উত্তেজনায় অনেকেরই হাত-পায়ের তালু ঘামে। ছবি: শাটারস্টক।
অল্পেই নার্ভাস হয়ে পড়েন আর তেমনটা হলেই হু হু করে ঘামতে থাকে আপনার হাতের পাতা বা পায়ের তলদেশ? যত ক্ষণ উত্তেজনা তত ক্ষণই সেই ঘাম থেকে যায় হাত-পায়ে। বার বার ঘাম মুছলেও তা সহজে যায় না। আপনিও কি এই একই সমস্যায় জেরবার?
অনেকেই একে ‘অসুখ’ ভেবে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। কেউ কেউ ভয় পান, হয়তো শরীরের আনাচেকানাচে লুকিয়ে রয়েছে কোনও অসুখ, যার প্রকাশমাধ্যম এই ঘাম।কিন্তু এই ঘামকে চিকিৎসকরা কী চোখে দেখছেন, কেনই বা এমনটা হয়, আদৌ কি এই ঘাম কোনও অসুখের সঙ্কেত?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, শরীরে ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ। এক্রিন, অ্যাপোএক্রিন, অ্যাপোক্রিন ইত্যাদি। এদের মধ্যে এক্রিনের সংখ্যাই সর্বাধিক। শুধু তাই-ই নয়, হাত ও পায়ের তালুতেই এদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন: শীতে শিশুকে স্নান করানো নিয়ে চিন্তায়? দেখে নিন তার সহজ সমাধান
তাঁর মতে, এক জন কোনও নির্দিষ্ট উত্তেজনা, মূলত ভয় পেলে বা হঠাৎই কোনও আনন্দ পেলে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যেহেতু প্রত্যেকের হরমোন ক্ষরণ ও উত্তেজনায় সাড়া দেওয়ার প্রবণতা সমান হয় না, তাই তেমন পরিস্থিতি এলে এই হরমোনের ক্ষরণ ব্যক্তিবিশেষে বাড়ে-কমে। যাঁদের শরীর আবেগে বেশি সংবেদনশীল বা অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ বেশি, তাঁদের হাত-পায়ের পাতাই উত্তেজনায় ঘামে।
টেনশন হলে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বেড়ে যাওয়া এই ঘামের অন্যতম কারণ। ছবি: শাটারস্টক।
অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়লেই তা ঘর্মগ্রন্থিগুলিকে উদ্দীপ্ত করে ও এক্রিনের ক্ষরণ বাড়ায়। উত্তজনায় কারও কারও শরীর অত্যন্ত গরম হয়ে যায়। তখন তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় এক্রিন শরীরের অভ্যন্তরে তরল জলীয় পদার্থ নিঃসরণ করে। সেটাই তখন হাত-পায়ের তালু দিয়ে বার হয়। তা শরীরের তাপমাত্রা শুষে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। তাই অল্পস্বল্প হাত-পা ঘামা নিয়ে মাথা ঘামাতেই রাজি নন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: আসছে শীত, কী করলে রোগ এড়াবেন?
তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এটি বাড়াবাড়ি রকমের হতে থাকে। সারা ক্ষণ হাত ভিজে থাকে, এমনকি, তেমন কোনও উত্তেজনার পরিবেশে না থাকলেও হাত-পা ঘামতে থাকে। ‘‘এমন হলে তা অবশ্যই অসুখ, চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম হাইপার হাইড্রোসিস। সেই রোগের শিকার হলে কিছু ওষুধের দরকার বইকি। তবে তাও এমন কিছু ভয়াল অসুখ কখনওই নয়। হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে এই অসুখ সহজেই রুখে দেওয়া যায়।’’— জানালেন সুবর্ণবাবু।
সুতরাং, উত্তেজনায় অল্পস্বল্প হাত-পায়ের ঘামা নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কোনও কারণই নেই। অসুখের ভয় কাটিয়ে বাঁচুন নিশ্চিন্তে।