বসন্তেই জৈষ্ঠ্যর প্রখর রোদ্দুর আর প্রাণান্তকর গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা । প্রকৃতির বিমুখতায় সকলের অবস্থা কাহিল। আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে বাঁচতে কিছু টিপ্স দিলেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা সৌমিত্র দত্ত এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা দীপঙ্কর সরকার।
প্রবল গরমে বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অভ্যন্তরের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। ফলত বেসাল মেটাবলিক রেট অর্থাৎ BMR বেড়ে গিয়ে নানান রকম শারীরিক গোলোযোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। হরমোন এবং এনজাইমগুলির ম্বাভাবিক কাজ ব্যহত হয়।
সরাসরি রোদ্দুর লাগলে চোখ এবং ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই সকাল ১১ টার পর এবং বিকেল ৪ টের আগে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়াই ভাল। ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রন গাড়ি থেকে বেরোতে হলে ছায়াতে নামতে পারলে ভালো হয়।
গরমে সব থেকে বেশি অসুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে এক্সট্রিম এজ গ্রুপের অর্থাৎ শিশু ও বয়স্ক মানুষদের। সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪টে বাড়ির বাইরে যাবেন না। ব্যাঙ্ক বা পোস্টঅফিসের কাজ থাকলে সকালে বা বিকেলে সারুন।
এ বারের গরমে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। তাই সাবধান থাকতে হবে। রোদ্দুর এড়িয়ে চলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জলপান, ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতে ও আর এস , ফলের রস সহ জলীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। শরীরে অস্বস্তি হলে, মাথা ঝিমঝিম করলে ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে নুন চিনির জল পান এবং প্রয়োজনে ঠান্ডা জলে স্নান করে নিতে হবে।
রাস্তাতে অসুস্থ বোধ করলে অবিলম্বে ঠান্ডা বা ছায়াতে গিয়ে জল পান করতে হবে।
হাল্কা রঙের সুতির পোশাক পরা উচিত। পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরলে ত্বক বাঁচানো যায়।
শুকনো গরম বলে অনেকে ভাবছেন ঘাম হয় না। কিন্তু ঘাম হয়েই শুকিয়ে যায় বলে অস্বস্তি কম হয়। শরীরের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ঘাম হয়। অন্য সময় প্রতি কেজি দেহের ওজন পিছু ৫ থেকে ১০ মিলি ঘাম নির্গত হয়। কিন্তু প্রখর দাবদাহের সময় এই পরমাণ বেড়ে দাঁড়ায় কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিলিতে। সুতরাং, প্রচুর জল ও মিনারেল শরীর থেকে বেরিয়ে যায় বলে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ফলে কিডনি সহ শরীরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ কমতে শুরু করে। তাই এই সময় প্রচুর জল সহ নানান ফল, টাটকা ফলের রস, ডাবের জল, লেবুর সরবত পান করতে হয়।
যাদের হাই ব্লাড প্রেশার আছে তাদের কম লবন খেতে বলা হয়, ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবন বেরিয়ে গিয়ে শরীর খারাপ লাগতে পারে। তাই এই সময়টায় সঠিক মাত্রায় ওআরএস, ডাবের জল পান করতে হবে।
ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম পটাশিয়াম বেরিয়ে গেলে মাথা ঝিমঝিম করা ছাড়াও মেজাজ খারাপ হতে পারে। তাই এই সময় যারা গাড়ি চালান তাদের অ্যাকসিডেন্ট করার চান্স বাড়ে। তাই প্রত্যেক গাড়ির চালকের মাথা ঠান্ডা রেখে ড্রাইভ করা উচিত।
গরমে জ্বর ও পেটের সংক্রমণের সম্ভবাবনা থাকে। জ্বর হলে ঠান্ডা জলে স্নান মাস্ট। জ্বর-এ ডিহাইড্রেশনের চান্স বাড়ে। তাই লিক্যুইড ডায়েটের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পেটের সমস্যা এড়াতে বাইরে খাওয়া এবং ভাজা ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
ঘাম হয়ে বা অন্য কারণে ডিহাইড্রেশন হলে পা সহ শরীরের বিভিন্ন পেশীতে ক্র্যাম্প হয়। অল্প অল্প করে বারে বারে সরবত খেলে সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।
বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ওজন তুললেও সমস্যা হতে পারে। রোদ্দুরে কায়িক শ্রম না করাই ভাল।
আরও পড়ুন: কেন হয় এই ঘমাচি? কী করে ঠেকাবেন?