Coronavirus

র‌্যাপিড টেস্ট বন্ধ হওয়ায় কোন কোন বিকল্প পরীক্ষা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতিয়ার?

বিদেশে দ্রুত হারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির অপ্রতুলতা ও ফলস নেগেটিভ রেজাল্টকে দায়ী করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২০ ১৮:১৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

দিনের পর দিন আমরা গৃহবন্দি। তাও প্রতি দিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের দেশেও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাড়িতে আটকে থাকার পাশাপাশি টেস্টের সংখ্যা বাড়ালে তবেই এই আক্রান্তের সংখ্যায় রাশ টানা যাবে। টেস্ট করার পর রোগীকে শনাক্ত করে তাঁকে আলাদা রেখে যথাযথ চিকিৎসা করলে রোগ ছড়িয়ে পড়তেও পারবে না। উপসর্গ না থাকলেও অনেক মানুষের শরীরেই করোনাভাইরাস আছে। এই উপসর্গবিহীন রোগীদেরও তাই চিহ্নিত করা দরকার। আর তাই প্রয়োজন পরীক্ষার।

Advertisement

কী কী পরীক্ষা প্রচলিত?

শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস আছে কি না তা জানতে দু’রকম ভাবে পরীক্ষা করা হয়। একটি আরটি-পিসিআর, অর্থাৎ রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন। অন্যটি র‍্যাপিড টেস্ট।আইসিএমআর চিনের কিট বাতিল করে দেওয়ায় র‍্যাপিড টেস্ট আপাতত বন্ধ আছে। যথাযথ কিট পাওয়া গেলে আবার তা শুরু হবে। র‍্যাপিড টেস্ট পদ্ধতিতে শরীর থেকে (মূলত আঙুলের ডগা থেকে) এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে সেই নমুনা পরীক্ষা করে তাতে অ্যান্টিবডি আছে কি না দেখা হয়।

Advertisement

আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে মুখের ভিতর বা নাকের মধ্যে থেকে লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।আরটি-পিসিআর পদ্ধতির সাহায্যে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসের আরএনএ চিহ্নিত করা হয়, জানালেন মোহালির ইসার (আইআইএসইআর)-এর হিউম্যান প্যাথোজেনিক ভাইরাসের সংক্রমণজনিত অসুখের গবেষক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গবেষণাগার-ভিত্তিক এই পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ। সেই কারণেই র‍্যাপিড টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন: রক্ত পাতলা রাখার ওষুধেই কি করোনাকে হারানো সম্ভব?​

পিসিআর-এর আর একটি বিকল্প পরীক্ষা ‘ট্রুন্যাট’। এই পদ্ধতিতে খুব দ্রুত অনেকের নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল জেনে নেওয়া সম্ভব।বক্ষ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের মতে, “পরীক্ষার পদ্ধতিটা এক হলেও পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্র আলাদা। ল্যাবে যে ধরনের যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে পরীক্ষা হয়, সেগুলোবহনযোগ্য নয়। অর্থাৎএক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার নানা অসুবিধা আছে।পিসিআর-এর বেলায় সকলের লালারস গবেষণাগারে নিয়ে গিয়েই পরীক্ষা করাতে হবে। ওই যন্ত্রে ফলপেতেও একটু বেশি সময় লাগবে। কিন্তু ট্রুন্যাটে ব্যবহার করা হয় যক্ষ্মা পরীক্ষার যন্ত্র। তা দেশের সব গ্রামীণ হাসপাতালেও রয়েছে।যন্ত্রটি বহনযোগ্য। যে কোনও এলাকায় নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করানো যায। ফলও মেলে ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যে।

আবার সংক্রমণ খুব কম এমন কিছু এলাকায় পুল টেস্ট করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে ২ থেকে ৫ জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।সমস্ত নমুনা একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এর পর পরীক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে বুঝতে হবে, পরীক্ষারত কারও শরীরে ভাইরাস নেই। কিন্তু রিপোর্ট পজিটিভ হলে ধরে নিতে হবে ওই পুলের মধ্যে এক বা একাধিক জন কোভিড আক্রান্ত। সে ক্ষেত্রে ওই পুলে যে ক’জনের নমুনা মেশানো হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেকের আবার আলাদা করে পিসিআর পরীক্ষা করা হবে।

পরীক্ষার সমস্যা

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, দু’টি পরীক্ষা পদ্ধতিরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে।করোনাভাইরাসের অতিমারির সময় গবেষণাগারে ব্যাপক হারে লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা সহজ নয়। পরিকাঠামোগত সমস্যাও আছে। তাই র‍্যাপিড টেস্ট করানোর কথা ভাবা হয়েছিল। র‍্যাপিড টেস্টই জানান দেবে সন্দেহজনক মানুষটির শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডির উপস্থিতি। তবে এখানেও কিছু অসুবিধা আছে।আক্রান্তের শরীরে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে সংক্রমণের পর ৮–১০ দিন সময় লেগে যায়। তাই এই টেস্টের ফল সব সময় ঠিক না-ও হতে পারে। ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট পেলে অসুখ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ে।

আবার অন্য কোনও অসুখের জন্য তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকেও এই টেস্ট চিহ্নিত করে। ফলে মাস কয়েক আগে অন্য কোনও অসুখের সঙ্গে লড়ার জন্য তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকেও সে করোনার জন্য তৈরি হওয়া বলে ভুল করতে পারে।

আরও পড়ুন: ৪২তম দিন: আজকের যোগাভ্যাস​

রিপোর্ট ভুলে বিপদ বাড়ে

বিদেশে দ্রুত হারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির অপ্রতুলতা ও ফলস নেগেটিভ রেজাল্টকে দায়ী করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিক ফাউন্ডেশন, মেয়ো ক্লিনিক এবং দক্ষিণ চিনের সেনঝেনে থার্ড পিপলস হসপিটালের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, আরটিপিসিআর টেস্ট করে কোভিড-১৯ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও অনেক সময় ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। আর এই নেগেটিভ রিপোর্টের কারণেই ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং না মেনে হু হু করে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

তা হলে উপায়?

সংক্রমণজনিত অসুখের গবেষক ইন্দ্রনীলবাবুর মতে, এই অসুবিধে এড়াতে প্রয়োজন একাধিকবার পরীক্ষা করানো। র‍্যাপিড টেস্ট করার পর সন্দেহ হলে পিসিআর পদ্ধতিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট করলে সঠিক ফল জানা যায়।আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা এমনিতেই অপ্রতুল, তাই অঞ্চলভিত্তিক কমপক্ষে ২৫ শতাংশ মানুষের টেস্ট করানো উচিত। এখন কিটের কারণে র‌্যাপিড টেস্ট বন্ধ রয়েছে। তাই পুল টেস্ট ও ট্রুন্যাট পদ্ধতিতেটেস্ট করাতে হবে।একইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং মুখে মাস্ক পরে থাকা বাধ্যতামূলক হলে অসুখের বিস্তার কিছুটা আটকানো যাবে। লকডাউন উঠে গেলেও প্রতিষেধক না নেওয়া পর্যন্ত এইসব নিয়ম মেনে চলতে হবে।

তথ্য: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনীষা মুখোপাধ্যায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement