fabi flu

করোনা-সংক্রমণকে কমিয়ে ফেলার ওষুধ কি তবে এসে গেল? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

এই নতুন ওষুধে কি করোনা-সংক্রমণ রুখে দেওযা যাবে, এখন এই উত্তরই খুঁজছে চিকিৎসকমহল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২০ ১৫:২৪
Share:

ফ্যাবিপিরাভির গ্রুপের এই ওষুধ নিয়েই চলছে জল্পনা। ফাইল চিত্র।

মুম্বইয়ের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসের হাত ধরে বাজারজাত হচ্ছে করোনা চিকিৎসার ওষুধ ফ্যাবি-ফ্লু। ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-এর কাছ থেকে সম্প্রতি ওষুধ তৈরি ও বিক্রির ছাড়পত্রও পেয়েছে তারা। সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গের করোনা রোগীদের জন্যই এই ওষুধ ব্যবহৃত হবে। ডিসিজিআই-এর দাবি অনুযায়ী, এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধটির কার্যকারিতা ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত প্রমাণিতও হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু আদতে কোভিডে এই ওষুধ সত্যিই এতটা কার্যকর? কো-মর্বিডিটির রোগীদের বেলাতেও এই ওষুধ দারুণ কার্যকর বলে দাবি করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারি সংস্থা গ্লেনমার্ক। তা হলে কি চিন্তার দিন শেষ? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ও গবেষক তন্ময় বিশ্বাস অবশ্য এখনই এতটা নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করেন। তাঁর মতে, “যে কোনও একটি ড্রাগের চার দফা ট্রায়াল চলে। ফ্যাবি-ফ্লু-র বেলায় মাত্র তিন দফা ট্রায়াল শেষ হয়েছে। পোস্ট মার্কেটিং ট্রায়াল বা বাজারীকরণের পরের ধাপ এখনও বাকি। এর আগে বহু ড্রাগই তিন দফায় ভাল কাজ করেছে কিন্তু বাজারীকরণের পর আবার নিষিদ্ধও হয়ে গিয়েছে। তবে এই ফ্যাবি ফ্লু-এর তিন দফা ট্রায়ালের ফল তুলনামূলক ভাবে ভাল। এই গ্রুপের ড্রাগ ফ্লুয়ের মাহামারির সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। তাতে ভাল কাজও দিয়েছিল। এই ওষুধটিও ভাইরাসের আরএনএ-কে প্রতিরূপ তৈরিতে বাধা দেয়। সুতরাং ফ্লু ভাইরাসকে দমন করার সব গুণই এতে রয়েছে। তবে ওষুধ বাজারজাত হওয়ার পরে বোঝা যাবে এটি আদৌ কতটা ফলদায়ক।”

Advertisement

আরও পড়ুন: ত্রিশের ‘ক্রনিক মর্বিডিটি’ জটিল হচ্ছে করোনায়

তন্ময়বাবুর সঙ্গে সহমত আলিপরদুয়ার জেলায় উপ স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। তাঁর মতে, এই ওষুধ নিয়ে যতটা হুড়োহুড়ি এখনই হচ্ছে ততটা নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো কিছুই হয়নি। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি জানালেন, “এই ধরনের নানা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নিয়েই করোনার চিকিৎসা করে দেখা হবে নানা সময়ে। তিনটি ট্রায়ালে ৮৮ লশতাংশ কাজ করেছে মানেই যে ওষুধ হাতে এসে গেল এমনটা ভাবা অবান্তর। বরং পোস্ট মার্কেটিং ট্রায়ালই আসল। বাজারীকরণের পর এই ওষুধ সারা পৃথিবীতে সমান কার্যকর কি না, আবহাওয়া ভেদে এর কার্যকারিতায় বদল ঘটে কি না, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন এমন অনেক কিছু বিষয় দেখার আছে। এই ওষুধ খাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতিও আছে। উপসর্গ এল আর ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে ফেললাম এমনটা হলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।”

এই ওষুধের ডোজ কী?

প্রথম দিনে ১৮০০ মিলিগ্রাম দিনে দু’বার, তার পরে ১৪ দিন পর্যন্ত ৮০০ মিলিগ্রাম দিনে দু’বার— এই ভাবে ওষুধটি দিতে হবে। তবে চিকিৎসক প্রেশক্রিপশনে লিখলে তবেই এ ওষুধ দোকান থেকে মিলবে। ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ ওষুধ খাওয়ার বদভ্যাস রুখতেই এই ব্যবস্থা।

কেমন দাম?

গ্লেনমার্কের দাবি, আপাতত ২০০ মিলিগ্রামের একটি ‘ফ্যাবি-ফ্লু’ ট্যাবলেটের দাম পড়বে ১০৩ টাকা। এমন ৩৪টি ট্যাবলেটের একটি পাতার দাম হবে ৩৫০০ টাকা। বাজারীকরণের পর সাফল্য মিললে এই দাম কমানোর কথাও ভাবা হবে।

আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছেই, কোথায় সমস্যা?

ভায়ারোলজিস্ট সৌমাভ রায় যদিও মনে করছেন এখনই ফ্যাবি-ফ্লু নিয়ে নিশ্চিত না হয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়েই বেশি সচেতন হওযা প্রয়োজন। তাঁর মতে, “এই ভাইরাসের বয়স মাত্র ৬-৭মাস। এখনই একে কাবু করার মতো ট্যাবলেট বাজারে এসে গেল এমনটা হয় না। নানা ওষুধ নিয়েই গবেষণা চলছে। ফ্যাবি ফ্লু তার মধ্যে অন্যতম। এর পোস্ট মার্কেটিং ট্রায়ালের ফলই আসল। যে কোনও ড্রাগের পোস্ট মার্কেটিং ট্রায়াল প্রায় সারা জীবন ধরেই চলে। তবে অন্তত ৬মাস সময়কে তার গুণাগুণ বিচারের জন্য লাগে। ফলে এই ওষুধ নিয়ে এখনই চূড়ান্ত মত দেওযার সময় আসেনি।”

গ্লেনমার্কের এক কর্তা সুযেশ বাসুদেবনের অবশ্য দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে পদ্ধতিগত বিষয়গুলি দ্রুত মিটিয়েই ওষুধটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর আগে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধটির কার্যকারিতা প্রমাণিত। এখনও যে ডোজ় স্থির করা হয়েছে, তা নিরাপদ। আমরা ওষুধটি নিয়ে আশাবাদী।”

এই নতুন ওষুধে কি করোনা-সংক্রমণ রুখে দেওযা যাবে, এখন এই উত্তরই খুঁজছে চিকিৎসকমহল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement