Pregnancy

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় করোনায় সংক্রমিত হওয়া কি অতিরিক্ত ভয়ের? কী বক্তব্য চিকিৎসকেদের

করোনায় সংক্রমিত হওয়ার কারণে কে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তা নির্ভর করছে সেই মানুষটির বাদবাকি শারীরিক অবস্থার উপরেই।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৩৪
Share:

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় অন্তঃসত্ত্বারা কি বেশি আশঙ্কায়? ফাইল চিত্র

করোনার সময়ে অন্তঃসত্ত্বারা কি বেশি আশঙ্কায়? এমন প্রশ্ন ঘুরছে নানা প্রান্তেই। গত বারের তুলনায় এ দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি হবু মাকে আক্রমণও করেছে। তাঁরা সকলেই কি অন্য রোগীদের চেয়ে বেশি সঙ্কটে? নাকি সমস্যা দেখা দিচ্ছে ব্যক্তি বিশেষেই? এমন উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে বহু অন্তঃসত্ত্বার পরিবারেই। শুধু এ দেশ নয়, এই উদ্বেগ কাজ করছে গোটা দুনিয়ায়।

Advertisement

তবে চিকিৎসকেদের মত, আলাদা করে অতিরিক্ত ভয় নেই অন্তঃসত্ত্বাদের। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার কারণে কে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তা নির্ভর করছে সেই মানুষটির বাদবাকি শারীরিক অবস্থার উপরেই। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় যেমন জানাচ্ছেন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর রোগীদের নিয়েই কিছু কিছু ভয় কাজ করছে। যেমন অনেকেই বলছেন প্রবীণদের মধ্যে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবিটিসের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের সঙ্কট বেশি। চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘এ কথা যেমন ঠিক যে কো-মর্বিডিটি থাকলে বেশি অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমন যে রোগীরা যদি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান তাঁদের কিছু সুবিধা রয়েছে। সেই ওষুধ অনেকটা সাহায্যও করছে পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে।’’ অন্তঃসত্ত্বাদের পরিস্থিতিও তেমন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা এ সময়ে কমে ঠিকই। কারণ, একটি শরীরের মধ্যে আরও একটি প্রাণ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যবস্থাও করে শরীর। চিকিৎসকের বক্তব্য, এই সময়ে শরীরে কিছু জিনিস বেশি থাকে। যেমন সাইটোকাইন এবং ইন্টারলিউকিনের মতো দ্রব্য। বাইরের কোনও জীবাণুর আক্রমণ ঘটলে, শরীরকে তার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। ফলে তাঁর বক্তব্য, ‘‘একদিকে যেমন এই সময়ে হবু মায়ের শরীর কিছুটা নরম থাকে, তেমন জীবাণুর সঙ্গে লড়াইয়ের পরিস্থিতিও তৈরি থাকে।’’

আর এক স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সুদর্শন ঘোষদস্তিদারও এ বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দেশেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে এমন কোথাও প্রমাণিত হয়নি যে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় করোনা হলেই রোগী অতিরিক্ত সমস্যায় পড়বেন।’’ তবে তাঁর মত, এই সময়ে বহু মেয়ের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আর দুর্বলকে সমস্যায় বেশি ফেলে এই ভাইরাস। তা সামলানোর উপায় অবশ্য রয়েছে যথেষ্ট। তার পরামর্শ, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যদি কারও করোনা হয়, তবে বাড়িতেই যত্ন নিতে হবে। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়া এবং বারবার জল খাওয়া জরুরি। যতক্ষণ না শ্বাসের কোনও অসুবিধা হচ্ছে, ততক্ষণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’’ অর্থাৎ, অন্যান্য রোগীর মতোই চিকিৎসা চলবে অন্তঃসত্ত্বার।

Advertisement

গর্ভাবস্থায় মায়ের থেকে সংক্রমিত হতে পারে কি সন্তান?

সংক্রমিত হবেই এমন নয়। বরং গর্ভাবস্থায় সংক্রমিত হওয়ার অশঙ্কা কম। তবে সন্তানের জন্মের পরেও মায়ের শরীরে যদি ভাইরাস থাকে, তবে আর পাঁচ জনের মতো শিশুরও সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকে। সুদর্শনবাবু জানালেন, এমন কয়েকটি ঘটনা দেখা গিয়েছে ঠিকই, তবে তাতে শিশুর শরীরে সংক্রমণ খুব হাল্কাই হয়েছে। মল্লিনাথবাবুর বক্তব্য, এ সময়টায় যত্ন নিয়ে কাজ করতে হবে। স্তন্যপান বন্ধ করার কোনও প্রয়োজন নেই। তার থেকে ভাইরাস আদানপ্রদান হবে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ, সন্তানের জন্মের পরে সংক্রমিত মায়ের স্তন্যপান করানো উচিত মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস পরে। তবে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে শিশু।

ক্ষতি করতে পারে কি টিকা?

চিকিৎসকেরা সাফ জানাচ্ছেন, কোনও ভাবেই টিকা নেওয়া যাবে না অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। তার থেকে অতিরিক্ত ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি, টিকা নেওয়ার ছ’মাসের মধ্যেও গর্ভধারণের পরিকল্পনা করা ঠিক নয় বলেই জানালেন মল্লিনাথবাবু।

তবে সাবধান হওয়াই ভাল

বুঝেশুনে মাতৃত্বের পথে পা বাড়ানোই ভাল। গত এক বছরে যে সন্তানধারণের হার খানিকটা বেড়েছে, তা সকলেই জানেন। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে সর্বত্র। করোনায় সংক্রমিত অন্তঃসত্ত্বার যেমন অতিরিক্ত ভয়ের কারণ নেই, তবে এই সময়টা সন্তানের জন্মের জন্য খুব সুবিধাজনক নয় বলেই মনে করাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, সন্তানের জন্মকে কেন্দ্র করে বহু বার হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হয়। সে সব জায়গা থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। অন্তঃসত্ত্বাদের সে কথা মাথায় রাখতে বলছেন চিকিৎসকেরা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement