কলকাতা শহরে অনেক জায়গাই এমন রয়েছে যেখানে ব্যাখ্যার অতীত বিভিন্ন ঘটনা আজও ঘটে। ছবি: প্রতীকী।
ভূত দেখেছেন কখনও? অনেকেই বলবেন না! ভূতে বিশ্বাস করেন? অনেকেই বলবেন একেবারেই না! কিন্তু ভূতে ভয় পান কি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই কিন্তু চট করে না বলতে পারবেন না। বলতে হয়েতো আমাদের অস্বস্তি হয়, অনেকেই সঙ্কোচ বোধ করেন বটে, কিন্তু ভূতের ভয়ে আমরা অনেকেই কাবু!
মনোবিদরা বলেন, যাঁরা বেশি ভূতের ভয় পান, তাঁদেরই কিন্তু ভূত সম্পর্কে কৌতূহল বেশি! তাঁদের মধ্যেই ভূতের গল্প পড়া, ভূতের সিনেমা দেখা, ভূতের অন্বেষণে ঘুরঘুর করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ভূত আছে না কি নেই, এই তর্ক কিন্তু চলে আসছে সেই আদ্যিকাল থেকেই। কলকাতা শহরে অনেক জায়গাই এমন রয়েছে, যেখানে ব্যাখ্যার অতীত বিভিন্ন ঘটনা আজও ঘটে। শহরে এমন হানাবাড়ির সংখ্যা অজস্র! ন্যাশনাল লাইব্রেরি, রাইটার্স বিল্ডিং, উত্তর কলকাতার পুতুলবাড়ি রয়েছে সেই তালিকায়। বাড়িগুলির নাম হয়েতো আপনিও শুনেছেন, তবে শহর কলকাতার নামকরা ভূতদের চেনেন কি?
ওয়ারেন হেস্টিংস
বিখ্যাত গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের আলিপুরের আবাস আজ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কথিত আছে এখানে স্বয়ং হেস্টিংসেরই পদধ্বনি শোনা যায়। তিনি নাকি কিছু কাগজপত্রের সন্ধানে বার বার এখানে ফিরে আসেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্দেশে বন্দি হওয়ার পর এই কাগজপত্রগুলিতেই নাকি তাঁর বেকসুর হওয়ার প্রমাণ ছিল। প্রায় এক শতাব্দী আগে নাকি এখানে ফুটবল খেলতে গিয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয় এখানে, সে-ও এই জায়গায় মায়া কাটাতে পারেনি বলে অনেকের বিশ্বাস।
নিস্তার রাউত
নিস্তার রাউত ছিলেন এক জন যৌনকর্মী। যিনি শালিখরাম নামে এক জন ব্যবসায়ীর প্রেমে পড়েছিলেন। তিনি এই কাজের কলঙ্ক থেকে দূরে সরে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন। যৌনকর্মীদের খাতা থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু সেই আর্জি অস্বীকার করা হয়েছিল। কয়েক দিন পর পুলিশ নিস্তারের মৃতদেহ পায়। তাঁর শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল। নগ্ন শরীর কাপড়ের চিহ্নটুকু নেই, পায়ে ছিল কেবল নূপুর। কলকাতা হাইকোর্টের দীর্ঘ অন্ধকার বারান্দায় এখনও নাকি শোনা যায় তাঁর নূপুরের ছনছন শব্দ।
কলকাতা হাইকোর্টের দীর্ঘ অন্ধকার বারান্দায় এখনও নাকি শোনা যায় তাঁর নূপুরের ছনছন শব্দ। ছবি: শাটারস্টক।
কর্নেল সিম্পসন
কলকাতার হানাবাড়ির তালিকায় রাইটার্স বিল্ডিংয়ের নামও পাওয়া যায়। কর্নেল সিম্পসন, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে বিনয়-বাদল-দীনেশের গুলিতে নিহত হন, তাঁর দেখা নাকি সেখানে দেখা মিলেছে একাধিক বার। সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা অনেকেই বলেন, এখানে গভীর রাত্রে এখনও ফিসফিস করার শব্দ, বুট জুতোর আওয়াজ, বক্তৃতার শব্দ শোনা যায়।
রেস কোর্সের সাদা ঘোড়া
কথিত আছে, যে শনিবার পূর্ণিমা পড়ে, সেই রাতে একটি সাদা ঘোড়ার ভূতকে নাকি কলকাতা রেস কোর্স জুড়ে ছুটতে দেখা যায়। প্রাইড নামে ঘোড়াটি আদতে ছিল এক ব্রিটিশ সাহেবের। ব্রিটিশ আমলে নাকি ‘উইলিয়াম সাহেবের সাদা ঘোড়া’-র বেশ পরিচিতিও ছিল। প্রাইড যখন রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবে ডার্বিতে হেরে যায়, তখন উইলিয়ামস নাকি রাগের মাথায় তাঁকে খুন করেন। সেই ঘোড়ারই দেখা মেলে রেস কোর্সের মাঠে।