খোঁজখবর: তেঘরিয়ার একটি বাইকের শো-রুমে ক্রেতারা। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এত দিন অফিস যেতে নিজের গাড়ি কেনার প্রয়োজন মনে করেননি অনেকেই। কিন্তু করোনা আতঙ্ক এ বার তাঁদের সেই পথে হাঁটতে বাধ্য করছে। সরকারি ঘোষণা মতো দু’মাস বন্ধ থাকার পরে এই মাস থেকেই খুলছে অফিস, অথচ কম গণপরিবহণ এবং করোনা-বিধিতে বাধা পাচ্ছে চলাফেরার স্বাভাবিক ছন্দ। তাই বাস-অটোয় যাতায়াতের থেকে নিজস্ব দু’চাকায় ভরসা করছেন শহরবাসীর একটি অংশ। ফলে ভিড় বাড়ছে দু’চাকার শোরুমে। কেউ কিনছেন, কেউ আবার কেনার আগে খোঁজ করছেন।
কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা বিশ্বদীপ কররায়, বেহালার অনামিকা বসুরা যেমন অনেক ভেবে স্কুটার কিনে ফেলেছেন। বিশ্বদীপবাবু বলেন, “যা বুঝলাম, এ বার থেকে করোনাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। বাসে দাঁড়িয়ে যেতে সরকার নিষেধ করলেও তা কতটা মানা হবে সন্দেহ আছে। ফলে ভিড় বাসে উঠতে আতঙ্ক লাগবে। অথচ কাজও করতেই হবে। নিজের স্কুটার থাকলে ভিড়ে গাদাগাদি করে যাওয়ার ভয় থাকবে না।” দু’চাকার খোঁজে ভিআইপি রোডের এক শোরুমের আসা অন্য যুবকের চিন্তা পথে নামা কম বাস নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন, “শুধু বসার আসনে যাত্রী তুললে অনেকেই বাসে উঠতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে অফিস সময়ে পৌঁছনো যাবে না। দীর্ঘদিন চলবে এই সমস্যা। কর্তৃপক্ষ আদৌ তা মানবেন?” একই মত, বেহালার অনামিকা বসুর। টালিগঞ্জের কৌশিক রায় বলেন, ‘‘শুধু কি অফিস! মেয়েকে স্কুলে দেওয়া-নেওয়া করি বাসেই। স্কুল খুললে ওকেও তো যেতে হবে। সব দিক ভেবে তাই স্কুটার কিনলাম।”
ভিআইপি রোডের তেঘরিয়ার কয়েকটি শোরুমে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটিতেই ক্রেতার ভিড়। এক বিক্রেতা জানালেন, অনুমতি মিলতেই দোকান খোলা হয়েছে। তার পর থেকেই ভিড় হচ্ছে দোকানে। মানুষ এখন প্রয়োজনের তাগিদে দু’চাকা কিনছেন। অথচ প্রতি বছর বর্ষার আগে দুচাকার গাড়ির চাহিদা কম থাকে।
আরও পড়ুন: টুথপিক ব্যবহার করতে হলেই বুঝতে হবে সমস্যা আছে, কেন জানেন?
বিভিন্ন গাড়ি সংস্থার ডিলারেরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই বাজারে ঝিমুনির কারণে বছর দেড়েক ধরে গাড়ির বিক্রি তলানিতে পৌঁছেছে। ব্যবসায় আরও ঘা দিয়েছে লকডাউন। প্রায় দু’মাস বন্ধ থাকায় ব্যবসা কার্যত লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছিল। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে শোরুম খোলার পরে এই চাহিদায় দুশ্চিন্তা কিছু হলেও কমছে। যদিও কলকাতা ও শহরতলির ডিলার শরদ গুপ্ত ও কুশল বাজোরিয়ার দাবি, “অনেকেই খোঁজ করছেন, কিন্তু অনেক কম লোক কিনছেন। ব্যবসার পরিভাষায় যাকে ‘কনভার্সন’ বলে।”
শরদ জানাচ্ছেন, গত বছর এই সময়ে দু’চাকার গাড়ি কিনতে যত লোক খোঁজ করতেন, এ বার শোরুম খোলার পর থেকে তার প্রায় ৬০-৭০% বেশি মানুষ খোঁজ নিচ্ছেন। কাজের তাগিদে ৬০-৮০ হাজার টাকার স্কুটার ও ৭০-৯০ হাজার টাকার মোটরবাইকের চাহিদা বেশি।
কুশল বলেন, “দু’চাকার তুলনায় কম হলেও চার চাকার বিক্রি একেবারে বন্ধ নেই। পুলিশ ও চিকিৎসকদের অনেকেই চার চাকার গাড়ি কিনছেন।” একটি গাড়ি সংস্থার কর্তা জানাচ্ছেন, মে-তে অনেক জায়গায় শোরুম খুলে যাওয়ায় বিক্রি শুরু হয়েছে। বিলাসিতা নয়, সচেতনতা থেকেই এখন নিজের গাড়িতে যাতায়াতের কথা ভাবছেন মানুষ।
আরও পড়ুন: করোনা তো বটেই, আরও নানা রোগ তাড়াতে তামাককে গুডবাই করুন আজই