হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার কি কমবে? ফাইল চিত্র
অনলাইনে কিছু কিনছেন? তার তথ্য আপনার থেকে জানতে চায় হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক। ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেন? কী খেলেন, কেন খেলেন তাও জেনে রাখতে চাইছে এই মেসেজিং অ্যাপ। শুধু তাই নয়, আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা, ফোনের কনট্যাক্টে কারা কারা আছেন, এমনকী ফোন ক্র্যাশ করলে, তার কারণগুলো পর্যন্ত জেনে রাখতে চায় হোয়াটসঅ্যাপ। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লাগু হওয়া নতুন নীতি অনুযায়ী, এ সবই জেনে নেবে এই অ্যাপটি। চলতি মাসে সেই অধিকার চেয়েই তারা আপডেট করেছে তাদের পলিসি। এবং ব্যবহারকারীরা তার সঙ্গে একমত হতে বাধ্য। না হলে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাঁরা আর ব্যবহার করতে পারবেন না এই অ্যাপ।
আগামী দিনে যার হাতে যত বেশি তথ্য বা ডেটা রয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তত বেশি। এমন কথা গত এক দশক ধরে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। আর এই কথাটা অক্ষরে অক্ষরে ধরে নিয়ে উপভোক্তাদের হাঁড়ির সব খবর জানার অধিকার চাইছে হোয়াটসঅ্যাপ। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর সেখান থেকেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এ বার কী তবে হোয়াটসঅ্যাপকে ত্যাগ করার সময় এসেছে?
শুধুমাত্র সাধারণ মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে নয়, হোয়াটসঅ্যাপ এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে মিশে গিয়েছে। সকালে ‘সুপ্রভাত’ লেখা মেসেজ থেকে প্রয়োজনীয় খবরের লিংকের আদানপ্রদান, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ‘জোকস’ পাঠানো। হোয়াটসঅ্যাপকে পরিত্যাগ করলে, তার প্রতিযোগী অ্যাপগুলো কতটা পারবে একই রকম ভাবে এই পরিষেবা দিতে? দক্ষিণ কলকাতাবাসী সুপ্রিয়া মল্লিকের ছেলে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করেন। ছেলের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা বলেন সুপ্রিয়া। মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়ো কল। ‘‘অনেক দিন ধরেই ছেলে বিদেশে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপ থাকায় ভিডিয়ো কল করে নিতে খুব সুবিধা হয়। আগে কম্পিউটার চালিয়ে ভিডিয়ো কল করতে হিমসিম খেতাম। এখন কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে’’, বলছেন তিনি।
হোয়াটস্যাপের মতোই একই ধরনের সুবিধা দেয় সিগন্যাল অ্যাপটিও। মেসেজিংয়ের পাশাপাশি অডিয়ো বা ভিডিয়ো কল করা যায় তাতেও। হালে এলন মাস্ক ‘সিগন্যাল ব্যবহার করুন’ বলে টুইট করার পর এই অ্যাপের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। কিন্তু সিগন্যাল কি পারছে হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প হয়ে উঠতে? অনেক দিন ধরেই সিগন্যাল ব্যবহার করছেন সাত্যকি বসু। কর্মসূত্রে সাত্যকির সঙ্গে বেশ কিছু মানবাধিকার কর্মীর যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর মতে, ‘‘সিগন্যাল খুব নিরাপদ বলে মনে করেন, বহু মানুষই। বিশেষ করে যাঁরা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এতে তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা তুলনায় অনেক কম বলেই মনে করেন সবাই। কারণ ফোন নম্বরটুকু বাদ দিয়ে আর কিছু চাওয়া হয় না। সারা পৃথিবীর মানবাধিকার কর্মীরাই এখন সিগন্যাল ব্যবহার করেন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে।’’ কিন্তু সিগন্যালের একটা বড় সমস্যা, ফোনের ব্যাটারির ব্যবহার। ‘‘খুব তাড়াতাড়ি চার্জ ফুরিয়ে যায়। আর ফোনও গরম হয়ে যায়। আগামী দিনে এই সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারলে সিগন্যাল হয়ে উঠতেই পারে হোয়াটসঅ্যাপের কড়া প্রতিদ্বন্দ্বী’’, বললেন সাত্যকি।
হালে হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিযোগী হিসেবে অ্যাপের বাজারে উঠে এসেছে আরও একটি নাম। টেলিগ্রাম। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা বলছেন, এর মস্ত সুবিধা এত বিরাট বড় ফাইলও খুব সহজেই অন্যকে পাঠানো যায়। ‘‘টেলিগ্রামের মাধ্যমে আমরা বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে সিনেমা বা গান খুব সহজেই শেয়ার করি’’, বলছেন কলেজ পড়ুয়া অর্পিতা মজুমদার। তবে টেলিগ্রামের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, এই বড় ফাইল পাঠানোর সুযোগ নিয়ে নাকি বহু অসাধু মানুষ সিনেমা বা গান বেআইনি ভাবে খোলা বাজারে নিয়ে চলে আসছে। যে কেউ ইচ্ছে মতো, সেখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারছেন এই সব গান বা সিনেমা। কিন্তু হোয়াটস্যাপকে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে এই অ্যাপ? তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী গৌরব পালিতের প্রেমিকা বর্তমানে বিদেশে থাকেন। গৌরবের কথায়, ‘‘লং-ডিসটেন্স সম্পর্কে দু’জনের সময় খাপ খাওয়ানোটা খুব দরকারি। আমি চাই, আমার প্রেমিকা ঘুম থেকে ওঠার মুহূর্তে আমার একটা ভাল মেসেজ পাক। কিন্তু ও যখন ঘুম থেকে উঠছে, তখন আমি অফিসে। টেলিগ্রাম এই সুবিধা দেয়। চাইলেই নির্দিষ্ট সময়ে মেসেজটা যাতে ডেলিভারি হয়, আগে থেকে তার ব্যবস্থা করে রাখা যায়।’’
এরপরেও অ্যাপের বাজারে হোয়াটসঅ্যাপের একচেটিয়া ব্যবসা সহজে বন্ধ হওয়ার নয়। কিন্তু যে ভাবে ব্যবহারকারীদের থেকে এই মেসেজিং অ্যাপের তথ্যের চাহিদা বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে এটি একচেটিয়া ব্যবসা কত দিন টিকিয়ে রাখতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছেই। আইফোন ব্যবহারকারীদের নিজস্ব ইন্টারনেট মেসেজিং আইমেসেজ-ও এর মাঝে বদলে ফেলেছে নিজেদের প্রাইভেসি পলিসি। শিথিলতা আনা হয়েছে নিয়মে। অ্যাপের বাজার তাই হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা হ্রাসের পূর্বাভাস দেখছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: বার্ড ফ্লুর ভয়ে ডিম বা চিকেন খাওয়া বন্ধ নয়
আরও পড়ুন: ঘুমিয়ে ওজন কমানোর থেরাপি! জেনে নিন এর বিপদ