২০০০ কিলোমিটার দূর থেকে হার্টের সফল অস্ত্রোপচার।
রোগী রয়েছেন সেই বেঙ্গালুরুতে। আর চিকিৎকেরা গুরুগ্রামে। দূরত্ব কম করেও দু’হাজার কিলোমিটারের। এত দূর থেকেই রোগীর হার্টের অস্ত্রোপচার করলেন গুরুগ্রামের অভিজ্ঞ হার্টের চিকিৎসকেরা। শুনতে অবাক লাগলেও রোবটিক কার্ডিয়াক টেলিসার্জারিতে এক প্রকার অসাধ্যসাধনই হয়েছে বলা যায়।
ইউরোলজি, শল্য, হৃদ্রোগ, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, স্ত্রী রোগ, কিডনি এবং হেড অ্যান্ড নেক, স্তন, কোলন-ক্যানসারের জটিল অস্ত্রোপচারে রোবটিক সার্জারির প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে। কম সময়ে নিখুঁত অস্ত্রোপচারের জন্য এখন রোবটিক সার্জারিকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে। তবে রোবটিক টেলিসার্জারি আরও উন্নত পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে বহু দূরে বসেও চিকিৎসকেরা নির্ভুল অস্ত্রোপচার সেরে ফেলছেন কম সময়ের মধ্যেই। যেমন হয়েছে গুরুগ্রামে। এসএসআই মন্ত্র বা এসএস ইনোভেশনের চিকিৎসকেরা আড়াই ঘণ্টার মধ্যে হার্টের বিরল রোগের অস্ত্রোপচার করেছেন রোগীর থেকে দু'হাজার কিলোমিটার দূরে বসে।
বছর পঁয়ত্রিশের রোগীর হার্টের ছিদ্র ধরা পড়ে। এই সব ক্ষেত্রে অস্ত্রোচপচার জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণই হয়। রোগীর অবস্থা এমন ছিল যে, তাঁকে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই চিকিৎসকেরা ঠিক করেন, কার্ডিয়াক টেলিসার্জারির মাধ্যমেই অস্ত্রোপচার করা হবে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। এসএস ইনোভেশনের চেয়ারম্যান সুধীর শ্রীবাস্তব বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সহায়তায় অস্ত্রোপচারটি করেন। বহু দূরে বসেও রোবোটের হাতের নিখুঁত পরিচালনা করেন তিনি। অস্ত্রোপচারও সফল হয়।
রোবটিক সার্জারিকে মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক রোবট প্রস্তুত করে গুরুগ্রামের সংস্থা ‘এসএস ইনোভেশন’। তাদের তৈরি প্রথম দেশীয় রোবট ‘এসএসআই মন্ত্র’ ২০২২ থেকে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। আরও উন্নত প্রযুক্তিকে সংযুক্ত করে ওই রোবটের তৃতীয় সংস্করণও চলে এসেছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিদেশি ‘দা ভিঞ্চি’ রোবট এত দিন কয়েকটি হাসপাতালে ব্যবহার করা হত। এ ক্ষেত্রে এক-একটি যন্ত্র সর্বোচ্চ দশ বার ব্যবহৃত হয়। তার পরে আবারও নতুন যন্ত্র কিনতে হয় এবং এর বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণেও মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। সে দিক থেকে দেশীয় রোবটের খরচ অনেক কম। চিকিৎসকদের কথায়, প্রয়োজনমতো এই রোবটের পাঁচটি ‘হাত’ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। যার সাহায্যে হৃদ্রোগের জটিল অস্ত্রোপচারও সহজে করা সম্ভব হয়েছে।