—প্রতীকী ছবি।
রাত পোহালেই দোল। রঙের উৎসবে ডুবে যেতে ঘরে ঘরে প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই রং যেন জীবনের সব রং টেনে না নেয়, তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে নিজেকেই। ভাবছেন, ভেষজ আবিরেই খেলবেন রং? কিন্তু বাজারচলতি ভেষজ আবির কি আদৌ ভেষজ? সেই নিশ্চয়তা কে দিয়েছে? লালবাজারের সতর্কতা, বরং ভেষজ আবিরের আড়ালে দেদার বিক্রি হয় রাসায়নিক আবির।
রাসায়নিক রঙে লেড অক্সাইড, কপার সালফেট, ভারী ধাতু, পারদ, অভ্র, সিলিকা, অ্যাসবেস্টস, কাচের গুঁড়ো মেশানো থাকে। এমনকি, জামাকাপড়ের রাসায়নিক রং-ও মেশানো হয় বহু ক্ষেত্রে। ফলে এই সব রং থেকে চোখ এবং ত্বককে বাঁচাতে সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ছোটদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকুন বড়রা।
তাঁদের মতে, রাসায়নিক আবিরে আছে জলরঙের থেকেও বেশি বিষ। এই আবির মূলত ক্ষারধর্মী বা অ্যালকালাইন। ক্ষার অ্যাসিডের থেকেও বেশি ক্ষতিকর। চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলছেন, ‘‘চোখের কর্নিয়া ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে এই ক্ষার। এর কারণে কর্নিয়া ঝলসে যেতে পারে, রোগী দৃষ্টি হারাতে পারেন। ক্ষতিকর জলবেলুনও। এর আঘাতে ‘ব্লান্ট ট্রমা’ হতে পারে, চোখে রক্তপাত হতে পারে, রেটিনা সরে গিয়ে অন্ধত্ব নেমে আসতে পারে।’’ তাঁর পরামর্শ, রং খেলার সময়ে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরবেন না। চশমা বা রোদচশমা পরুন। রং খেলার ঘণ্টাখানেক আগে হালকা ক্রিম বা নারকেল তেল মুখে-গায়ে মেখে নিন। চোখে রং ঢুকলে রগড়াবেন না, রুমাল বা টিসু ব্যবহার করবেন না। পরিষ্কার হাতে পানীয় জল নিয়ে তাতে চোখ ডুবিয়ে পিটপিট করে রং বার করুন।
দোলের পরে চেম্বারে ত্বক ও চোখের সমস্যা নিয়ে প্রতি বছরই রোগীরা ভিড় করেন। সেই সূত্রেই গত বছর দোলের পরে তাঁর চেম্বারে আসা এক কিশোরীর কথা বিশেষ করে বললেন ত্বকের চিকিৎসক সুরজিৎ গরাই। এটোপিক ডার্মাটাইটিস বা এটোপিক এগজ়িমা নিয়ে ভুগছিল বছর চোদ্দোর কিশোরীটি। তার মুখে, কনুইয়ে, হাঁটুর পিছনে, হাতের ভাঁজে ঘা হয়ে রস গড়াত, পুঁজ বেরোত। চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণেও এসেছিল এই রোগ। কিন্তু গত বছর দোলে রং খেলে সমস্যা ফিরে আসে। সারা শরীরে অসহনীয় চুলকানি এবং শরীরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে পুঁজ বেরোতে থাকায় ফের চিকিৎসা শুরু হয়।
তাই সুরজিতের পরামর্শ, যাঁদের সোরিয়াসিস, কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস এবং অন্য চর্মরোগ আছে বা যাঁরা সিওপিডি কিংবা শ্বাসকষ্টে ভোগেন, তাঁরা সাময়িক আনন্দ থেকে বিরত থাকুন। শুকনো আবির পায়ে বা হালকা করে দুই গালে লাগান। তাঁর পরামর্শ, রং খেলার ঘণ্টাখানেক আগে শরীরে ভাল করে নারকেল তেল লাগান। ঠোঁটে, ভেসলিন বা লিপ বাম দিন। পারলে শাওয়ার ক্যাপ জাতীয় কিছু দিয়ে মাথা ঢেকে নিন। রং তুলতে শুধুই হালকা করে সাবান লাগান। গামছা বা কিছু দিয়ে ত্বক ঘষবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হবে।