আমেরিকার ৩১টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বার্ড ফ্লু। প্রতীকী ছবি।
গরুর দুধেও বার্ড ফ্লু ভাইরাস? গরু বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হয়েছে বলে আগে তেমন শোনা যায়নি। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে আমেরিকায়। সে দেশের ৩১টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বার্ড ফ্লু বা ‘অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা’ ভাইরাসের সংক্রামক এইচ৫এন১ প্রজাতি। মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ় কন্ট্রোলের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় বহু গৃহপালিত পশুর শরীরে পাওয়া গিয়েছে বার্ড ফ্লু ভাইরাস। এমনকি, আক্রান্ত পোষ্য কুকুর ও বিড়ালও। বন্য প্রাণীদের শরীরেও ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে সিডিসি সূত্রে দাবি।
খামারের পর খামার গৃহপালিত পশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বার্ড ফ্লু ভাইরাসে। মার্কিন সিডিসি-র দেওয়া তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২১টি পোষ্য বিড়াল আক্রান্ত বার্ড ফ্লু-তে। কুকুরের শরীরেও ছড়িয়েছে সংক্রমণ। পশু চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে ভিড় বেড়েই চলেছে। আক্রান্ত কুকুর ও বিড়ালের থুতু, লালা ও মলের নমুনা পরীক্ষা করে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের এইচ৫এন১ প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
কিছু দিন আগেই নিউ ইয়র্কের কয়েকটি খামারে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণের খবর শোনা গিয়েছিল। তবে হাঁস-মুরগির শরীরেই পাওয়া গিয়েছিল ভাইরাস। এ বার পশু খামারগুলিতে গরুদের শরীরেও বার্ড ফ্লু ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। গরুর দুধেও পাওয়া গিয়েছে ভাইরাস। সংক্রমিত হাঁস, মুরগিদের থেকেই খামারের বাকি পশুদের শরীরে ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া, পরিযায়ী পাখিরাও ভাইরাস বয়ে আনছে। খামারে পশুদের জন্য রাখা খাবার ও জলে খাচ্ছে তারাও। আর তাদের সংস্পর্শ থেকেই খামারের বাকি পশু ও পাখিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস।
বার্ড ফ্লু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। প্রচণ্ড ছোঁয়াচে। আর এইচ৫এন১ নামে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের যে প্রজাতি ছড়িয়েছে, তা এখন পাখিদের থেকে স্তন্যপায়ীদের শরীরেও বাসা বাঁধছে। মানুষ সংক্রমিত হয়েছে আগেই। এ বার খামারের গৃহপালিত পশু ও বন্য প্রাণীদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের গবেষক ক্রিস্টেন কোলম্যান জানিয়েছেন, শুধু কুকুর, বিড়াল বা গরু নয়, ইঁদুর, শিয়াল, পাহাড়ি সিংহের শরীরেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। কোলম্যানের দাবি, বিড়ালের শরীরে খুব তাড়াতাড়ি বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়াতে পারে। এইচ৫এন১ ভাইরাস বিড়ালের শরীরে ঢুকলে দ্রুত বিভাজিত হয়ে সংখ্যায় বাড়ে। সেই বিড়ালের সংস্পর্শ, তার লোম, থুতু, লালা থেকে মানুষের শরীরেও ছড়াতে পারে ভাইরাস।
বার্ড ফ্লু আক্রান্ত বিড়ালের শরীরে বেশ কিছু রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। সিডিসি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, বার্ড ফ্লু আক্রান্ত বিড়ালের লোম উঠে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। ফুসফুসের সংক্রমণ ধরা পড়ছে। নিউমোনিয়ার লক্ষণও দেখা গিয়েছে অনেক পোষ্য বিড়ালের মধ্যে। পাশাপাশি, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাদের। নাক-মুখ দিয়ে জল পড়ছে, খিদে কমে যাচ্ছে।
করোনার আতঙ্ক ভোলার নয়। তার উপরে বার্ড ফ্লু ভাইরাস যে ভাবে ছড়াচ্ছে তাতে চিন্তা বেড়েছে আমেরিকার স্বাস্থ্য দফতরের। পোষা প্রাণীদের থেকে মানুষের শরীরে যদি দ্রুত হারে ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে, তা হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।