিম, পাতলা পায়খানা— এগুলি সবই হিট স্ট্রোকের পূর্বাভাস। বুঝতে হবে বাইরের তাপ শরীরে প্রবেশ করে এমন সমস্যা হচ্ছে।’’ গরমে পেটের গোলমালে শরীরে আরও বেশি জলশূন্যতা তৈরি হয় বলে জানাচ্ছেন সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘পেটের গোলমাল হলে বাড়িতে থেকে বার বার করে ওআরএস-এর জল খেতে হবে।’’

Advertisement

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, তীব্র তাপমাত্রার কারণে খোলা খাবারে ব্যাক্টিরিয়া ও ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ ঘটছে। ফলে খাবার তাড়াতাড়ি নষ্টও হচ্ছে। আবার, তীব্র গরমে
শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া সহজে কাজ করতে পারে না। যার ফলে খাবার হজম করতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই দুইয়ের কারণেও পেটের গোলমালে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
অনির্বাণের কথায়, ‘‘যত্রতত্র জলপানের ফলে এই সময়ে হেপাটাইটিস এ-তে অনেকে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ, জন্ডিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম, শরবতের জল ও বরফ বিশুদ্ধ না হওয়ায় সালমোনেলা নামক এক ধরনের ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণও বেড়ে যায়।’’ তার থেকে ডায়েরিয়া, বদহজম হয়।

রাস্তার ধারে যে কাটা ফল বিক্রি হয়, তাতে মাছির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় বলে জানাচ্ছেন যোগীরাজ। পাশাপাশি, ফ্রিজে রাখা খাবারও নিয়ম মেনে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

অনেকেই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা খাবার বার করে বাইরে কিছু ক্ষণ রেখে দেন সাধারণ তাপমাত্রায় আনার জন্য। এটি ঠিক পদ্ধতি নয় বলেই দাবি চিকিৎসকদের। নারায়ণ বলেন, ‘‘ফ্রিজ থেকে বার করে খাবার পুনরায় আগুনে গরম করে বা ফুটিয়ে নিয়ে খাওয়াই উচিত।’’

গরমের সময়ে শরীরে ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ ও ‘হিট-শক প্রোটিন’ তৈরির জেরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে। উপরন্তু যকৃৎ ও লিম্ফয়েড কোষ থেকে প্রো-ইনফ্লামেটরি
সাইটোকাইন নিঃসৃত হয় বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক তথা ভাইরাস বিষয়ক গবেষক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। তিনি বলেন, ‘‘শরীরে সুষম খাদ্য, জলের অভাব এবং লবণের ভারসাম্যহীনতার কারণে খাদ্যনালিতে বসবাসকারী উপকারী ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। ফলে অন্ত্রের মিউকোসা স্তরে সুরক্ষার প্রাচীর আলগা হয়। সেই সুযোগে দূষিত খাদ্য ও পানীয় দিয়ে ঢুকে পড়া ক্ষতিকর জীবাণু ও ভাইরাস ওই প্রাচীর ভেদ করে প্রবেশ করায় অন্ত্রের প্রদাহ শুরু হয় এবং পেট ব্যথা, বমি ও ডায়েরিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement